শহর দর্শন

শহর দর্শন

তোমাদের গল্প মার্চ ২০১৫

মো: ইউসুফ হোসেন#

দিনটি ছিলো শুক্রবার। গ্রীষ্মের ছুটিতে আমরা তিন বন্ধু গিয়েছিলাম শহরে। আমি, আহমাদ বসির ও আল মাহমুদ। আমাদের বাড়ি ছিল পল্লীগ্রামে। গ্রামের শেষ প্রান্তে আমাদের বাড়ি। আমার বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট একটা নদী। নদীর ওপর ঘন এক বন। তিন বন্ধু পায়ে হেঁটে চললাম অনেক দূর। যেখান থেকে গাড়ি ছাড়ে সেখান থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে বসে রইলাম। কখন গাড়ি ছাড়ে। তারপর এক লোকের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, শহরের গাড়ি ছাড়ে কোনখান থেকে? সে বললো, হাতের ডান দিক থেকে একটু সামনে। সেখানে গেলাম গাড়ি এলো। সেই গাড়িতে উঠলাম তখন সময় সাড়ে ৯টা। গাড়ি ছাড়লো, আমরা আনন্দে উৎফুল্ল। হঠাৎ একটা ধাক্কা খেল গাড়িটি। আহমাদ বসির খুব ভয় পেলো। বসির বলে, এই ড্রাইভার আস্তে চালান, আমার ভয় করছে। পাশ থেকে এক লোক বলল, এই ছেলে চুপ থাক। বসির তার সিটে জোরে চেপে বসল। এসে পৌঁছালাম শহরে, তখন রাত ১০টা ২০ মিনিট। তখন আমরা খুব চিন্তিত; রাতে কোথায় থাকব। আমরা তো কোথাও চিনি না। হঠাৎ মনে পড়লো আমার ফুফাতো ভাই আছে এখানে। আমরা সেখানে চলে এলাম। রাত কাটালাম অনেক আনন্দের মধ্যে। সকালে সূর্য উঠলো, চার দিকে আলো ছড়িয়ে পড়লো। আমরা খুব সকালে উঠবো। আল মাহমুদ ও আহমদ বসির রাগ করতে শুরু করলো কারণ গ্রামে থাকে, তারা খুব সকালে ওঠে, তাদের তো এত দেরিতে ওঠার কোন অভ্যাস নেই। সেখান থেকে হাত মুখ ধুয়ে কিছু না খেয়ে রাগ করে চলে এলাম। এসে একটা হোটেলে নাস্তা করলাম। শহরে খুব জঞ্জাট আর উঁচু উঁচু দালান, দোকানপাট। দেখে আহমাদ বসির অবাক। সামনে পড়লো একটা পঁচিশ তলা ভবন। আহমাদ বসির বলেÑ ওমা এতো উঁচু ভবন কখনও দেখিনি। এটা বানাতে কম পক্ষে দশ হাজার টাকা  লেগেছে। আল মাহমুদ বলেÑ দুর বোকা বিশ হাজার টাকা  লেগেছে। আমি বললাম, এটা বানাতে অনেক কোটি টাকা  লেগেছে। আহমাদ বসির শুধু তাকিয়ে থাকে। আল মাহমুদ বলল, এই বেটা চল, ভবন দেখতে দেখতে  বেলা আড়াইটা হয়ে গেল। সামনে পড়লো বিরাট জ্যাম। বাস, ট্রাক, রিকশা, অটোরিকশা, মাইক্রো ইত্যাদি। এই জ্যাম দেখতে দেখতে রাত ৯টা। তারপর একটি হোটেলে কোন রকম একটা দশ তলায় রুম ভাড়া করলাম। সবাই জলদি ঘুমিয়ে পড়লাম। আল মাহমুদ হঠাৎ চিৎকার করে উঠল, ভবনতো ভেঙে পড়ছে। আমাকে বাঁচাও, কে কোথায় আছ আমাকে বাঁচাও। আসলে তা নয়, মাহমুদ বলে আমি আর ঘুমাবো না। সকাল হলে হাত-মুখ ধুয়ে বাইরে বের হলাম। নাস্তা করে চললাম চিড়িয়াখানার দিকে। আমি বললাম, আমাদের পাশ দিয়ে যে ঘন বন, এর মধ্যে রয়েছে যেমন বাঘমামা, বানর, হরিণ, ইত্যাদি। আহমাদ বসির শুধু বলে, সেই ভবন কোথায়? আমি বললাম আগে দেখতে থাকো। এগুলো দেখতে দেখতে রাত অনেক হলে রুমে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। আহমাদ বসির হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো বাঘ, বাঘ, আমাকে খেয়ে ফেলছে, তখন সবাই কেঁপে উঠলাম। আমরা কেউ ঘুমালাম না। সকাল হলে বসির বলল, চল ঐ ভবনের দিকে। সবাই চললাম সে ভবন দেখতে। আহমাদ বসির বলে, দেখিতো কত তলা। সে গুনতে শুরু করলো। গুনতে গুনতে মাথা ঘুরে গেলো। প্রথমবার বলে ৩০তলা, তার পর ২৯তলা, আসলে তো ভবন পঁচিশ তলা। এরকম করতে করতে দুপুর ১২টা ২০ মিনিট। তারপর এক হোটেলে খেতে বসলাম। তখন খাওয়া শুরু না করে শুধু গল্প করেÑ ঐ শহরে এত মানুষ কেন। এত মানুষ কোথা থেকে আসছে, আমাদের মতো গ্রামে তাদের কোনো বাড়ি নেই? এত গাড়ি কে তৈরি করেছে। আবার উঁচু উঁচু কী যেনো। আমি বললাম টাওয়ার। এগুলো থেকে মোবাইলের কথা নেটওয়ার্কে সাপ্লাই করে। তখন মাহমুদ বলে, ও তাই। তাই এগুলোকে বানিয়েছে আমাদের মত মানুষ। আমি বললাম তারগুলো কি গরু বানিয়েছে? গল্প স্বল্প করতে করতে খাওয়া শেষে তারপরে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে এলাম।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ