শেরেবাংলা

শেরেবাংলা

বিশেষ রচনা নভেম্বর ২০১২

ফররুখ আহমদ

শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ জাতীয় নেতার প্রতি কবি ফররুখ আহমদের ছিল প্রগাঢ় শ্রদ্ধা। তাদের মধ্যে শেরেবাংলাই সম্ভবত কবিকে অধিকতর আপ্লুত করেছিলেন। এমনকি কবি শেরেবাংলাকে নিয়ে একখানা কাব্য প্রণয়নের ইচ্ছাও ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন শেরেবাংলার স্নেহধন্য ও কবিবন্ধু এস এম আজিজুল হক শাহজাহান। তিনি তাঁর বৃহদাকার গ্রন্থ ‘বাঙ্গালীর দীপশিখায়’ (দ্বিতীয় খণ্ড, প্রকাশ আশ্বিন, ১৪১০) ফররুখ আহমদের জবানীতে উল্লেখ করেছেন : ‘আমি শেরেবাংলার শতবর্ষকালীন জীবন নিয়ে কবিতায় শত গ্রীষ্মের দাহে নামে একটি পুস্তক রচনা করতে চাই। ...’ (পৃষ্ঠা : ১৪৭৩। আর সেই শ্রদ্ধাবোধ থেকেই প্রিয় নেতার জীবনালেখ্যের একটি ঘটনা অবলম্বনে ফররুখ আহমদ লেখেন ‘শেরেবাংলা’ শীর্ষক ছোটদের উপযোগী এ লেখাটি। গেল শতকের ষাটের দশকে লেখা ‘শেরেবাংলা’ এই প্রথমবারের মতো প্রকাশিত হলো। - আহমদ আখতার

আমাদের জনপ্রিয় নেতা ফজলুল হক সাহেবকে বলা হতো শেরেবাংলা। শেরেবাংলা মানে বাংলার বাঘ। বাংলার বাঘ দুনিয়ার সবচাইতে বড় বাঘ। তার যেমন গায়ের জোর, তেমন বুকের সাহস। শেরেবাংলার সাহস ছিল বাঘের মতো। এমনকি বাঘের চাইতেও বেশি। এখন তাঁর সাহসের একটা ঘটনা বলছি। কিসসা নয়, এটা সত্য ঘটনা। আমাদের নেতা শেরেবাংলা সব মানুষকেই ভালবাসতেন। স্বজাতির জন্য ছিল তাঁর বুকভরা দরদ। তখন পাক-ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ-রাজ কায়েম ছিল। ইংরেজরা মুসলমানদের ওপর নানা রকম জুলুম চালাত। শেরেবাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক ছিলেন একজন খাঁটি মুসলমান। মুসলমানদের ওপর ইংরেজের জুলুম দেখে তিনি মনে খুব দুঃখ পেতেন। কারণ সব মুসলমান ভাই ভাই। এক ভাই আর এক ভাইয়ের দুঃখে দুঃখিত না হলে খাঁটি মুসলমান হতে পারে না। একদিন তিনি শুনতে পেলেন, মুসলমানদের গুলি করে মারার জন্য ইংরেজ সৈন্য কলকাতার বড় মসজিদের সামনে মেশিনগান পেতেছে। মেশিনগানের গুলিতে নিরীহ মুসলমানদের খুন করা হবেÑ এই কথা শুনতে পেয়ে শেরেবাংলা বাঘের মতো গর্জন করে উঠলেন। আর বললেন : শিগগির আমার গাড়ি নিয়ে এসো। কোনো মুসলমান মরার আগে আমি মরব। গাড়িতে উঠে ঝড়ের বেগে তিনি সেই মসজিদের সামনে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলেন, সত্যিই মুসলমানদের মারার জন্য অনেক ইংরেজ সৈন্য মসজিদের সামনে জমায়েত হয়েছে। আর মসজিদের ভেতরে অনেক মুসলমান চুপ করে বসে আছে। তাদের হাতে কোনো হাতিয়ার নেই। সামনে ইংরেজের মেশিনগান পাতা। এখনই গুলি ছোড়া হবে। শেরেবাংলা গাড়ির ভেতর থেকেই সব দেখতে পেলেন। তিনি আর সহ্য করতে পারলেন না, লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এলেন। আর মেশিনগানের সামনে চওড়া বুক পেতে দিয়ে বললেন : কোনো মুসলমানকে মারার আগে আমাকে গুলি করো। শেরেবাংলার সাহস দেখে তখন ইংরেজ সৈন্যরা ভয় পেয়ে গেল। তারা আর গুলি করতে সাহস করল না।

ইংরেজরা মুসলমানদের ওপর নানা রকম জুলুম চালাত। শেরেবাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হক ছিলেন একজন খাঁটি মুসলমান। মুসলমানদের ওপর ইংরেজের জুলুম দেখে তিনি মনে খুব দুঃখ পেতেন। কারণ সব মুসলমান ভাই ভাই। এক ভাই আর এক ভাইয়ের দুঃখে দুঃখিত না হলে খাঁটি মুসলমান হতে পারে না -শেরেবাংলা

[কবি পরিবারের সৌজন্যে প্রাপ্ত]
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ