শ্বেত মরুভূমি আল জাবির

শ্বেত মরুভূমি আল জাবির

প্রচ্ছদ রচনা অক্টোবর ২০২০

আফ্রিকার বিশাল সাহারা মরুভূমি একসময় সাগরের অতল গভীরে ছিল। ঐতিহাসিক যুগের পূর্বে সাহারা মরুভূমি যখন পানির নিচে ডুবে ছিল তখন তার একটি অংশে খড়িমাটি জমতে থাকে। যুগে যুগে আমাদের পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক গঠন পরিবর্তিত হয়েছে।

আস্তে আস্তে যখন এই জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে চলে আসে তখন জমে থাকা খড়িমাটির ভাণ্ডার সাহারা মরুভূমির মাঝে অপুর্ব সুন্দর শ্বেত মরুভূমির সৃষ্টি করে।

৮০ মিলিয়ন বছর আগে এটি সাহারা মরুভূমির অংশ হিসেবে সাগরের তলে ছিলো। এক সময় এই সাগর যখন শুকিয়ে যায় তখন এই ভূমি ওপরে উঠে আসে। এখানে গেলে সেইসব জীবাশ্মগুলোকে পাওয়া যায় যারা লক্ষ লক্ষ বছর আগে এই সাদা মরুভূমিকে গঠন করেছিলো।
এর নাম ফারাফ্রা যার অর্থ বিষণœতা। এটি সাহারা এল বেদদা নামেও পরিচিত। এটি ৯৮০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিস্তৃত পশ্চিম মিসরের দ্বিতীয় বৃহত্তম মরুভূমি। এটি দাকালা এবং বাহারিয়া মরূদ্যানের মাঝামাঝি অবস্থিত।

মিসরের ফারাফ্রা মরূদ্যানের এই অঞ্চলটি প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি। এই ফারাফ্রার প্রধান ভৌগোলিক আকর্ষণ হলো এর সাদা মরুভূমি। এটি ফারাফ্রা অঞ্চলের ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। তার পাশে রয়েছে ব্লাকডেসার্ট ও ক্রিস্টাল মাউন্টেইন।

এই মরুভূমিতে রয়েছে বড় বড় অদ্ভুত আকৃতির শিলার মত পাথর। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো এই অদ্ভুত আকৃতিগুলো আসলে পাথরের তৈরি না এগুলো খড়িমাটির তৈরি বড় বড় স্তূপ। হাজার হাজার বছর ধরে ক্ষয় হতে হতে এই অদ্ভুত আকার ধারণ করছে।

অদ্ভুত সুন্দর সাদা মরুভূমি ফারাফ্রা। মরুভূমিতে মাঝে মধ্যেই মরুঝড় হয়। সেই ঝড়ের কারণে এখানে কোথাও প্রকৃতির খেয়ালে ধবধবে সাদা আর ক্রিম রঙের ঢিবি তৈরি করেছে সারা চত্বর জুড়ে, যা দেখলে স্তম্ভিত হতে হয়। এগুলোকে বলে ভেন্টিফ্যাক্ট।

চুনাপাথরের আকরের তৈরি দানবীয় কাঠামোগুলো এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে মরুভূমি জুড়ে। এ ছাড়াও সেখানে রয়েছে অদ্ভুত সব চুনাপাথরের আকর। খোলা প্রান্তরে প্রকৃতির হাতে তৈরি এরকম দানবীয় কাঠামোগুলো আশ্চর্য এক ধাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বহু বছর। এই আকৃতিগুলোর আবার মনোহারী নামও দেওয়া হয়েছে। যেমন- মাশরুম, আইসক্রিম, কোন, টেন্ট, মনোলিথ ইত্যাদি।

এরকম দারুণ প্রকৃতির কারুকাজ দেখতে মিসরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শুরু করে ভিন দেশ থেকেও বহু পর্যটক এখানে ভ্রমণ করতে আসেন।

এখানকার হোয়াইট ডেজার্ট পার্কের বাইরের দিকটি অপেক্ষাকৃত পুরনো। এমনি সাধারণ গাড়িতেই সেখানে পৌঁছানো যায়। ঘোরাও যায়। কিন্তু ভিতরের দিকের নতুন মরুভূমিতে শুধু উট বা এসইউভি-তে করেই যেতে হয়। এ দিকটি আরো অসম্ভব সাদা। ফারাফ্রা এর সৌন্দর্যের জন্যই পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ