সঙ্কল্প

সঙ্কল্প

গল্প মার্চ ২০১৩

হেলাল আনওয়ার

বেশ ক’দিন ধরে বিয়াদের বায়না উঠেছে ঘুড়ি ওড়ানোর। আকাশের নীল ছুঁয়ে ঘুড়ি যখন এঁকে বেঁকে বাতাসে ভাসতে থাকে তখন ওর খুব আনন্দ হয়। ঘুড়ির লাটাই হাতে অপলকে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। খুশিতে আনমনে হাসতে থাকে সে। গত বছর রিয়াদের বাবা সাপ ঘুড়ি বানিয়ে দিয়েছিলেন। বাজার থেকে সুতোও এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা একটা সমাধান হলেও আরো সমস্যা যোগ হলো। আর তা হলো ভর দুপুরে সবার অগোচরে সে ঘুড়ি উড়াতে বের হয়। রিয়াদের বাবা নিষেধ করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তারপর একদিন এক দমকা বাতাসে তার ঘুড়ির সুতো ছিঁড়ে যায়। রিয়াদ পিছু পিছু দৌড়াতে থাকে। ঘুড়িও যেন পাগল করে ভোঁ দৌড়ে ব্যস্ত। এক সময় ঘুড়ি গাজীদের বাঁশ বাগানে এসে বেঁধে যায়। কিন্তু তা ছাড়িয়ে নেয়া রিয়াদের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। তাই অনেক কষ্ট করে ও ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছিল। এবারও যথানিয়মে তাকে ঘুড়ি বানিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আশফাক সাহেব কোনো মতে রাজি নন। রিয়াদকে প্রথমত ভালো করে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবু সে সিদ্ধান্তে অটল। ঘুড়ি তার চাই-ই চাই। সজিব, রুবেল ওরা মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছে। রিয়াদ পুবের জানালা খুলে এক মনে তাকিয়ে আছে মাঠের দিকে। ওর মন খুব খারাপ হয়ে যায়। ভাবে ওদের মতো যদি আমারও একটা ঘুড়ি থাকতো। আশফাক সাহেব পেছন থেকে ডাক দেনÑ রিয়াদ কী করো আব্বু? Ñ কিছু না। Ñ তবে একা একা? ঘ রিয়াদের চোখ ছল ছল করে ওঠে। আশফাক সাহেব জানেন কেন রিয়াদের মন খারাপ। তবুও কিছুই করার নেই। এবার তাকে ঘুড়ির বায়নাটা মন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। রিয়াদকে আদর করে কাছে ডাকেন তিনি। মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, আবু তোমার ঘুড়ির জন্য মন খারাপ? রিয়াদ মাথা নাড়ায়। আশফাক সাহেব রিয়াদকে কোলে নিয়ে গল্প শোনাতে থাকেন। মহৎ মানুষের গল্প। দিগি¦জয়ীদের গল্প। ?ণজনআদের গল্প। রিয়াদও বরাবর গল্প ফনতে ভালোবাসে। একসময় সে ঘুড়ির কথা মন থেকে হারিয়ে ফেলে। আবুুর মুখে চুমো দিয়ে বলে আমিও ঐসব মানুষের মতো হবো। আর কঙদিন পরেই ফাইনাল পরী?ার ফল প্রকাশিত হবে। সজিব, রপবেল ওরা আগের মতো রিয়াদকে কাছে পায় না। তাকে ডাকলে রিয়াদ নানান অজুহাত দেখায়। দিনের বেশির ভাগ সময় পড়াফনা করে কাটিয়ে দেয়। আশফাক সাহেব রিয়াদকে কাছে ডাকেন। আদর করে মাথায় হাত বুলান। রিয়াদ আবুুর কোলের ভেতর বসে পড়ে। আশফাক সাহেব আজ বেশ খুশি। ছেলের রেজাল্ট প্রকাশ হবে আগামীকাল। তার আগেই হেড স্যার জানিয়েছেন রিয়াদ এবার প্রথম হয়েছে। সন্তানের সাফল্যে প্রত্যেক বাবা-মা-ই অত্যন্ত খুশি হন। আশফাক সাহেব আর মারিয়া বেগমও তা থেকে আলাদা নন। সারা বাড়ি যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। রিয়াদ তখনও বুঝতে পারছে না এই খুশির সঠিক কারণ কী? ফজরের আজান হলো। আশফাক সাহেব ঘুম থেকে উঠে পড়েন। ওজু করেন। রিয়াদকে ডাকতে থাকেন। তারপর ছেলেকে সাথে নিয়ে মসজিদে যান। এটা আশফাক সাহেবের অভ্যাস। ভালো কাজ করার সময় সন্তানকে সাথে রাখেন। তিনি বলেন, ওর ধীরে ধীরে ভালো কাজ করার অভ্যাস গড়ে উঠবে। পিতা-মাতাকে ভালো কাজ করতে দেখলে সন্তানেও তা শিখবে। কেননা আলৎাহর রাসূলের বাণী হলো সন্তান তার পিতা-মাতার মতো হয়। ফজর নামাজ বাদ আশফাক সাহেব জিকির করেন। রিয়াদ কোলে বসে বসে তা ফনতে থাকে। মাঝে মাঝে বিড় বিড় করে আবুার সাথে সাথে সেও জিকির করে। রিয়াদের আজ রেজাল্ট হবে। আশফাক সাহেব তাড়াতাড়ি করে ত‹ুলে যাবার জন্য তৈরি হন। মারিয়া বেগম রিয়াদকে গুছিয়ে দেন। তারপর তারা বেরিয়ে পড়েন। রিয়াদ আবুার পেছন পেছন আনমনে হাঁটতে থাকে। আবুা বিষয়টা আঁচ করতে পারেন। সে নিফয়ই চিন্তিত। তাই রিয়াদকে ত^াভাবিক করার জন্য বলেন, আবুু তুমি কী চিন্তা করছো? ঘ না মানে। ঘ মানে তুমি রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা করছ তাই না? Ñ হ্যাঁ আব্বু। Ñ কেন তুমি ভালো পরীক্ষা দাওনি? Ñ তাতো দিয়েছি। Ñ তাহলে আর চিন্তা কিসের Ñ তারপরও। জানো আব্বু! তুিম যে ভালো পরীক্ষা দিয়েছো তাতেই আমি খুশি। Ñ যদি রেজাল্ট ভাল না হয়? Ñ তাতে কি? পড়েছ ভাল, লিখেছ ভাল ব্যাস! আর কী? যথাসময়ে স্কুলে অভিভাবকেরা উপস্থিত হলেন। হেড স্যার মাইকে সকলকে বসার আহ্বান জানালেন। আশফাক সাহেব মঞ্চের পাশেই একটা চেয়ার নিয়ে বসে পড়েন। হেড স্যার তার স্বাগত ভাষণে নিয়মমাফিক কিছু কথা বললেন। তিনি বললেন, পরীক্ষা কাউকে সম্মানিত করে আর কাউকে অপমানিত করে। আজকে যারা অকৃতকার্য হবে তারা যদি সামনের দিন দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে তাহলে আজকের ফেল তাদের জীবনে সফলতা আনতে পারে। রিয়াদের চোখে মুখে উৎকণ্ঠা! কী হয় কী জানি। হেড স্যারের কোন উপদেশ যেন ওর কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। তারপর হেড স্যার রেজাল্টের তালিকা নিয়ে একে একে পড়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। তালিকা নিয়ে এবার রেজাল্ট ঘোষণা শুরু হলো। প্রথমে ক্লাস ফোর থেকে উত্তীর্ণদের তালিকা পড়ে শোনাতে লাগলেন। রিয়াদের নাম সর্বপ্রথম ঘোষণা করলেন তিনি। শুধু যে প্রথম তা-ই নয়, সে এবার স্কুলে ফার্স্ট হওয়ারও গৌরব অর্জন করেছে। রিয়াদের চোখ ছল ছল করে ওঠে খুশিতে। রিয়াদ চোখ মুছতে মুছতে স্যারের কাছে গিয়ে সালাম দিল। তারপর পায়ে হাত দিয়ে স্যারকে সালাম করলো। আশফাক সাহেব রিয়াদকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আদর করে মুখে চুম দিলেন। বুকে জড়িয়ে আদর আর সেংহে ভরিয়ে দিলেন। এরপর রিয়াদকে নিয়ে তিনি বাড়ি ফেরার জন্য প্রত‘ত হলেন। আবুু আপনার কথাই ঠিক। কেউ কষ্ট করলে বিফল হয় না। সাধনা করলে সিদ্ধি লাভ হবেই। তা ঠিক। এই যেমন তুমি। যদি সজিব এবং অন্যদের মতো করে মাঠে মাঠে তুমি ঘুড়ি উড়িয়ে বেড়াতে তাহলে এমন রেজাল্ট করা স¤?ব হতো? Ñ না, তা কক্ষনো হতো না। Ñ পাশেই সজিব কাঁদছিল। ওর রেজাল্ট ভালো হয়নি, এবার ফেল করেছে সে। Ñ রিয়াদ সজিবের কাছে এগিয়ে গেল। মাথায় হাত দিয়ে বললো, দেখ সজিব, এভাবে আর লেখাপড়া বাদ দিয়ে দুষ্টুমি করবি না। এক মনে পড়লে রেজাল্ট তোরও ভালো হবে। যা, আজ থেকে পণ কর আর এমনটি করব না। জীবনে বড় হতে হবে, মানুষের মত মানুষ হতে হবে। আমরা দেশ, জাতি আর সমাজের বোঝা হবো না। বরং সম্পদ হয়ে থাকতে চাই।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ