রক্তে ভেজা একুশ

রক্তে ভেজা একুশ

তোমাদের গল্প ফেব্রুয়ারি ২০১৫

 হাসবিতুল হাসান নিঝুম #

পদার্থবিজ্ঞান ক্লাস শেষ করে তিন বন্ধু আবির আহসান, রিফাত ইলাহী ও শুভ তালুকদার বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে বের হয়ে এলো। এ সময় আবির বললো, দোস্ত চল আমরা আমতলায় (ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সম্মুখ চত্বর) যাই। রিফাত বললো, কেন? শুনলাম সেখানে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। আবির বললো, আমরাতো এ সভায় যোগ দিতেই যাবো। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সেখানে সভা হবে। শুভ বললো, শুনেছি সেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল শুরু হবে। ভাবতে পারিস, মিছিল শুরু হলে কী হবে? পুলিশ তো মিছিলকারীদের ওপর আক্রমণ চালাবে। আবির তার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। দোস্ত, আমি যাবোই আবির বললো, তোরা যাবি? শুভ শ্রাগ করল, গিয়ে কি লাভ? যদি মিছিলে যাও জান নিয়ে ফিরে আসতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। আবির তার সিদ্ধান্তে অটল। শোন, দোস্ত দেশটা আমার। দেশের ভাষাটাও আমার। আমার জিনিস যদি অন্য কেউ কেড়ে নেয়, তবে আমি তা মেনে নিতে পারব না। আমি প্রতিবাদ করব অবশ্যই করব। রিফাত বললো, দেশে তো মানুষের অভাব নেই। দেশটা কি তাদের নয়, নাকি দেশের ভাষাটা তাদের নয়। তারা কেন প্রতিবাদ করে না? কে বললো, প্রতিবাদ করে না? তোরা আমতলায় চল, দেখবি কত মানুষ ওখানে। আবির বললো, অনেকে অবশ্য আসেনি। কিন্তু আমরা তাদের মতো ভিতু না বুঝলি? তাতে কী? শুভর প্রত্যুত্তর। তাতে কী মানে? আবির বললো, শোন, দেশের এবং দেশের ভাষার বিপদে যারা পিছপা হয়, আমি তাদের দলে নেই। তারা হয় কাপুরুষ। লড়াই করার সাহস তাদের নেই। সকলেই নীরব। আবির আবার বলতে শুরু করল- আমার দেশ, আমার মাটি, আমার ভাষা। দেশকে রক্ষা করার দায়িত্বও আমার। আবিরের বক্তব্যে দু’জনের মনের ভীতি দূর হয়ে গেল। দু’জনেই বলে উঠলো- চল আবির আমরাও তোর সাথে যাবো। ভাষা আমার, দায়িত্বও আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা। অনেক মানুষ সমবেত হয়েছে এখানে। সবার মনে একটাই কথা, দেশ আমার, ভাষা আমার, দায়িত্বও আমার। সভা শুরু হলো। সভায় সিদ্ধান্ত হলো যে, দশজন করে মিছিল শুরু করা হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দিক থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল শুরু হলো। রাস্তায় পুলিশ প্রথমে কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। এতেও মিছিল বন্ধ না হওয়ায় পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। কিন্তু এতেও মিছিল বন্ধ হলো না। অবশেষে পুলিশ গুলি ছুড়তে শুরু করে। একের পর এক অনেক মানুষ মারা গেলো। আবির, রিফাত, শুভ তখনও মিছিল করে যাচ্ছে- রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। হঠাৎ একটি গুলি এসে লাগলো আবিরের বুকে। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। রিফাত, শুভ তার পাশে হাঁটু গেড়ে বললো- বন্ধু তোর কিছু হবে না, আমরা আছি। দোস্ত, আমি আর বাঁচব না। কিন্তু দেখিস, এতো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত বাংলাভাষা ওরা কেড়ে নিতে পারবে না। আবিরের চোখে জয়ের স্বপ্ন আমরা জয়ী হবোই। আবির চোখ বুজে ফেললো। আবিরকে দেখে দুই বন্ধুর কষ্ট নয়, গর্ব হচ্ছে। দেশের ভাষার জন্য হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করতে পারে এমন বন্ধু ক’জনের আছে। বন্ধুর আত্মত্যাগে তারা গর্বিত। ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারির দিন আবির আহসানের মতো অনেকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার রাজপথ। ফলে আমরা বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা রূপে পেয়েছি। এই ভাষা আমাদের, এই ভাষা রক্ষার দায়িত্বও আমাদের।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ