মিনহাজের অভিযান

মিনহাজের অভিযান

উপন্যাস অক্টোবর ২০১৩

কাজী মুহাম্মদ সোলাইমান গত সংখ্যার পর রিশাদ বুঝতে পারছে না সবাই তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে কেন? তাকে নিয়ে সবাই বাজে মন্তব্য করছে কেন? সে গভীরভাবে চিন্তা করে যাচ্ছে, কিন্তু জবাব পাচ্ছে না। পাড়ার সব ছেলেরা তাকে দেখলে সটকে যায়। কেউ কেউ চিমটি কেটে বলে সক্রেটিস। কেউ কেউ বলে, মীর জাফর। সে অপারেশন হিডেন ট্রেজার কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন হলেও এখন সবার কাছে উটকো বোঝা। এতদিন সে বাড়িতে ছিল না। অথচ তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, যারা এই গুপ্তধনের জন্য মরিয়া হয়ে রাতদিন এক করে ফেলেছে, তাদের সহযোগী রূপে। ‘কী নাতি, আনমনা হয়ে যাচ্ছ কোথায়?’ মুফিজুর রহমানের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেল সে। ‘কোথাও না।’ সংক্ষেপে জবাব দিল রিশাদ। ‘মন ভালো নেই।’ ‘দাদু, এভাবে ঋণাত্মক কথা বলতে নেই। তোমাকে সকল সময় সব অবস্থায় বলতে হবে ধনাত্মক কথা। ধনাত্মক কথা বার্তার আলাদা একটা মাহাত্ম্য আছে। কেউ যদি সকল অবস্থায় বার বার ধনাত্মক কথা বলে, তবে তার চিন্তা চেতনাও ভাল থাকবে। তার মস্তিষ্কের কর্ম-কাঠামো বদলে যাবে। মানুষের নার্ভাস সিস্টেম বাস্তবতা ও কল্পনার মধ্যে কোন তফাত করতে পারে না। বাস্তব ঘটনা দেখলে যে ব্রেন ওয়েভ-সৃষ্টি হয়, সে রকম ঘটনা কল্পনা করলেও একই ব্রেন-ওয়েভ সৃষ্টি হয়। সে কারণে নাটক, সিনেমা, অভিনয় দেখেও হাসি আসে আর কান্নায় মন সাড়া দেয়। যদিও সবাই জানি, এটা নিছক অভিনয়। এই জন্য আমাদের নবী সর্বঅবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ, ভাল আছি বলতে বলেছেন। ধনাত্মক কথা মস্তিষ্কে ভাল থাকার বাণী পৌঁছে দিয়ে মনোবল চাঙ্গা রাখে।’ ‘সবাই মনে করে, আমি নাকি গুপ্তধন খোঁজার জন্য বিশ্বাসঘাতকতা করেছি।’ ‘তাতে ঘাবড়ানোর কী আছে? তুমি একটা ভুলকে ভুল বলছ, সবাই মনে করছে তা সঠিক। এতে তুমি কিছুদিন বিব্রত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারাই লজ্জিত হবে। যে নিজের বিশ্বাসে একা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, সে সবচে’ শক্তিমান মানুষ। তুমি এখন সে শক্তির প্রতীক।’ ‘কিন্তু আমি যে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি!’ ‘তাতে তোমার ভয় পাবার কী আছে? তুমি জয়লাভ করলে দেখবে, যারা তোমাকে ত্যাগ করেছে, তারাও তোমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেবার ক্ষমতা দিয়েই মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। তোমার অধ্যয়ন নিয়ে তুমি এগিয়ে যাও। শিক্ষার মধ্যে জীবনের গৌরব নিহিত, ধন সম্পদে নয়। ধন ও খ্যাতির পিছনে দৌড়াতে নেই। এগুলোর পিছনে দৌড়ালে পাওয়া যায় না।’ ‘দাদু তারা আমার সাথে এমন আচরণ করার পর হতে, আমার পড়ায় মন বসছে না।’ ‘কী বল!’ দাদু বিস্ময় প্রকাশ করে বলল। ‘ইস! কেউ কি নিজের পায়ে কুড়াল মারে? যে যায় বলুক, কান দিতে নেয়। তোমাদের এখন জ্ঞান অর্জনের কাল, ধন অন্বেষণের নয়। শুন একদিন দশজন লোক এসে হযরত আলীকে জিজ্ঞাসা করলো, জ্ঞান ও সম্পদের মধ্যে কোনটি ভাল, কেন ভাল? হযরত আলী তাদেরকে জবাবে দশটি উত্তর দিলেনÑ ১. জ্ঞান হল নবীর নীতি, সম্পদ ফেরআউনের উত্তরাধিকার। তাই জ্ঞান সম্পদের চেয়ে উত্তম। ২. সম্পদকে পাহারা দিতে হয়, জ্ঞান মানুষকে পাহারা দেয়। তাই জ্ঞান উত্তম। ৩. সম্পদশালী মানুষের অনেক শত্র“ থাকে, জ্ঞানীর অনেক বন্ধু থাকে। তাই জ্ঞান উত্তম। ৪. জ্ঞান উত্তম, কারণ তা বিতরণে বেড়ে যায়, আর সম্পদ বিতরণে কমে যায়। ৫. জ্ঞান চুরি করা যায় না, কিন্তু সম্পদ চুরি করা যায়। তাই জ্ঞান উত্তম। ৬. সময় জ্ঞানের কোন ক্ষতি করে না, কিন্তু সম্পদ সময়ের বিবর্তনে ক্ষয়ে যায়। তাই জ্ঞান উত্তম। ৭. জ্ঞান সীমাহীন কিন্তু সম্পদ সীমাবদ্ধ। তাই জ্ঞান উত্তম। ৮. জ্ঞান হৃদয় মনকে জ্যোতির্ময় করে, সম্পদ তাকে কলুষিত করে। তাই জ্ঞান উত্তম। ৯. জ্ঞান উত্তম, কারণ জ্ঞানী দানশীল হয়। অন্য দিকে সম্পদশালী ব্যক্তি কৃপণ হয়। ১০. জ্ঞান উত্তম, কারণ জ্ঞান মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ করে, অন্যদিকে সম্পদ ফেরআউন ও নমরুদকে বিপদগ্রস্থ করেছে। তারা তাদেরকে প্রভু দাবি করেছিল। রিশাদ তুমি...’ হঠাৎ কথা বন্ধ করল মফিজুর রহমান। বারবার দূরে কী যেন দেখছে আর রিশাদের প্রতি তাকাচ্ছে। দাদুর, এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে রিশাদ জোরে চিৎকার দিল, মা... মা.. দেখ!!! দাদু, ততক্ষণে পাগলের প্রলাপ শুরু করেছে, রিশাদ, রিশাদ, তুমি কী আসলে রিশাদ? দাদুর এমন পাগলামী দেখে রিশাদ বুদ্ধিহত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। দাদু বলে যাচ্ছে, ‘ঐ রিশাদ আর এ রিশাদের মধ্যে কে আসল?’ ছয়. আদনানরা একটা পবর্তের নিচে দাঁড়াল। আদনান বলল, এই পবর্তের চূড়ায় তাতুমের ঘর। বাড়িতে উঠার জন্য পাহাড় কেটে সিঁড়ি করা হয়েছে। উপরে বাঁশের ঘর। ধীরে ধীরে তারা উপরে উঠে গেল। তাতুমের সহকারী মালেক তাদেরকে স্বাগতম জানিয়ে আগমনের উদ্দেশ্য জানতে চাইল। সব জানার পর সে তাদেরকে ঘরের ভিতর নিয়ে গেল। ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে মিনহাজ, শাহীন, আশরাফ দেখল অন্য দরজা দিয়ে রিশাদ বেরিয়ে যাচ্ছে। দেখে মিনহাজ ডাক দিতে চাইলেও তার আগেই অদৃশ্য হয়ে গেল রিশাদ। তারা রিশাদকে ধরার জন্য বেরিয়ে আসবে এমন সময় তাতুম এসে তাদের সামনে হাজির। তাদের আর বের হওয়া হলো না। তাতুম মিনহাজের নাম ধরে ডাক দিলে চমকে উঠল সবাই। এ লোক কিভাবে জানল এ নাম? পরে ভাবল, রিশাদ নিশ্চয়ই তাদের নাম তাকে বলে দিয়েছে। তাতুম তাদেরকে অন্য একটি ঘরে নিয়ে গেল। মিনহাজ জানতে চাইল, ‘কিছুক্ষণ আগে যে লোকটা বেরিয়ে গেল, সে লোকটা কে?’ ‘কি পাগলের প্রলাপ বকছ? এখানে তো এতক্ষণ মালেক ছাড়া কেউ ছিল না।’ জবাব দিল তাতুম। ‘না আঙ্কেল, আমরা ঘরে ঢোকা মাত্র একজন লোক বেরিয়ে গেল।’ ‘মালেক, মালেক,’ ডাক দিল তাতুম। মালেক আসল। তাতুম জানতে চাইল, ‘এখানে কি কেউ এসেছিল?’ ‘না স্যার, এখানে এতক্ষণ একটা পোকাও ছিল না।’ ‘এখন বল তোমরা কেন এসেছ?’ তাতুম প্রশ্ন করল। মিনহাজ সব বলার পর তাতুম তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘শেষ পর্যন্ত তোমরা আসলে। তোমরা দারুণ বুদ্ধিমান।’ তারপর তাতুম একটি পুতুল বের করল। তাতে ফুঁক দিতেই তা জীবিত হয়ে উঠল। এটির চোখ খুব বড় বড়। চোখগুলোতে আয়নার টুকরো বসানো। এই আয়নাগুলোতে ভেসে উঠা প্রতিচ্ছবিতে স্বর্ণ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। তাতুম জানতে চাইল, ‘ঐ স্বর্ণগুলোর কী অবস্থা।’ পুতুলটি চিৎকার দিয়ে বলল, ‘কোটি টাকার ধন ওখানে।’ আরো জানালো, ‘যদিও এগুলো পেতে অনেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে, তবে পাওয়া সম্ভব নয়। এগুলো পেতে হলে অনেক ত্যাগের দরকার।’ তার এমন সত্য সংবাদে কে-না শিহরিত হয়? মিনহাজরাও শিহরিত হল। তারা বুঝতে পারল, তাতুমকে  দিয়েই একশ ভাগ কাজ আদায় যাবে। ‘জ্বীনদের কিভাবে খুশি করা যাবে?’ প্রশ্ন করল আদনান। ‘তোমরা তা পারবে কি না তাই নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। ওরা চায়, সোনার বদলে সোনা। তোমরা যদি সোনা দিয়ে তাদের সন্তুষ্ট করতে পার, তবে তারা ঐ সোনাগুলো নিতে তোমাদের বাঁধা দিবে না।’ মিনহাজ বলল, ‘আমি সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। কয়েকদিন পর আমরা আপনার সাথে আবার দেখা করব।’ ‘কয়েকদিন? কী বল? হায় যুবক, তুমি কাজের গুরুত্ব বুঝলে না। কোটি টাকার ধন এভাবে হারিয়ে ফেলার কোন মানে হয় না। একদিনের অর্থ তুমি বুঝ? একদিন মানেই বিশাল ব্যাপার। যে দিন তুমি কোন কাজ করলে না, ওটা নির্মম একটা দিন। ও দিনটা খুব মর্যাদাহীন তুচ্ছ একটা দিন। এটা শুধু তোমার জন্য গুরুত্বহীন নয়, এর মাধ্যমে তুমি পুরো জাতির ক্ষতি করলে।’ গুপ্তধন উদ্ধারের ব্যাপারে তাতুমের সাথে আরো অনেক কথা-বার্তা শলা পরামর্শ করে ফিরে আসছিল তারা। সূর্যের আলো নিস্তেজ হয়ে আসছে। আদনান তাদেরকে দ্রুত পা চালিয়ে এগিয়ে যেতে বলল। না হলে ভয়ঙ্কর পাহাড়ী বিপদ তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। ঝর্ণার কাছে পৌঁছে আবার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে পড়ল শাহীন। সে কিছুক্ষণ এখানে বিশ্রাম নিয়ে তারপর যাবে। আদনানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাচ্ছে। ভয়ে ডুবন্ত সূর্যের সাথে প্রতিযোগিতা করে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। রাত নেমে যাচ্ছে। অথচ শাহীন সৌন্দর্য উপভোগ করতে মত্ত। আদনানের চোখ গেল ঝোপের দিকে। কী যেন দাঁড়িয়ে আছে! দেখে চমকে উঠলো তারা। এই তো রিশাদ। ‘রিশাদ তুই এখানে?’ মিনহাজ জানতে চাইল। রিশাদ কোন কথা বলল না। কেমন যেন অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর মুখ খুলল রিশাদ, ‘তোরা এখানে কেন? তোরাতো আমাকে গাড়িতে বলেছিলি, নীলগীরি দেখতে যাচ্ছিস।’ শাহীন বলল, ‘তুই এখানে কেন তাই বল? তোকে না তাতুমের ঘরে দেখেছিলাম। আবার এখানে?’ আমার মামাত ভাই জঙ্গলে গেছে একটু কাজে। তাকে অনেক করে বুঝিয়েছি কিন্তু সে সব মানবে না, কী আর করা? এখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। হয়ত এতক্ষণে চলে আসছে সে।’ তারা দেখতে পেল ঝোপের মধ্য হতে কে একজন বেরিয়ে আসছে। লোকটি কাছে আসার পর মিনহাজ সবাইকে বলল, ‘চল।’ সবাই হাঁটতে শুরু করল। সাত. উল্লুক ভিটা একটি পরিত্যক্ত ভিটা। এখানে কখনো কিছু আবাদ করবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি আলমের বাবা। গুপ্তধন সন্ধানকারীরা তার চোখ খুলে দিয়েছে। পুরো ভিটায় খনন কার্য পরিচালিত হওয়ায় সে এখানে শিম, হলুদ ও অন্যান্য ফসলি গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে গেল। গ্রামের সবখানে খোঁজাখুজি করে গোবর সংগ্রহ করল। গোবরগুলো কয়েকদিন শুকানোর পর পিতা-পুত্র দুজনে মিলে সেগুলো চূর্ণ করে জমিতে ছিটিয়ে দিল।  যে ভিটায় কখনো চাষের চিন্তা-ভাবনা করেনি, তাতে লাগিয়ে ফেলল শিম, হলুদ, বেগুন ও মরিচের চারা। কয়েকদিন পর বাতাসের মৃদু আলিঙ্গনে যখন গাছগুলো ডানে বায়ে নড়তে লাগল, সাথে সাথে তার ভাগ্যও যেন ঝিলিক মেরে উঠল। মিনহাজরা ফিরে এসেছে বান্দরবান হতে। সবাই উৎফুল্ল। তাদেরকে বান্দরবান চারদিন অবস্থান করতে হয়েছে। ফিরে এসে যখন দাদা আর রিশাদের কাহিনী শুনল, তারাও হতভম্ব। যদি রিশাদ সত্যিই এখানে থাকে, তবে সাতকানিয়া ও বান্দরবানে যে রিশাদকে দেখেছে ঐ রিশাদটা কে? তারা কোন হিসাব মিলাতে পারছে না। সবাইকে যখন তারা বান্দরবানের রিশাদের কথা বলছিল, এমন সময় দেখা গেল রিশাদ আসছে। তাকে দেখে সবাই অস্থির হয়ে গেল। মফিজুর রহমান সবাইকে নিদের্শ দিল আজান দিতে। আজান দিলে খারাপ জ্বীন-ভূত থাকে না, পালিয়ে যায়। সবাই একযোগে আজান দেয়া শুরু করল। সকাল এগারটায় সবাই আজান দিচ্ছে দেখে রিশাদ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। অনুভব করতে চেষ্টা করল, ভূমিকম্প হচ্ছে কি না। এ দেশে ভূমিকম্পের সময় মানুষ  আজান দেয়। সে রকম কোন কিছু অনুভব করল না সে। পরে ভাবল, সম্ভবত কোন নবজাতকের আগমন ঘটেছে। নবজাতকের জন্ম উপলক্ষেও আজান দেয়া হয়। সে মিনহাজদের বাসার দিকে এগুতে লাগল। তাকে বাড়ির দিকে আসতে দেখে মফিজুর রহমান নিশ্চিত হল, এটা আসল রিশাদ। আজান শুনে পাড়ার অনেকে জড়ো হয়েছে। মিনহাজ তাদেরকেও সাতকানিয়া হতে বান্দরবানের পুরো রিশাদ অংশ বর্ণনা করল। কয়েক দফায় বাঁধা দিতে চেয়েছে শাহীন। কিন্তু মিনহাজের আবেগের কাছে তা হার মেনেছে। সে কাহিনী শুনে সবাই আশ্চর্য হয়ে গেল। এমনকি রিশাদ নিজেও। এটা কিভাবে সম্ভব? এ দুই ঘটনার পর হতে সবাই রিশাদকে সন্দেহের চোখে দেখছে। সবগুলো চোখ তার উপর নিবদ্ধ। রিশাদের মনে হচ্ছিল, তাকে সদ্য কোথা হতে ধরে আনা হয়েছে। সবাই গভীর আগ্রহ নিয়ে সে জন্য তাকে দেখছে। ক্রমশ তার মধ্যেও অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অস্বস্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় রিশাদ ওখান হতে বাড়ি ফিরে আসল। রাত্রে খাবার টেবিলে বসেছে মফিজুর রহমান, মিনা, মিনহাজ, রায়হানা ও মালেকা। কিছুক্ষণ আগে আব্দুল আলিম ফোন করেছিল। জানতে চেয়েছিল তার বাবা-মা, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা কেমন আছে? সবাই একযোগে বলেছিল ভাল। ‘প্রবাসে অবস্থানরত ব্যক্তিকে মন্দ খবর দেয়া যায় না। গেলে আমি বলতাম, দেখ তোর ছেলেটা যা নষ্টের মূল হয়েছে।’ রায়হানা বলল। স্ত্রীর কথার সূত্র ধরে মফিজুর রহমান বলল, ‘মিনহাজ সত্যি করে বল বান্দরবান কেন গিয়েছিলে? আমি জানি, কিন্তু তোমার মুখ দিয়ে শুনতে চায়।’ মিনহাজ থতমত খেয়ে স্বীকার করল, তাতুমের সাথে দেখা করার জন্য তারা বান্দরবানে গিয়েছিল।  গুপ্তধন উদ্ধারের গোপন মিশনে গিয়েছিল। শুনে মালেকা বেগম প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। সে ছেলেকে ধমকে উঠল। আরও কী সব বলতে যাচ্ছিল। রায়হানা পুত্রবধূকে সান্ত্বনা দিল। ‘তোকে কে বলেছে, আমাদের ধন সম্পদ দরকার?’ মালেকা পুত্রের কাছে জানতে চাইল। ‘না হলে, আমার বাবা বিদেশ যাবে কেন?’ পাল্টা জানতে চাইল মিনহাজ। ‘সে কথা!’ রায়হানা নাতিকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল, ‘শুন, তোমার বাবা ছিল লেখাপড়ায় তোমার মত ফাঁকিবাজ। সে বুঝতে চাইত না সময় কী? এর সদ্ব্যবহার কেন দরকার? তাকে সময় সম্পর্কে বুঝাতে গিয়ে আমি নিজে অনেক কিছু শিখেছিলাম, কিন্তু তাকে কিছু শেখাতে পারিনি। তুমিও তোমার বাবার মত ভুল পথে পা বাড়াচ্ছ। অসময়ে সম্পদের পিছনে দৌড়াচ্ছ। সম্পদ আর সম্মান খুঁজলে পাওয়া যায় না।’ রায়হানা কথা শেষ করতে না করতে মফিজুর রহমান বলল, ‘মিনা, তোমার জীবনের উদ্দেশ্য কী?’ মিনা বলল, ‘আমি ডাক্তার হতে চাই।’ মফিজুর রহমান মিনহাজের কাছে জানতে চাইল, ‘তুমি কী হতে চাও?’ মিনহাজ বলল, ‘আমিও ডাক্তার হতে চাই।’ ‘তুমি কেন ডাক্তার হতে চাও?’ মিনার কাছে জানতে চাইল মফিজুর রহমান। ‘আমি মানুষের সেবা করতে চাই।’ মিনা জবাব দিল। ‘তুমি কেন ডাক্তার হতে চাও?’ মিনহাজকে জিজ্ঞাসা করল মফিজুর রহমান। ‘আমিও মানুষের সেবা করতে চাই।’ ‘তোমরা কেন গতানুগতিক কথা বলছ?’ জানতে চাইল মফিজুর রহমান। ‘ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছাটা কি গতানুগতিক?’ জানতে চাইল মিনহাজ। আমাদের দেশে এটা গতানুগতিক জীবনের উদ্দেশ্য। এ দেশে ষষ্ঠ শ্রেণী হতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনায় ডাক্তার হওয়া ছাড়া আর কোন ভাল রচনা নাই। এর প্রভাবেই ছাত্ররা সবাই ডাক্তার হতে চায়। সব ছাত্ররা পরীক্ষার খাতায় এই রচনায় বমি করে দিয়ে আসে। এ দেশে অবশ্য অন্য একটা সমস্যা আছে। এখানে ছাত্রদের ঝোঁক এবং মেধা কোন বিষয়ে তা পর্যালোচনা করা হয় না, ফলে যথাযথ মেধা বিকাশের সুযোগ ছাত্ররা পায় না। অনেকে ইচ্ছামত বিষয় নির্বাচন করে পরে হাহুতাশ করে। দেশেতো হাজার হাজার পেশা আছে। তোমরা শুধু ডাক্তার হতে চাইবে কেন? তোমাদের বুঝার জন্য আমি কয়েকটি পেশার নাম বলছি। আমি তোমাদেরকে এক সপ্তাহ সময় দিব। আগামী শুক্রবারে আমি জানতে চাইবো সত্যিকারভাবে তোমরা কে কী হতে চাও? এরপর দাদু ৫০টি পেশার নাম বলল। আট. আমি তোমাকে অনেক দায়িত্ব দিয়েছিলাম, তুমি কয়টা কথা মনে রেখেছ?’ দাদু জানতে চাইল। ‘কয়টা কেন? একটাই দিয়েছেন।’ জবাব দিল মিনহাজ। ‘এ অল্প বয়সে যদি সব ভুলে যাও, তবে কি হবে?’ ‘দাদু, তুমি শুধু একটা সঠিক জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সাতদিন সময় দিয়েছিলে।’ ‘আরে না, তোমাকে কিছু প্রশ্নও দিয়েছিলাম, জানতে চেয়েছিলাম ১.  পৃথিবীর সবচে’ মূল্যবান বস্তুটি কী? ২. কোটি টাকার গুপ্তধন কী? ৩. তুমি আমার কাছে সে অদ্ভুত প্রাণীর তথ্য জানতে চেয়েছ, যাকে বেঁধে রাখা যায় না। একে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে? এভাবে আমাদের মধ্যে কিছু অমীমাংসিত বিষয় রয়ে গেছে। বল এখন এগুলো কিভাবে সমাধান করা যায়?’ মিনহাজ জবাবে বলল, ‘আমি আমার ক্যারিয়ার নির্বাচন নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা ও পরামর্শ করেছি সবার সাথে। একেকজন একেকটা পরামর্শ প্রদান করে।’ মফিজুর রহমান বলল, ‘জীবন তোমার। তোমার ভাল-মন্দ তোমাকে বুঝতে হবে। তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তোমার জীবনকে বুঝার জন্য তোমাকে আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে। এটা খুব জটিল একটা কাজ। এক্ষেত্রে তোমাকে শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে, নিজের প্রশ্নমালা নিজেকে তৈরি করতে হবে। এবং তোমাকে সমাধান বের করতে হবে। তোমার অন্তর্নিহিত শক্তি কারো জানা নাই। তোমার অন্তর্নিহিত শক্তি পর্যালোচনা করতে গিয়ে অন্যরা বলবে, তোমার দ্বারা হয়ত কিছু করা সম্ভব না। কিন্তু তুমি জান, সম্ভব।  একজন অন্ধ আরেক অন্ধকে পথ দেখাতে পারে না। তুমি যখন তোমার জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নির্ধারণ করতে যাবে, তোমাকে পরামর্শ করতে হবে তাদের সাথে, যাদের চোখ খোলা। যাদের দূরদৃষ্টি আছে। আমি তোমাকে কিছু নির্দেশনা দিতে চাই। তুমি কি রাজি?’ ‘দাদু, আমি রাজি।’ দাদু বলা শুরু করলÑ ‘ জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে তোমার যে বিষয়টা প্রথমে দেখা প্রয়োজন তা হলো বড় ছবি দেখা। যে যত বড় মনছবি দেখবে, তার বিষয়প্রীতিটাও তত বড় হবে।’ ‘বড় ছবি মানে?’ জানতে চাইল মিনহাজ। বড় ছবি মানে উচ্চাকাক্সক্ষা। উপরে উঠার প্রথম ধাপ হচ্ছে উচ্চাকাক্সক্ষা বা বড় স্বপ্ন। আমাদের চিন্তাধারার মধ্যে নতুনত্ব, সৃজনশীলতা এবং তা পাবার দুর্বিনীত আকাক্সক্ষা থাকতে হবে। তোমার এমন বৃহত্তর ও সুদূর প্রসারী চিন্তা-ভাবনা দেখে অনেকে তোমাকে ব্যঙ্গ করে বলবে পাগল। এমন দুর্গম পথে চলতে গিয়ে তুমি কখনো কখনো তীব্র সমালোচনা বা বিরোধিতার মুখে পড়বে। তোমাকে অযৌক্তিক মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করবে। এতে তোমার বিচলিত হবার কোন কারণ নাই। মনে রাখবে, যারা এ ধরনের চিন্তা-ভাবনায় মগ্ন ছিল, সম-সাময়িক সবাই তাদেরকে এভাবে অভিহিত করেছে। তবুও তারা তাদের সংকল্প হতে ন্যূনতম বিচ্যুত হননি। জীবনে যারা বড় হয়েছে, ছোট কাল হতে তারা বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখেছে। সংকল্প বা স্বপ্ন না দেখে কেউ আচমকা হিমালয় জয় করতে পারবে না। তোমাকে বুঝতে হবে উচ্চ আসন গ্রহণের পথটা মসৃণ কোন পথ নয়। এর জন্য প্রয়োজন- স্বপ্ন, সংকল্প, পরিশ্রম, ঝুঁকিগ্রহণ ও সময়ের সদ্বব্যবহার। স্বপ্নই আমাদের গন্তব্য স্থল নির্ধারণ করে। যে পুকুর পাড়ি দেবার স্বপ্ন দেখে, সে মহাসাগর পাড়ি দিতে পারবে না। যে মহাসাগর পাড়ি দেবার স্বপ্ন দেখে, সে পুকুরের গুরুত্ব অস্বীকার করে না। সে জানে এক হাজার মাইলের পদযাত্রা এক কদম দিয়ে শুরু হয়।’ তারা যখন তাদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে খোশগল্পে মত্ত, এ সময় এসে হাজির হয় মিনা। মিনাকে দেখে দাদু জানতে চাইল, ‘তুমি তোমার জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছ?’ মিনা জানাল, ‘আমি লেখক হবার সিন্ধান্ত নিয়েছি।’ তুমি কিভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছ যে, ‘তুমি লেখক হবে?’ ‘দাদু, আনাফ্রাংকের ডায়েরি পড়ে আমি দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। সে ছোটকাল হতে স্বপ্ন দেখতো বড় লেখিকা হবার। সে জন্য সে কাজও শুরু করে দিয়েছিল। দুর্ভাগ্য যে, তাকে তের বৎসর বয়সে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। এত অল্প বয়সে ও সে পৃথিবীতে বড় অবদান রেখে গেছে।’ দাদু ওর কথায় দারুণ পুলকিত হলেন। তারপর লেখক হওয়ার নিয়মাবলি, প্রকৃত লেখকের গুণাবলি এবং লেখার উপাদান প্রভৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত বললেন। শুনে শুধু মিনা নয়, মিনহাজও দারুণ উপকৃত হলো। দাদুর কথা শুনতে শুনতে বাইরের দিকে তাকালো মিনহাজ। দেখল শাহীন দূর হতে তাকে ইশারা করে বাইরে আসতে বলছে। শাহীনকে দেখার পর হতে উশখুশ করতে লাগল মিনহাজ। এদিকে দাদু লেখকের পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। মিনা প্রশ্ন করলো, ‘দাদু, সাহিত্য সম্পর্কে আপনি এত বিষয় জানলেন কোথায়?’ ‘জানব না কেন? আমি সাহিত্যের একান্ত ভক্ত। সাহিত্য নিয়ে আমি ব্যাপক অধ্যয়ন করেছি।’ জবাব দিতে দিতে দাদু কিছুক্ষণ নীরবে মিনহাজের দিকে তাকিয়ে রইলেন। মিনহাজ ছটফট করে যাচ্ছে। পালিয়ে যাবার জন্য পথ খুঁজছে। ‘মিনহাজ, তুমি এমন করছ কেন?’ দাদু জানতে চাইল। ‘দাদু , আমার কিছু কাজ আছে। আমাকে যেতে হবে।’ বলল মিনহাজ। ‘আচ্ছা, তোমার যদি বাইরে কাজ থাকে, যাও।’ মিনহাজ উঠে গিয়ে শাহীনের সাথে সাক্ষাৎ করল। শাহীন তাকে জানাল, ‘দুঃসংবাদ আছে। আমাদের সব সাধনা শেষ হয়ে গেছে।’ ‘কী হয়েছে?’ জানতে চাইল মিনহাজ। ‘চল, গেলেই বুঝবি।’ তারা ছুটল উল্লুক ভিটার দিকে। নয়. অনেকে জড়ো হয়েছে এখানে। গভীর আগ্রহ নিয়ে গর্তটা দেখছে। বিশাল গর্ত। প্রায় পাঁচ ফুট গভীর। গর্তের আশেপাশে মাটি ফেলা হয়নি। মাটিগুলো আরো দশ হাত দূরে নিয়ে ফেলা হয়েছে। সকাল হতে সবাই আসছে সে গর্ত দেখার জন্য। পুরো পাড়ায় এটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। কে এই গর্ত খুড়েছে? আলমের বাবা ক্ষুদ্ধ। তার ক্ষেতের বিশাল অংশ নষ্ট করে ফেলেছে এ গর্ত খননকারীরা। সকালে এসে এটা দেখার পর হতে সে একনাগাড়ে বকে চলেছে সবাইকে। মিনহাজ যখন গর্তটা দেখল, দুরু দুরু করে কেঁপে উঠল তার বুক। গর্তটা তার সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল মুহূর্তের মধ্যে। বুকের মধ্যে চলতে থাকা সে যন্ত্রণা-তরঙ্গ বিস্ফোরিত হয়ে দু’চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে চাইলেও নিজেকে সম্বরণ করল সে। নিজের দুঃখ পাথর-চাপা দিয়ে সে আলমের বাবার দুঃখে শরিক হল। আলমের বাবা একজন শ্রমিক এনে গর্তটা ভরাট করে দিল। জরুীি বৈঠকে বসে ‘অপারেশন হিডেন ট্রেজার কমিটি’ সিদ্ধান্ত নিল তারা আবার বান্দরবান যাবে। তান্ত্রিকের সাথে দেখা করে দ্রুত গুপ্তধন উদ্ধার করবে। আর এক মুহূর্তও বিলম্ব করা যাবে না। স্কুল হতে এসে বাইরে যাচ্ছিল মিনহাজ। উদ্দেশ্য খেলাধুলা। চৌকাঠের বাইরে পা রাখতেই ডাক দিল মফিজুর রহমান, ‘মিনহাজ চল, স্কুলে যাই।’ শুনামাত্র বুক ধড়ফড় করে ওঠে মিনহাজের। প্রথমে যেতে অস্বীকার করে সে, ‘দাদা, আমি মাত্র স্কুল হতে আসলাম, আবার যাব?’ ‘হ্যাঁ, তোমাকে যেতেই হবে। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ।’ বলল মফিজুর রহমান। ‘না, আমি যাবো না। আপনি যান।’ জবাব দিল মিনহাজ। ততক্ষণে ওখানে এসে হাজির হয়েছে মালেকা। দাদার সাথে ছেলের এমন ঔদ্বত্যপূর্ণ আচরণ দেখে ক্ষেপে যায় মালেকা। মায়ের অবস্থা দেখে শেষ পর্যন্ত স্কুলে যেতে বাধ্য হল মিনহাজ। প্রধানশিক্ষকের কক্ষে ঢুকা মাত্র তিনি প্রথমে মিনহাজকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মিনহাজ, আজকে স্কুলে আসনি কেন? রূদ্রমূর্তি ধারণ করে বললেন, ‘মিনহাজ বল, আজকে স্কুলে না এসে কোথায় গিয়েছিলে? আমি জানি তুমি কোথায় গিয়েছিলে। কিন্তু তোমার নিকট শুনতে চাই।’ মিনহাজ স্বীকার করল, সে স্কুল ফাঁকি দিয়ে পাহাড়ে গিয়েছিল। ওখানে একজন তান্ত্রিক আছে, তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য। ‘তান্ত্রিক কী কী করেছিল, কী কী বলেছিল সব বল।’ স্যারের নির্দেশ শুনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায় মিনহাজ। অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে। ‘ঠিক আছে, গুপ্তধন কখন হাতে পাচ্ছ, তাই বল?’ ‘স্যার, আমরা তাকে বলেছিলাম রাতে কাজ করতে হবে, সে রাতে কাজ করতে রাজি নয়, সে জন্য আমাদের সাথে তার বনিবনা হয়নি।’ ‘শুন মিনহাজ, আমি যদি তোমাকে গুপ্তধনের সন্ধান প্রদান করি, তুমি কি তা খুঁজে বের করতে পারবে?’ ‘আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।’ জবাব দিল মিনহাজ। এ গুপ্তধন পেতে হলে তোমাকে দুটি বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে। এর আগে আমি তোমাকে  এক আলৌকিক চোরের কাহিনী বলব, তোমাকে বলতে হবে ঐ চোরটা কে? একটা গ্রাম। সবকিছু তাদের ঠিক মতো চলছিল। একদিন গ্রামে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলো। সেখানে এসেছিল এক বৃদ্ধ লোক। তিনি গ্রামবাসীদের ডেকে বললেন, হে মানুষ, তোমরা কী বোকা! তোমাদের বোকামী দেখে আমি সত্যিই আশ্চর্য্যানি¦ত। তোমাদের বাড়িতে প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে, অথচ তোমরা জান না। বিজ্ঞ লোকটি খাতা কলম বের করে হিসাব কষলেন। সবাই দেখল বিজ্ঞ ব্যক্তিটি ঠিক কথাই বলেছে। তারা সজাগ হয়ে গেল। যে করে হোক এই চোরকে পাকড়াও করতে হবে। পুরো গ্রাম জুড়ে পাহারা বসানো হল। কিছু দিন পর বিজ্ঞ লোকটি আবার আসলো। এবার গ্রামের সবার মুখে তৃপ্তির হাসি। ঐ লোকটি এবার তাদেরকে উপহাস করতে পারবে না। বিজ্ঞ লোকটি খাতা কলম নিয়ে হিসাব করে দেখালেন, চোর ঠিকই সব চুরি করে নিয়ে গেছে। গ্রামবাসীরা প্রার্থনা করলেন হে মহান অতিথি আপনি বলুন, এ ভয়ঙ্কর চোরকে কিভাবে পাকড়াও করা যাবে। শুনে বৃদ্ধ বললেন, খুবই সহজ কাজ। ঐ চোরের সাথে পাল্লা দিয়ে চল। তবে, তোমাদের ক্ষতি কমে যাবে। জীবনও সুন্দর হবে। বলতো ঐ চোরটা কে?’ মিনহাজ বলতে পারল না। প্রধানশিক্ষক তাকে দুদিন সময় দিল। কড়া নির্দেশ দিয়ে বলল, যদি এখন হতে একদিনও স্কুল ফাঁকি দেয়া চলবে না। দাদু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ