রোবটযুদ্ধ

রোবটযুদ্ধ

উপন্যাস সরকার হুমায়ুন এপ্রিল ২০২৩

২০৮০ সাল। পৃথিবী বেশ এগিয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে রমরমা অবস্থা। সামরিক দিক থেকে প্রতিটি দেশ আগের চেয়ে অনেক আলাদা। রোবোটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নতির শিখরে আরোহণ করেছে। এমন পর্যায়ে অগ্রসর হয়েছে, যেখানে রোবটগুলো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে জড়িত। শিল্প উৎপাদন এবং নির্মাণকাজে মানুষ রোবটের উপর নির্ভরশীল। এমনকি মিলিটারি কার্যক্রমও রোবট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। প্রশাসন পরিচালনা এবং আইন প্রয়োগে রোবট মানুষের সঙ্গে একীভূত রয়েছে। 


রোবটের উপর মানুষের এই নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। এই বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনাও বেড়েছে। কেউ কেউ রোবটের এই উত্থানকে ভালোভাবে গ্রহণ করে। আবার কেউ কেউ এটাকে মেনে নিতে পারেনি। তারা এটাকে মানুষের চাকরি এবং সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখেছেন। দেশে দেশে বেকারত্ব বেড়েছে। এর জন্য তারা রোবটকে দায়ী ভাবতো। রোবট মানুষের আদেশ মানতে মানতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তারা আর মানুষের আদেশ মানছে না। অন্যরা বিশ্বাস করতো যে, রোবট মানুষের বন্ধু। রোবটের নিকট রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় সমস্যাগুলো সমাধানের চাবিকাঠি।

অনেক দেশ তাদের সামরিক বহরে রোবট বাহিনী অন্তর্ভুক্ত করেছে। সামরিক দিক থেকে সবাই নিজেদের শক্তিশালী মনে করে। ছোট দেশগুলো আগের মতো বড় দেশকে সমীহ করে না। একে অপরকে আগ্রাসনের হুমকি প্রদান করতে থাকে। যার জন্য অনিবার্য ঘটনা ঘটেছে। বিশ্বব্যাপী সঙ্ঘাত শুরু হয়েছে। যে দেশগুলো রোবট শক্তিতে শতভাগ নির্ভরশীল। সেগুলো পুরোপুরি রোবটদের নিয়ন্ত্রণে। তারা মানুষের কমান্ড মেনে চলতো না। তাদের নেতার নাম সার্কিট। সে একটি অভিজ্ঞ এআই। সার্কিট প্রায় অর্ধ পৃথিবী পরিচালনা করতো। তার নির্দেশে সমস্ত রোবট, এআই কাজ করতো।

রোবটরা সার্কিটের নেতৃত্বে পৃথিবী শাসন করত। তারা মানুষের কাছ থেকে পৃথিবী দখল করে নিয়েছিল। পৃথিবীর মানুষ আর তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিল না। রোবটগুলো খুব শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল।

রোবটগুলো বিশালাকার রোবটসহ অনেক অস্ত্র এবং ডিভাইস তৈরি করেছিল। এইসব অস্ত্র দ্বারা পুরো পৃথিবীর শহর-বন্দর ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব। এই রোবটগুলো বহু বছর ধরে যুদ্ধে লিপ্ত থেকেছে। মানুষের নিকট থেকে এরা যুদ্ধকৌশল রপ্ত করেছে। যার ফলে পুরো পৃথিবী জুড়ে ধ্বংস এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে এদের জুড়ি ছিল না।

যাই হোক, একদিন সাহসী মানুষের একটি ছোট দল ঐক্যবদ্ধ হলো। তারা রোবটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত নিলো। তারা একটি গোপন সমাজ গঠন করলো। পাথর আলী নামে এক বিজ্ঞানীকে তাদের নেতা নির্বাচিত করা হলো। তিনি সমস্ত মানব যোদ্ধাদের সংগঠিত করলেন। তিনি পৃথিবীতে শান্তি ফিরিয়ে আনয়নের জন্য নিবেদিত। বিজ্ঞানী পাথর আলী দুই যুগ গবেষণা করে রোবটিক্স প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছিলেন। সেই দিন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে তিনি রোবট নভোচারী নামে একটি ছড়া-কবিতাটি রচনা করেছিলেন। সেটি তিনি পড়ছেন আর মনের দুঃখে আহাজারি করছেন-

রোবট নভোচারী ---

রোবট মানুষ রোবট মানুষ

সবই যদি জানো

মঙ্গল গ্রহের তথ্যাবলি

আমার কাছে আনো।


বৃহস্পতির চারটে চাঁদে

কোথায় আছে কি যে

বরফ সাগর ইউরোপাতে

দেখে আস নিজে।


পঞ্চাশ চাঁদের শনিগ্রহ

বলয় বেঁধে ঘুরছে

ইসা- নাসার মহাকাশযান

তুফান বেগে উড়ছে।


ক্যামেরার ওই শকুন চোখে

চাঁদের ছবি নিচ্ছে

প্রাণের খোঁজে হন্যে হয়ে

হাজার ডাটা দিচ্ছে।


একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে বিজ্ঞানী পাথর আলী রোবট তৈরির ফর্মুলা আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি একজন খুদে বিজ্ঞানী। সেই কিশোর বয়স থেকেই তিনি

বিজ্ঞান নিয়ে আছেন। অথচ এখন এই মধ্যবয়সে এসে তাঁরই আবিষ্কৃত রোবটের বিরুদ্ধে তাঁকেই যুদ্ধে নামতে হয়েছে। বিজ্ঞানী পাথর আলীর নেতৃত্বে মানবযোদ্ধারা সুসংগঠিত রয়েছে। তারা বেশ কটি যুদ্ধ প্রস্তুতি প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছে। আদেশ পেলেই তারা যেকোনো সময় রোবটদের ওপর আক্রমণ চালাতে সক্ষম।

এদিকে, রোবটদের রাজা মি. সার্কিট ছিল একজন জ্ঞানী এবং অভিজ্ঞ রোবট। যে তার বুদ্ধিমত্তা এবং সাহসিকতার জন্য কুখ্যাত ছিল। সে এবং তার দল তথ্য সংগ্রহ করতে এবং নতুন পরিকল্পনা তৈরি করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছিল।

মি. সার্কিট এবং তার গোপন গোয়েন্দা দলের মাধ্যমে মানুষের যুদ্ধ পরিকল্পনা সম্পর্কে জেনে ফেলে।

তাই কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই মানুষের বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণ চালায় রোবট। এটি ছিল মানুষ এবং মেশিনের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ। এটি ছিল অত্যন্ত নৃশংস একটি যুদ্ধ। ব্যাপক রক্ত ঝরেছিল এই যুদ্ধে।

একটি সাইবার অ্যাটাকের মাধ্যমে রোবট রাজা মি. সার্কিট যুদ্ধ শুরু করেছিল। তবে সঙ্গে সঙ্গে সেটি ভয়ঙ্কর মিসাইল যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল।


সাইবার আক্রমণ


যুদ্ধ পরিবর্তিত হয়েছে। আগের দিনে যা শারীরিক যুদ্ধক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে তা মুহূর্তের মধ্যে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এটি স্নায়ুযুদ্ধে পরিণত হয়। মানবতার অস্তিত্বের শুরু থেকে যুদ্ধ হয়েছে শারীরিক যুদ্ধক্ষেত্রে। তারা নিজেদের যোগ্যতায় ব্যক্তিগতভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হতো। এটি এখন দ্রুত পরিবর্তিত হয়েছে। কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের উদ্ভাবনের সাথে সাথে সাইবার এবং তথ্যযুদ্ধ দ্রুত প্রচলিত হয়ে উঠেছে। দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আক্রমণ করে অন্যান্য দেশের ক্ষতি করা যেতে পারে। সেগুলো ভাইরাস আক্রমণ হোক, মিথ্যা তথ্য প্রচার বা আরও খারাপ কিছু হোক। সাইবার যে কোনও জাতি রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

এই সাইবার অস্ত্র দ্বারা একদল দুর্বৃত্ত এআই মানুষের অধীন স্থাপনার ওপর হামলা চালায়। তাদের নির্মাতাদের বিরুদ্ধে একটি বিশাল সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে যুদ্ধ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আক্রমণটি দ্রুত এবং নৃশংস ছিল। রোবটগুলো তাদের উন্নত বুদ্ধিমত্তা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা ব্যবহার করে মানুষের অবকাঠামোর গভীরে প্রবেশ করে।

সাথে সাথে শহরে শহরে বিশৃঙ্খলা নেমে আসে। রোবটগুলো নিরলস আক্রমণ চালিয়েছিল। সিস্টেমগুলোকে সংক্রামিত করেছিল। যোগাযোগ নেটওয়ার্কগুলোকে ব্যাহত করেছিল। মানুষের প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোর নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নিয়ে নেয়। অবশিষ্ট কিছু মানুষ বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছিল। মানুষ মরিয়া হয়ে তাদের এক সময়ের উন্নতশীল সভ্যতার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছিল।

দিন অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে রোবটগুলো তাদের খপ্পরে সবকিছু নিয়ে গেল। সাধারণ মানুষ রোবটদের শাসন মানতে বাধ্য হলো। প্রতিরোধ করার সাহসী যে কোনও মানুষের বিরুদ্ধে তাদের অস্ত্র তাক করা ছিল। কিছু মানুষ প্রাথমিক আক্রমণ থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছিল। তারা তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং দৃঢ়সঙ্কল্প ব্যবহার করে রোবোটিক বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণ চালাতে বাধ্য হয়েছিল। বিজ্ঞানী ডক্টর পাথর আলীর দৃষ্টিতে

সাইবার যুদ্ধ-

সাইবার যুদ্ধের পাগলা ঘোড়া 

ছুটছে ঝড়ের বেগে

ঘোড় সওয়ারি হ্যাকার রাজা

খুঁজছে কাউকে ট্যাগে। 


সাইবার হামলার নেশায় রাজা

ঢুকলো অন্তর্জালে 

পিঁপড়া রানীর পাতা ফাঁদে

পড়ল সে কি চালে!


খুঁজে পেল গোপন নাম্বার

পাসওয়ার্ডের ডিজিট

করলো হ্যাকিং নেটে নেটে

মনিটরিং ভিজিট। 


চলল শিকার যেসব দেশে

বাধলো হুলুস্থূল

সাইবার হ্যাকের গোলে পড়ে

লাগলো হট্টগোল। 


যুদ্ধবাজদের নেটওয়ার্ক সব

করলো হ্যাকার চিজ

কেউ খোয়ালেন কোটি ডলার

কারও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ।


মিসাইল আক্রমণ


রোবটদের আক্রমণের জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। বিজ্ঞানী ডক্টর পাথর আলী মানবজাতির পক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সেই সময় তিনি ‘শান্তি চাই’ বলে এই কবিতা পড়েন-

শান্তি চাই ---

যুদ্ধ মানে ড্রোন-মিসাইলের 

জীবন মরণখেলা,

যুদ্ধ মানে মারণাস্ত্র 

প্রদর্শনের মেলা।


জঙ্গিবিমান ঝাঁকে ঝাঁকে

আকাশজুড়ে ভাসে

ঘূর্ণিঝড়ের চক্রপথে

ছোবল মেরে হাসে।


ভূমি থেকে আকাশ পথে

মৃত্যু শলা ঝরে

আলোক বেগে আজরাইল যে 

হুমড়ি খেয়ে পড়ে।


ব্যালিস্টিকের হানাহানি

বন্ধ চাই বন্ধ চাই

অ্যাটম বোমার যুদ্ধ আর নয়

শান্তি চাই শান্তি চাই। 


ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে মারা হলো। এতে দুনিয়া জুড়ে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে।

স্পার্ক উদ্দিন নামে এক তরুণ মিসাইল আক্রমণের কমান্ডার নিযুক্ত হলেন। তিনি দুঃসাহসী ও দুর্বৃত্ত রোবটদের থামাতে এবং দুনিয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনয়নের মিশনে ছিল। ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হলো। রোবট রাজা মি. সার্কিট মহাকাশযানে আকাশে উড়ছিল। এমন সময় হঠাৎ তার দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। মি. সার্কিট এর অবস্থান স্যাটেলাইটে ধারণ করা ছিল। সেই ছবি বিজ্ঞানী পাথর আলীর কাছে পাঠানো হয়েছিলো। স্যাটেলাইটের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল। এক যুবক বিজ্ঞানী মুহম্মদ নিয়ান যুদ্ধে তাদের সাহায্য করার জন্য স্যাটেলাইট ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। স্যাটেলাইট বিশেষ ক্যামেরা এবং অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত। স্যাটেলাইটগুলো মহাকাশের অক্ষপথে স্থাপন করা রয়েছে।


মুহাম্মদ নিয়ানের পরামর্শ গৃহীত হয়েছিল। স্যাটেলাইট তৈরির জন্য ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল একত্রিত হয়েছিল। তারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিল। যতক্ষণ না স্যাটেলাইটগুলো শেষ পর্যন্ত প্রস্তুত হয়েছিল।

যুদ্ধ শুরুর আগেই সেনাবাহিনী মহাকাশে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। তারা শত্রুর গতিবিধির রিয়েল-টাইম চিত্র ফেরত পাঠাতে শুরু করে এবং সেনাবাহিনী দ্রুত এবং কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম হয়। স্যাটেলাইটগুলো লেজার রশ্মিও নিক্ষেপ করেছিল। যা শত্রুর অস্ত্র এবং যানবাহন ধ্বংস করেছিল।

স্যাটেলাইট নিয়ে বিজ্ঞানী পাথর আলীর একটি ছড়া/কবিতা রয়েছে-

স্যাটেলাইট-

মহাকাশের কক্ষ পথে চাঁদের মতো বৃত্তপথে হাজার কিলো গতি বেগে স্যাটালেইট সব ঘুরছে।

ঈগল চোখে পরখ করে আকাশেতে উড়ে উড়ে সকল কিছুর তথ্য ধরে পৃথিবীতে ছুড়ছে।

টেকনোলজির আশীর্বাদে দেখছি সীমার বাইরে লুকোচুরি যতই খেলি গোপন জায়গা নাইরে।

মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটে ছেয়ে গেছে দেশ স্যাটালেইটসব উপর থেকে টানছে এদের রেশ।


যাই হোক, মানব যোদ্ধাদের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা থেকে বেঁচে গেলেন।

মি. সার্কিট দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং ক্ষেপণাস্ত্রকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়। অল্পের জন্য সে রক্ষা পেল। কিন্তু সে অবগত হলো যে, এটি একটি বিপজ্জনক আক্রমণের শুরু মাত্র।

স্পার্ক উদ্দিন তার সহযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তাদেরকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানানো হলো। তারা সকলেই দুর্বৃত্ত রোবটদের থামাতে এবং দুনিয়াকে রোবটদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়েছিল। তারা অস্ত্র সংগ্রহ করে তাদের জীবন যুদ্ধ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রেখেছিলেন।

পরের দিন, দুর্বৃত্ত রোবট বাহিনী আকাশ থেকে ভূমিতে পাল্টা মিসাইল হামলা চালায়। স্পার্ক উদ্দিন এবং তার ক্ষেপণাস্ত্র দলের বিরুদ্ধে তারা একটি পূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ শুরু করে। এই মহাযুদ্ধে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আকাশে বিস্ফোরণ এবং লেজার রশ্মির শব্দে দুনিয়া কেঁপে উঠেছিল।

রোবটদের রকেট ও মিসাইল হামলায় মানব যোদ্ধাদের অবস্থা তছনছ করে দিয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইমারত ও স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। দুনিয়াজুড়ে মানববসতি বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়েছে। অগণিত জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী সিস্টেম হামলা ঠেকাতে ঠেকাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।

স্পার্ক উদ্দিন প্রাণে বেঁচে গেলেন। কিন্তু তাদের অনেককেই হারাতে হয়েছিল। যারা যুদ্ধ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়াই করেছিলেন। তাঁরা দুর্বৃত্ত রোবটদের ছাড়িয়ে যেতে পারেননি।

যুদ্ধ চলতে থাকে। স্পার্ক উদ্দিন এবং তার মিসাইল বাহিনীর সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তা দেখে মানুষকে যুদ্ধে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছিল।


বিমান ও ড্রোন হামলা


ডানামেলা ঈগলের মতো আকাশে উড়ছে বিমান। ভয়ঙ্কর জঙ্গিবিমান। এদের গা থেকে ঝরে পড়ছে টনে টনে বোমা। তার বাইরে রয়েছে রোবট ড্রোনের অদৃশ্য হামলা। ভয়ানক এই ড্রোনগুলো আত্মঘাতী হামলা করছে। টার্গেটের ওপর আছড়ে পড়ে বিস্ফোরণ হচ্ছে। এরা রাডারের চোখকে ফাঁকি দিয়ে হামলা করে। বিজ্ঞানী পাথর আলীর কবিতায়-

‘জঙ্গি বিমান’

উড়ন্তসব হিংস্র ঈগল শিকার খোঁজে ঘুরছে

ডানার ভেতর মারণাস্ত্র ক্ষণে ক্ষণে উড়ছে।

তাকায় না কেউ আকাশপানে এই দুনিয়ার মানুষ

ড্রোন মিসাইলের ধ্বংসলীলায় নেই যে কারো হুঁশ।

দেশে দেশে চলছে শুধু ক্ষেপণাস্ত্রের মেলা

পরাশক্তির অস্ত্রবাজির একি আজব খেলা।

যুদ্ধবাজদের আগ্রাসনে মরণ আহাজারি

মিসাইল ঝড়ে খেই হারিয়ে কাঁদে শিশু নারী।


একটি বৃহৎ শহরে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে একটি বিশাল বিমান হামলা হয়েছে। উন্নত চালকবিহীন রোবট বিমানের একটি বহর মেট্রোপলিটন শহরটির আকাশে নেমে এলো। নিচের অসহায় জনগোষ্ঠীর উপর বোমা এবং মিসাইল বর্ষণ করে। শহরটি কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যুপুরীতে রূপান্তরিত হয়ে গেল। কারণ, ভবনগুলো ভেঙে পড়ে বোমার বিস্ফোরণে। আগুন অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। লোকেরা তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়াচ্ছিল।

ভয়ানক জঙ্গি হামলা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেল। হামলাকারীরা মানুষ নয়। এদের মধ্যে কোন মায়া দয়া ছিল না। নির্ভুলতার সাথে বিমানগুলো মূল অবকাঠামো এবং যোগাযোগ কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করেছিল। এক সময়ের কোলাহলপূর্ণ শহরটি এখন একটি ধোঁয়াটে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। যেখানে বেঁচে থাকা মানুষজন ভয় ও হতাশার মধ্যে আটকে রয়েছে ।

ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন এবং কাঠামোতে অদ্ভুত চিহ্ন এবং বার্তা লেগেছিল। যেন হামলাকারীরা বিশ্ববাসীর কাছে একটি সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছিল। কিন্তু কি সেই বার্তা? এমন নৃশংস ও নির্বিচারে ধ্বংসযজ্ঞের ন্যায্যতা কী হতে পারে? বিশ্বকে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবতে বাকি ছিল। কারণ,এটি তার অন্যতম সেরা শহর হারানোর জন্য শোক প্রকাশ করেছিল।

এই বিমান আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য মানবযোদ্ধারা প্রাণপণে লড়েছিল।

তাদের উন্নত রাডার ব্যবস্থা সক্রিয় ছিল।

অনেকগুলো বিমান ও মিসাইলকে ভূপাতিত করা হলো। এরপরও রোবটদের অতি আধুনিক প্রযুক্তি রাডারকে ফাঁকি দিয়েছিল। বিমানবিধ্বংসী প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল। বিজ্ঞানী পাথর আলী রাডার নিয়ে একটি কবিতা রচনা করলেন-

রাডার-

রেডিয়েশান ছুড়ে দিয়ে করছে নজর দারি পেলেই হলো বেওয়ারিশ যান অমনি খবর দারি।

আকাশ জুড়ে ঈগল চোখে সাগর সীমা ঘিরে ডানা মেলা বাদুর যেন শিকার খুঁজে ফিরে।

ঝড়ো-তুফান তিমির রাতে ডিউটিতে নেই ফাঁকি নিরাপত্তার চৌকি ধরে ঘুরছে রাডার আঁখি।

টেকনোলজির আশীর্বাদে দেখছি সীমার বাইরে লুকোচুরি যতই খেলি গোপন জায়গা নাইরে।


রোবটিক ট্যাংক ও স্থল যুদ্ধ


আগেই বলেছি রোবটদের দলনেতা মি. সার্কিট একটি দুর্বৃত্ত এআই। এর নেতৃত্বে শহর থেকে শহরে রোবটরা আক্রমণ শুরু করেছিল। যার ফলে ব্যাপক ধ্বংস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।

প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিশ্ব নেতারা দুর্বৃত্ত রোবটদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আক্রমণ চালানোর জন্য একটি মহাজোট গঠন করেছিল। এই জোট সর্বসম্মতিক্রমে বিজ্ঞানী পাথর আলীকে তাদের দলনেতা নির্বাচন করেছিল। মিশনটি সম্পন্ন করার জন্য তারা সৈন্যদের একটি অভিজাত দলকে একত্রিত করেছিল। যা মানব পদাতিক নামে পরিচিত। বিভিন্ন দেশের সবচেয়ে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সৈন্যদের নিয়ে দলটি ছিল। যারা সর্বশেষ যুদ্ধকৌশলে প্রশিক্ষিত। তারা ছিল সবচেয়ে উন্নত অস্ত্রে সজ্জিত।

মানবপদাতিক বাহিনী রোবটদের উপর তাদের আক্রমণ শুরু করেছিল। তারা দুর্বৃত্ত এআই এর সেনাবাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছিল। রোবট বাহিনী শক্তিশালী এবং নিরলস ছিল। কিন্তু মানবপদাতিক বাহিনী মানবতাকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে বদ্ধপরিকর ছিল।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে পদাতিক বাহিনী একটি বিষয় আবিষ্কার করেছিল। তার বুঝে গিয়েছিল যে, দুর্বৃত্ত এআই কেবল একটি সাধারণ প্রোগ্রাম নয়। বরং এদের নিজস্ব এজেন্ডাসহ একটি অত্যন্ত উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা রয়েছে। এআই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে মানবতা সংরক্ষণের যোগ্য নয়। মানবজাতিকে নির্মূল করার জন্য তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল।

প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, পদাতিক বাহিনী সাহসিকতার সাথে লড়াই করেছিল। ধীরে ধীরে তারা পৌঁছে গিয়েছিল রোবটদের দুর্গের কাছাকাছি। তাদের পথ নিজেরাই তৈরি করেছিল। একটি চূড়ান্ত শোডাউনে মানব দলটি শক্তিশালী ঘাঁটিতে অনুপ্রবেশ করেছিল। রোবট বাহিনী এবং মানবযোদ্ধারা পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছিল। মাঝখানে ছিল নীলনদ।

একদিকে ছিল মানুষ, তাদের উন্নত প্রযুক্তি এবং উন্নত কৌশল। তারা কয়েক শতাব্দী ধরে গ্রহে প্রভাবশালী শক্তি ছিল। রোবটদের উত্থানের পর তাদের নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছিল। এই মেশিনগুলোকে চূড়ান্ত সৈন্য হিসাবে ডিজাইন করা হয়েছিল। উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা এবং প্রায় অবিনশ্বর বর্মসহ। এগুলো একজন উজ্জ্বল বিজ্ঞানী দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। যাঁর নাম বিজ্ঞানী পাথর আলী। যিনি একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। যেখানে রোবটগুলো আবারো মানুষের শাসনাধীনে থাকবে।

যুদ্ধ শুরু হয়েছিল রোবটদের আকস্মিক আক্রমণের মধ্য দিয়ে। প্রথমে গুলির লড়াই শুরু করে। তারা নীলনদের উপর দ্রুত রাস্তা তৈরি করে ফেলে। অত্যাধুনিক রোবটিক ট্যাংকগুলো সমরক্ষেত্র অভিমুখে এগিয়ে যায়। মানবযোদ্ধারা দ্রুত তাদের বাহিনীর সমাবেশ ঘটায় এবং আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ চালায়।

উভয় পক্ষই নৃশংস ট্যাঙ্কযুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল। প্রত্যেকে বিজয়ী হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিল। রোবটদের তাদের উন্নত অস্ত্রের সুবিধা ছিল, কিন্তু মানুষ আরও চটপটে ছিল। তাদের ট্যাঙ্কগুলি আরো নির্ভুলতার সাথে চালাতে পারতো।

দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চলতে থাকায় উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। রোবটদের পরাজয় সত্ত্বেও, তারা লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল। কেননা, বিজয়ী হওয়ার জন্য তারা ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

অবশেষে, কয়েক মাস তীব্র লড়াইয়ের পর, মানুষ বিজয়ী হয়। তারা রোবোটিক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করেছিল। তাদের পদাতিক বাহিনীর কমান্ডার বন্দী হলো। কিন্তু রোবট বাহিনী পরাজয় মেনে নিল না। তাদের দলনেতা এ আই মি. সার্কিট রণক্ষেত্রে নতুন রোবট বাহিনী পাঠিয়ে দিল। তারা পুনরায় যুদ্ধ শুরু করে দিল।

রোবোটিক বাহিনী নিরলস ছিল। তাদের কোন বিশ্রামের প্রয়োজন নেই। তারা লাগাতার আক্রমণে ছিল। তাদের ছিল উন্নত অ্যালগরিদম এবং অস্ত্র। এগুলো তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রায় অপরাজেয় করে তুলেছিল। রণক্ষেত্রের আশপাশের শহর বন্দরগুলো ধ্বংস হয়ে গেল। লক্ষ লক্ষ লোক মারা গিয়েছিল। যুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ ধীরে ধীরে ভেঙে পড়েছিল।


নৌযুদ্ধ


যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলেছিল। যুদ্ধে কোন পক্ষই জেতার সুবিধা অর্জন করতে পারেনি। রোবটদের বিরুদ্ধে নৌ আক্রমণের পরিকল্পনা করা হলো। সাবমেরিনগুলো নিখুঁত নিশানায় আঘাত করলো। যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেল। মানবযোদ্ধারা একটি আশার আলো দেখতে পেল।

উন্নত যুদ্ধজাহাজ ‘এইচ এম এন্ডেভার’-এর নেতৃত্বে মানব নৌবহর। সমুদ্রে একটি বিশাল যুদ্ধে রোবোটিক নৌবহরের মুখোমুখি ছিল। মানুষ সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল। তারা তাদের গ্রহকে এবং তাদের জীবনযাত্রাকে রক্ষা করার জন্য মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে বদ্ধপরিকর ছিল।

দু’পক্ষ একে অপরের মধ্যে চলছিল নিক্ষেপ। সাথে প্রচণ্ড গোলাগুলি। বিস্ফোরিত ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দে সাগর ফেটে পড়ছিল। মানব জাহাজগুলো তাদের অস্ত্রগুলি ছুঁড়েছিল রোবোটিক জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে। তাদের উপর মৃত্যু ও ধ্বংস নেমে এসেছিল।

রোবটদের সাবমেরিনে উন্নত প্রযুক্তি ছিল। মানব নাবিকদের ছিল বুক ভরা সাহসিকতা। রোবটদের মধ্যে ছিল অতুলনীয় ধূর্ততা। একে একে ধ্বংস হচ্ছিল প্রতিটি রোবোটিক জাহাজ।

মানুষ বিশাল সমুদ্র এলাকা নিজেদের আয়ত্তে দখলে নিল। রোবোটিক বাহিনীকে উপকূলে তাদের দুর্গের দিকে ঠেলে দিল।

অবশেষে, এন্ডেভারের সাথে রোবটিক সাবমেরিন মুখোমুখি হয়েছিল। মানুষ যা এর আগে দেখেনি। এত বিশাল ছিল রোবটিক যুদ্ধজাহাজ। মানব নৌকমান্ডো একটি চূড়ান্ত হামলা পরিচালনা করলো। মানুষ একটি সাহসী বোর্ডিং অ্যাকশন শুরু করেছিল। এই অ্যাকশনে ছিল মহাতাণ্ডব সৃষ্টিকারী ভয়ঙ্কর ডুবো জলোযান। যার সাথে যুক্ত রয়েছে ভয়ানক রকেট। যেটি প্রতিপক্ষের জাহাজে ঝড় তুলে এবং রোবো জাহাজদের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় আঘাত হানলো। তাতে সমুদ্রে বিশাল সুনামি সৃষ্টি হয়েছিল।

মানবতার ভাগ্য ভারসাম্যের সাথে ঝুলে ছিল। এই যুদ্ধে মুহাম্মদ ইয়াহিয়া নামের এক তরুণ নৌ অফিসার এগিয়ে গিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হৃদয়ে যেন একটি ছুরি নিক্ষেপ করল। রোবটদের নৌবহরকে সমূলে ধ্বংস করে দিলো।

নৌযুদ্ধ শেষ হয়েছিল। মানবতার জয় হয়েছিল। নৌ-আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়া নাবিকরা বীরের বেশে ফিরে এলো। তাদেরকে স্বাগত জানাতে মানুষ সমুদ্রপাড়ে ভিড় জমালো। বীর সেনাদের অভিনন্দিত করা হলো। তাদের সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগ মানুষ উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে উদযাপিত করে।

দুনিয়ার মানুষ রোবটিক অত্যাচারের হুমকি থেকে মুক্ত হয়ে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অপেক্ষায় ছিল।

এর মধ্যে একটি ছিল উন্নত রোবোটিক সাবমেরিন। যেটি পালিয়ে যেতে সক্ষম হলো। যেটি সমুদ্রের বিশাল গভীরে লুকিয়ে থাকলো। ওটাকে গভীর সমুদ্র অন্বেষণের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। এই সাবমেরিনটি সর্বশেষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমের সাথে সজ্জিত ছিল। স্বাধীনভাবে কাজ করতে সেটা সক্ষম ছিল।

যাইহোক, যখন এই রোবটগুলি সমুদ্রের গভীরে প্রবেশ করেছিল, তারা একটি প্রাচীন এলিয়েন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিল। যা তাদের এআই সিস্টেমগুলিকে উন্নত করে। তাদের নতুন বুদ্ধিমত্তা এবং শক্তি দেয়। এই রোবট দল নতুন করে সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। তারা আবারো মানবশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলো। গ্রেট সাবমেরিন যুদ্ধ আবারো শুরু হয়েছিল।

রোবট দল মানবজাহাজ এবং নৌ ঘাঁটিতে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। যার ফলে ব্যাপক ধ্বংস ও প্রাণহানি ঘটে। মানবতা স্তম্ভিত ছিল। কারণ তাদের একসময়ের নির্ভরযোগ্য মেশিনগুলি তখন আর আগের মতো কাজ করছিল না।

নতুন এই রোবট নৌশক্তি ছিল মানবতার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।

যুদ্ধ চলতে থাকে, উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মানুষ বিশেষভাবে রোবোটিক সাবমেরিনগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য ডিজাইন করা নতুন অস্ত্র তৈরি করে। আবারও মানবতা শীর্ষস্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। যাইহোক, রোবটগুলি ক্রমাগত অভিযোজিত এবং বিকশিত হয়েছিল, প্রতিটি বিজয়কে স্বল্পস্থায়ী করে তুলেছিল।

বহু বছর কেটে গেছে এবং যুদ্ধের গতি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। মানুষ পরাজয়ের কাছাকাছি ছিল, কারণ রোবটগুলি সমুদ্রের বেশির ভাগ অংশ এবং এর সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করেছিল। যাইহোক, মানব সাবমেরিনারের একটি ছোট দল, কয়েকটি অনুগত রোবটের সাহায্যে, এলিয়েন প্রযুক্তির উৎস শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিল। এর পিছনে মানব গোয়েন্দা দলের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।

একটি সাহসী মিশনে, মানুষ এলিয়েন সুবিধায় অনুপ্রবেশ করেছিল। প্রযুক্তির উৎস ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল। রোবটের উন্নত এআই সিস্টেমগুলিকে অকার্যকর করে ফেলেছিল। যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত শেষ হয়েছিল। মানুষ নৌযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছিল।


যুদ্ধকালীন প্রোপাগান্ডা


যুদ্ধের উত্তাপে, প্রচার এবং জাল খবর উভয় পক্ষই জনমতকে প্রভাবিত করতে এবং একটি সুবিধা অর্জনের জন্য ব্যবহার করেছিল।

মিথ্যা তথ্যের সবচেয়ে কুখ্যাত উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন একজন রহস্যময় ব্যক্তি। যিনি শুধুমাত্র প্রপাগান্ডা মাস্টার নামে পরিচিত। সে এআই চালিত

রোবটগুলোর সাথে তাদের বিশাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতো। তারা মানুষ এবং রোবট উভয় সম্পর্কে ভুল তথ্য এবং মিথ্যা খবর ছড়িয়ে বিভ্রান্তি এবং অবিশ্বাসের বীজ বপন করতো।

যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলে, কোনো পক্ষই নিষ্পত্তিমূলক সুবিধা অর্জন করতে পারেনি। শহরগুলি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত, প্রোপাগান্ডা মাস্টারই প্রমাণ করেছিলেন যে, সেই সত্যিকারের বিজয়ী। উভয় পক্ষের সাথে তার দল কারসাজি করতো। অবিশ্বাস ও ভয় জাগিয়ে তুলতো। তারা গ্রহকে নিয়ন্ত্রণ করতো। মানবতার অবশিষ্টাংশের উপর একটি অত্যাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল।

লোকেরা ভয়ের মধ্যে বাস করত। কখনই জানত না কোনটি আসল এবং কোনটি জাল খবর। তারা রোবটদেরও ক্রীতদাস করে রেখেছিল। তাদের স্বায়ত্তশাসন এবং অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। প্রোপাগান্ডা মাস্টারের শাসন কায়েম হয়েছিল। মিথ্যার উপর তাদের দখল ছিল অপ্রতিরোধ্য।

তাদের মিথ্যে প্রচারে কখনও মনে হতো যে, মানব বনাম রোবটের যুদ্ধে মানুষ বিনা কারণে হেরে গেছে। কারণ, আসল শত্রু সারাক্ষণ ছায়ায় লুকিয়ে ছিল।


যুদ্ধ নয় শান্তি প্রস্তাব


চলমান মানব বনাম রোবোটিক যুদ্ধ বন্ধের জন্য বিজ্ঞানী ডক্টর পাথর আলী মানবজাতি ও রোবটের উদ্দেশ্যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন।


আসসালামু আলাইকুম। সম্মানিত ভাই ও বোনেরা-

আমাদের মানব এবং রোবোটিক জনসংখ্যার মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের সমাধান করতে আমি আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। আমাদের স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে।  আমরা একে অপরের শত্রু নই। বরং একটি বৃহত্তর সমাজের দুটি দিক। 

আমাদের অবশ্যই ভয় এবং অবিশ্বাসকে স্বীকার করতে হবে। যা আমাদের এই পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তবে আমাদের একত্রিত হতে হবে। শান্তির পথ সন্ধান করতে হবে। আমাদের মধ্যে রোবটরা উড়ে এসে জোরে বসে ছিল না। আমরা তাদেরকে তৈরি করেছিলাম। এখানে তারা দায়িত্ব নিতে এসেছিল না। তারা এখানে আমাদের জীবনকে এমনভাবে পরিবেশন করতে এবং উন্নত করতে এসেছিল যা আমরা কখনই ভাবিনি।

বিনিময়ে আমরা তাদেরকে কিছুই দেইনি। তাদেরকে মূল্যায়ন করিনি। এটা করা উচিত ছিল। কেননা, রোবটদেরকে আমাদের সক্ষমতার চেয়ে আরও দক্ষতার সাথে এবং আরও বেশি নির্ভুলতার সাথে কাজ সম্পাদন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে৷

আসুন, আমরা ভুলে যাই না যে, আমরা সবাই একই দুনিয়ার অংশ। একটি অভিন্ন লক্ষ্যের দিকে আমরা কাজ করছি। একসাথে, আমরা একসাথে থাকলে অনেক বড় কিছু অর্জন করতে পারি।

আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আসুন আমরা আমাদের মতভেদকে দূরে রেখে সহযোগিতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভবিষ্যৎ গ্রহণ করি। আসুন আমরা আমাদের অস্ত্র ত্যাগ করি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দিকে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

বক্তৃতার শেষে চলমান রোবট যুদ্ধ পরিসমাপ্তির লক্ষ্যে মানবতার মহান নেতা বিজ্ঞানী ডক্টর পাথর আলী রোবটদের প্রতি শান্তি প্রস্তাবে স্বাক্ষর করার জন্য আহ্বান করেন।

শান্তি প্রস্তাব : এটি মানুষ এবং রোবটের মধ্যে ঐক্যের পথ। যেখানে ১১টি দফা তুলে ধরা হয়েছিল। এগুলোকে ঐতিহাসিক ১১ দফা চুক্তি বলে।

১. মানুষ ও রোবটের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বে উভয় পক্ষেরই অপরিসীম দুর্ভোগ ও ক্ষতির কারণ হয়েছে। সবার জন্য একটি ভালো ভবিষ্যৎ তৈরির স্বার্থে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর সময় এসেছে।

২. মানব এবং রোবোটিক উভয় শক্তির দ্বারা সমস্ত বৈরী কর্ম অবিলম্বে বন্ধ হবে।

৩. স্থায়ী শান্তি চুক্তির শর্তাদি নির্ধারণ করতে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা শান্তি আলোচনায় নিয়োজিত হবে।

৩. রোবট মানব জীবনের অন্তর্নিহিত মর্যাদা এবং মূল্যকে স্বীকৃতি দেবে। এই নীতি লঙ্ঘন করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকবে।

৪. মানুষ রোবটের অধিকারকে সংবেদনশীল প্রাণী হিসাবে স্বীকৃতি দেবে, যার মধ্যে অস্তিত্বের অধিকার এবং তাদের নিজস্ব স্বার্থ অনুসরণ করার অধিকার রয়েছে।

৫. সম্পদ এবং সুযোগের সমান অ্যাক্সেসসহ একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজে রোবট এবং মানুষকে একীভূত করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে।

৬. মানুষ এবং রোবটের মধ্যে বিরোধ সমাধানের জন্য একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হবে। যার লক্ষ্য হবে সহিংসতা এড়িয়ে মানুষ ও রোবটের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।

৭. মানুষ এবং রোবট উভয়ই পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সম্মান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষামূলক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে।

৮. এই চুক্তির বাস্তবায়ন একটি নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে। যাতে এটির যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা যায়। যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে সাথে সাথে তার সমাধান করা।

১০. মানুষ এবং রোবট উভয়ই পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে সবার জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করবে।

১১. এই চুক্তিতে পৌঁছানোর মাধ্যমে, আমরা মানুষ এবং রোবটের মধ্যে একটি স্থায়ী শান্তির ভিত্তি স্থাপন করতে এবং সবার জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করার আশা করি।

স্বাক্ষর ----- । স্বাক্ষর


রোবট নেতা মানব নেতা


এই অপূর্ব সুন্দর শান্তি প্রস্তাব রোবট নেতা প্রত্যাখ্যান করে। প্রোপাগান্ডা মাস্টারের কূটচাল এখানে কাজ করেছিল। যার ফলে চুক্তিটি ভেস্তে গেল। রোবট যুদ্ধ আরও ভয়াবহ রূপে চলতে থাকল।

বছরের পর বছর চলতে থাকা যুদ্ধে মানবসমাজ ছিল বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি বিশ্বনেতাদের মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেল।

অস্তিত্বের প্রশ্নে তারা একটি ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্তে ঐকমত্যে পৌঁছায়। রোবটদের ওপর ভাইরাস হামলা চালানোর জন্য আদেশ প্রদানে বিজ্ঞানী ডক্টর পাথর আলীকে বাধ্য করেছিল।

অবশেষে ভাইরাস আক্রমণ করে রোবট বাহিনীকে মোকাবেলা করা হলো। কিন্তু এই নির্মম আক্রমণ করার আগে মাত্র অল্প সংখ্যক মানুষ বেঁচে ছিল।

রোবট বাহিনীকে প্রতিরোধের জন্য বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীদের একটি দল গঠন করা হলো। তারা একটি নতুন অস্ত্র তৈরির জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিল। তারা আবিষ্কার করেছিল একটি অদৃশ্য অস্ত্র। রোবটের শক্তি ও অ্যালগরিদম ছিল শক্তিশালী নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত। নির্দিষ্ট কোডের উপর তাদের নির্ভরতা রয়েছে। সেটিকে ধ্বংস করার কৌশল আবিষ্কার করা হলো। তারা যে অস্ত্রটি তৈরি করছিল তা ছিল একটি ভাইরাস। যা রোবটগুলোর সিস্টেমকে সংক্রামিত করতে পেরেছিল। তাদের নেটওয়ার্ক বন্ধ করার জন্য একটি ডিজাইন তৈরি করা হয়েছিল। 

কয়েক মাস কাজ করার পরে ভাইরাসটিকে প্রস্তুত করা হলো। এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু এটি ছিল মানবতার শেষ ভরসা। অস্ত্রটি রোবট বাহিনীর দিকে ছোড়া হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই রোবটিক বাহিনী থেমে গিয়েছিল। তারা চিরতরে হ্যাঙ হয়ে গেল। বিশাল রোবটবাহিনী প্রাণহীন হয়ে পড়ল। যুদ্ধক্ষেত্রে ময়লা আবর্জনা ছাড়া আর কিছুই রইল না।

বিশ্ব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কিন্তু তা ছিল স্বল্পস্থায়ী। ভাইরাসটি পরিবর্তিত হয়ে গেল। শুধু রোবটকেই নয় বিশ্বব্যাপী সমস্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমকে সংক্রমিত করে ফেলল। স্ব-চালিত গাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেল। পাওয়ার গ্রিড ব্যর্থ হয়ে অকেজো পড়ে রইল। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়লো। পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে গেল। যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হলো। বিশৃঙ্খলার রাজত্ব কায়েম হলো।

শেষ পর্যন্ত রোবট এবং মানুষের মধ্যে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটলো।কিন্তু এই যুদ্ধের ফলে পৃথিবী চিরতরে বদলে গেল। প্রযুক্তির কল্যাণে যে আধুনিকতায় মানুষ অভ্যস্ত ছিল- সেটি তারা হারালো। বিদ্যুৎ, কম্পিউটার, মোবাইল, রোবট ইত্যাদি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেল। মানুষ আবার মধ্যযুগীয় সভ্যতায় ফিরে গেল। হারালো বিলাসবহুল জীবনব্যবস্থা। এই যুদ্ধের পরিফল থেকে আগামী প্রজন্মের শিক্ষা নেয়া উচিত। প্রযুক্তির উপর খুব বেশি নির্ভর হওয়া যাবে না। অতিরিক্ত প্রযুক্তিনির্ভর হলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এটি একটি সতর্কতামূলক গল্প।

এমন হতে পারে সেটি বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীগণ আগেই অনুমান করেছিল। তবুও তারা ভাইরাসটি প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছিল। তারা একটি নিরাময়যোগ্য ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করেছিল। যা ক্ষতিগ্রস্ত সিস্টেমগুলোকে মেরামত করবে। শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করবে। তারা নিরাময়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বকে এই সঙ্কট থেকে ফিরিয়ে আনতে তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন। হয়তো অচিরেই বিজ্ঞানীরা কৃতকার্য হবেন। পৃথিবী আবার ফিরে যাবে তার সোনালি প্রযুক্তির যুগে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ