সঠিক পথের খোঁজ  -আব্দুল মালেক

সঠিক পথের খোঁজ -আব্দুল মালেক

তোমাদের গল্প জুলাই ২০১৮

মাহমুদা ও মিম খুব ভালো বান্ধবী। সেই নার্সারি-কেজি স্কুল থেকেই দুইজনের মধ্যে অনেক মিল। কোন কারণে যদি মিম স্কুলে আসতে না পারতো! তাহলে মাহমুদার মন অনেক খারাপ থাকতো পুরোটা ক্লাস টাইম। মিমের বেলায়ও একই। বলা যায় দু’জনের এমন মিল ছিল যে একজনের টিফিনে আরেকজনের হয়ে যেত। তাদের মধ্যে রাগ অভিমান কখনো হয়েছে কিনা তা বলা বাহুল্য। তবে একবার স্কুলের আরেক ক্লাসমেট মিতু মাহমুদার ব্যাপারে মিমকে উল্টাপাল্টা বললে তাদের মধ্যে সামান্য অভিমান দেখা যায়! পরে দুই বান্ধবী ও মিতু একসাথে এই ব্যাপারে মুকাবিলা করলে মিতু যে ভুল ধারণা দিয়ে মিম-মাহমুদাদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করাতে চেয়েছিল তা প্রমাণ হলো। পরে মিতু মাফ চেয়ে নিলো উভয়ের কাছে। ভালো বন্ধুত্ব চলার সাথে সাথে কখন যে প্রাথমিক ও হাইস্কুল জীবনের সময় শেষ হয়ে গেল দুইজনেই বুঝে উঠতে পারলো না! এই বুঝি দু’জন দুদিকে যাওয়ার সময় হয়ে গেল! পরীক্ষা শেষে দু’জন একা একা থাকবে ভাবলেই চোখের কোণে পানি চলে আসে উভয়ের। না! প্রিয় মাহমুদাকে ছেড়ে আর থাকা যায় না। মিম নিজেই ঠিক করলো আজ বা কাল মাহমুদাদের বাসায় যাবেই। অফিস থেকে ফেরার পর মিম তার বাবার ফোন থেকে মাহমুদাদের বাসায় তার মায়ের নাম্বারে ফোন দিল। মাহমুদার মায়ের হাতে কাজ থাকায় মাহমুদাকেই ফোন ধরতে বললেন তার মা। ফোন রিসিভ করার পর ওপাশ থেকে মিমের কণ্ঠ শুনে যেন হাজার বছরের হারানো আনন্দ খুঁজে পেল। খোশগল্প করতে করতে ফোনেই কেটে গেল অনেক সময়। অন্যকিছু বলার আগেই মাহমুদা বলে উঠলো তোকে আমাদের বাসায় আসতেই হবে মিম। প্রিয় বান্ধবীর অনুরোধ নিশ্চয় না করার না। (কোন বন্ধুবান্ধব এমন সুযোগ হাত ছাড়া করে না নিশ্চয়!) সব শেষে পরদিন আসবে বলে ফোন রেখে দিল প্রিয় মিম। মাহমুদার এখন শুধু অপেক্ষার পালা কখন যে আসবে প্রিয় মিম আর তার মধ্যে শেয়ার করবে এই কয়দিনের জমে থাকা অনেক কথাবার্তা ও প্ল্যানিং। ভাবতেই কেন জানি আনন্দ লেগে উঠে। আহা... পরীক্ষা শেষ হওয়ার এক মাসের বেশি সময়ের পর দেখা হবে।

পরদিন বাবা অফিসে যাওয়ার পথে মিমকে নিয়ে বাসা থেকে অন্যদিনের চাইতে আগে বেরুলো। যাতে মিমকে মাহমুদার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আবার অফিসে জয়েন করতে পারে ঠিক সময়মত। ঘড়িতে যখন ঠিক সাড়ে নয়টা তখন দরজার কড়া নাড়ার শব্দ শুনে মাহমুদা মুহূর্তেই দরজা খুলে দেখলো প্রিয় মিম ও তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে।
মাহমুদা সালাম দিলেন ‘আসসালামু আলাইকুম’ কেমন আছেন আঙ্কেল?
ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। তুমি কেমন আছো!
জি, আঙ্কেল আল্লাহর মেহেরবানিতে ভালো আছি। আসুন.. ভেতরে এসে বসুন। এই বলে প্রিয় বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরলেন মাহমুদা। আহা কি আনন্দ দু’জনের মধ্যে। যেন হারিয়ে যাওয়া প্রিয় কিছু খুঁজে পেয়েছে দু’জনেই। এখন থেকে দু’জনেই জমিয়ে আড্ডা দিবে। চা-নাশতা শেষে অফিসে যাওয়ার জন্য বিদায় নিলো মিমের বাবা।
যাহোক, দু’জনের খুব আনন্দময় সময় কাটতে শুরু করলো। আড্ডা চলতে চলতে জোহরের নামাজের আজান দিয়ে দিল। মাহমুদা বললো চল মিম আমরা ফ্রেশ হয়ে জোহরের নামাজ আদায় করে নেই!
একটা কথা মনে রাখবে।-- ‘তারা দুই বান্ধবী’ই ইসলাম ধর্মের অনুসারী। মাহমুদা ও তার ফ্যামিলি ইসলাম ধর্মের নিয়ম কানুনগুলো ভালোভাবে আদায় করে। কিন্তু মিমের বেলায় দেখা যায় অন্যরকম! ইসলাম সম্পর্কে তাদের তেমন ধারণা নেই বললেই চলে। বাপ-দাদাদের থেকে জানা ইসলাম যেটুকু জানে মন চাইলে তাই পালন করে। ইসলামী শিক্ষার ব্যাপারে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই বললেই চলে। আসি আসল কথায়...
দুই বান্ধবী নামাজ শেষে খাওয়ার টেবিলে এলো। আজ মাহমুদার মা তাদের জন্য অনেক ভালো ভালো খাওয়ার রেসিপি তৈরি করল। সবাই মিলে একসাথে বসে দুপুরের খাওয়া শেষ করল। পরে দুই বান্ধবী মাহমুদার বেডরুমে গিয়ে বিশ্রাম নিলো। সময় ঘনিয়ে আসরের নামাজের সময় হলো অন্য সময়ের মত মাহমুদা আসর নামাজ আদায় করলো। এইভাবে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে নিলো মাহমুদারা। সর্বোপরি বলা যায় মাহমুদার ফ্যামিলি ধর্মের কর্ম পালনে নিয়মনীতির বাইরে যায় না। খোশগল্পের মধ্যে শেষ হলো দুই বান্ধবীর প্রথম দিন।

পরদিন ফজরের নামাজের আজান হলো। মাহমুদা উঠে ফজর নামাজ আদায় করলো। সূরা ইয়াসিন, দু'আ-ইসতেকফার পড়ে মহান রবের নিকট দু’হাত তুলে নিজের জন্য ও মানবজাতির শান্তির জন্য দু’আ করল। মিম নামাজ না পড়লেও শুয়ে শুয়ে প্রিয় মাহমুদার সব কিছু দেখলো ও মনোযোগী হয়ে অনুধাবন করলো। পরীক্ষা শেষ হওয়াতে মাহমুদার এখন কোন পাঠ্যসূচি নেই! নেই কোন রুটিন ফলো করার নির্দেশ। মায়ের নাস্তা বানাতে দেরি দেখে মাহমুদা বাবার দারসুল কুরআন নামক বইটি খুলে বসলো। (মাঝে মধ্যে বা অবসর সময়ে মাহমুদা ইসলামিক বই পড়ে। আর ওর ইসলামিক বই সবচেয়ে প্রিয়) এবং পড়তে লাগলো কুরআন মাজিদের ছোট্ট একটি সূরা। যার নাম সূরা আল আসর।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
‘আল আসর’- সময়ের কসম!
‘ইন্নাল ইনসানা-লাফি খুসরি’- নিশ্চয় সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত!
‘ইল্লাল্লাজিনা আমানু ওয়ামিলুস সালিহাতে অতায়া সাউবিল হাক্কি অতায়া সাউবিস সাবরি!’- কিন্তু তারা বাদে, যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে এবং পরস্পরকে সঠিক বা হকের পথে নির্দেশ দেয় এবং একে অপরকে ধৈর্য ধরার উপদেশ দেয়। (সূরা : আসর)
প্রিয় বান্ধবীর মুখ থেকে শুনা মহান রবের নিঃসৃত বাণী শুনে মিম থমকে উঠলো! আর বলতে লাগলো এই আমি কী শুনছি? মহান আল্লাহ তায়ালা তার সৃষ্টির সকল কিছুর কসম খেয়ে বলছেন সকল মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে! হ্যাঁ, আমিতো ক্ষতির মধ্যেই রয়েছি এবং আমার পরিবারের সকলেই মহান রবেব যেই ক্ষতির কথা বলেছেন সেই ক্ষতির মধ্যেই নিমজ্জিত রয়েছে! আখেরাত নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা কিছুই নেই, আমরা মিছে দুনিয়ার মিছে মায়ার মধ্যে পড়ে রয়েছি। মিমের মধ্যে রোজ হাশরের কঠিন সময়ে ভয়াবহ দিনের কথা মনে পড়ছে! চোখ দিয়ে ঝরঝর পানিও চলে আসছে মিমের! সূরা আসরে আল্লাহ্ তায়ালার এই বাণী মিমের ভেতরে এমনভাবে পরিবর্তন শুরু করলো যেন ইসলামের আলো নিয়ে তারা দুনিয়াতে আবার জন্মগ্রহণ করলো। এখন থেকে মিম ও তার পরিবারের সকলে নিয়মিত নামাজ আদায় করে। আর কেয়ামতের কঠিন দিনে মহান রবের দিদার পাওয়ার জন্য ইসলামের জ্ঞান অন্বেষণের পাশাপাশি তা বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে শুরু করলো। প্রিয় বান্ধবীর কাছে সঠিক পথের দিশা পেয়ে মিমের মন এখন অনেক উচ্ছ্বসিত। এখন থেকে প্রিয় মাহমুদাকে আরো কাছের ভাবতে শুরু করলো মিম। মাহমুদাকে ধন্যবাদ জানালো এবং বললো তোমার থেকে এই শিক্ষা আমি অন্যদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে চাই। আর মহান রবের নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে এই কাজ করতে চাই! এই বলে মিম প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করল। পেয়ে গেল সঠিক পথের খোঁজ...।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ