লুবনা
তোমাদের গল্প মে ২০১৫
মুনাওয়ার শাহাদাত#
লুবনা এ বছর পাঁচে পা দিয়েছে। লুবনারা দুই বোন। লুবনা বড় আর তাজমিন ছোট। লুবনার আব্বু শাহজাহান সাহেব প্রবাসী। আর আম্মু খালেদা আক্তার গৃহিণী। লুবনাকে তার দাদা মফিজুর রহমান সাহেব এ বছর বাড়ির পাশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করে দিয়েছেন। সে এখন নিয়মিত সকাল ৯টায় বিদ্যালয়ে যায় আর ফেরে দুপুর ১২টায়। তবে প্রথম প্রথম তার সাথে প্রতিদিন দাদাকে বিদ্যালয়ে গিয়ে পাশে বসে থাকতে হতো। লুবনার দাদারও যেহেতু তখন নাতনীদের সাথে খেলা ছাড়া কোনো কাজ ছিল না, তাই তিনি খুব আগ্রহের সাথে তাকে বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতেন আবার ছুটি হলে বাড়ি নিয়ে আসতেন। পথে নাতনীকে পটেটো চিপস, লজেন্স, আচার ইত্যাদি কিনে দিতেন। তিনিও জীবনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সময় প্রবাসে কাটিয়েছেন। এখন ছেলেরা টাকা ইনকাম করে আর তিনি বাড়িঘর, জায়গা-জমি দেখাশুনা করেন এবং নাতনীদের সাথে সময় কাটান। তবে এখন লুবনা, রাজিব, ইমা ও ফাইজাসহ অন্যান্য স্কুলপড়ুয়া বন্ধুদের সাথে একাই বিদ্যালয়ে চলে যায়। তখন লুবনার বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। সেদিন ছিল গণিত পরীক্ষা। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরেই লুবনা পরীক্ষায় লেখার বোর্ডটাকে বিছানার ওপর ফেলে দিয়ে মুখ কালো করে সোফার ওপর বসে পড়লো। লুবনার আম্মু খালেদা আক্তার মেয়ের এমন ভাব দেখে বুঝে গেলেন, নিশ্চয়ই আজ ওর পরীক্ষা ভালো হয়নি। কারণ লুবনার পরীক্ষা যেদিন খারাপ হবে সেদিন সে অন্য দিনের মতো দৌড়ে এসে বোনকে আদর করবে না। আম্মু আজকে ফুল আনসার করছি বলবে না। আম্মুর বকার ভয়ে মুখ ভার করে বসে থাকবে। খালেদা আক্তার লুবনার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে বললেন; আম্মু তুমি আজ পরীক্ষায় কত মার্কসের আনসার করেছ। লুবনা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, আম্মু! আজ আমি দশ নাম্বার আনসার কম করেছি! একটা অঙ্ক পারিনি! ম্যাডামরা আমাকে বুঝিয়ে দেননি ! তুমি ম্যাডামদেরকে আমাদের বাসায় আসলে আর নাশতা দিও না। ওরা একদম ভালো না, সবাই পচা! আম্মু বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে ! এখন চলো হরলিকস খাবে! লুবনা বলল, না আম্মু, আমি আজ থেকে আর হরলিকস খাবো না! হরলিকস খেয়ে কী লাভ? আমি তো পরীক্ষায় ফুল আনসার দিতে পারি না! আর লুবনা এ কথা বলে দৌড়ে দাদার রুমে চলে গেল! এ দিকে খালেদা আক্তার একটুখানি মেয়ের মুখে এমন মুরুব্বিয়ানা কথা শুনে হাসতে হাসতে হরলিকসের গ্লাস হাতে তার পিছু পিছু লুবনার দাদুর রুমের দিকে পা বাড়ালেন...।
আরও পড়ুন...