সততা   -মুস্তাহিদ মুর্কারমী

সততা -মুস্তাহিদ মুর্কারমী

তোমাদের গল্প ডিসেম্বর ২০১৫

মিষ্টি। ছোট একটি নাম, বাবা-মায়ের অতি আদরের সন্তান। একমাত্র সন্তান হওয়ায় বাবা-মায়ের সবটুকু আদর-স্নেহ, ভালোবাসা দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন মিষ্টিকে। মিষ্টির বাবা মনির সাহেব একজন সৎ সরকারি কর্মকর্তা। তাঁর সততার গল্প অফিসের সবার মুখে মুখে। তবে তার এ সততাকে সবাই যে সম্মান করে তা-ও কিন্তু নয়। সমালোচকও কম নয়। এটাও মনির সাহেব জানেন খুব ভালো করেই।
যা হোক, মনির সাহেব তাঁর একমাত্র সন্তান মিষ্টিকেও সততার শিক্ষা দিয়েই বড় করে তুলেছেন। স্ত্রী মালিহাও তাকে কম সাহায্য করেন না এ ব্যাপারে। গুটি গুটি পায়ে হাঁটতে শেখা মিষ্টি আজ বেশ বড়। তাই, বাবা-মায়ের ভাবনাও বেড়ে গেছে তাকে নিয়ে। অনেক ভেবে চিন্তে সাধ্যের মধ্যে খুব ভালো একটা স্কুলে ভর্তি করে দিলেন মেয়েকে। মিষ্টির জীবনের আরেকটা অধ্যায় শুরু হতে চলেছে আজ। স্কুলের প্রথম দিন। অন্যরকম একটা অনুভূতি নিয়ে বাবা-মায়ের সাথে স্কুলে চলল মিষ্টি।
এরই মধ্যে কেটে গেল বেশ কয়টি বছর। সব ক্লাসেই সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে মিষ্টি এখন ক্লাস ফাইভে। দেখতে দেখতে সমাপনী পরীক্ষার সময় এসে গেল, পূর্ণ প্রস্তুতিসহ পরীক্ষা খুব ভালোভাবে শেষ হলো। অপেক্ষার পালা শেষ করে অবশেষে ফলাফল হাতে পেয়ে বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক আনন্দ করলো মিষ্টি। জিপিএ ৫ পেয়েছে মেয়ে। বাবা-মাও ভীষণ খুশি। এটাই তো আশা করেছিলেন তাঁরা সন্তানের কাছ থেকে।
মনির সাহেব দুপুরে বাড়িতে খেতে এসে আর গেলেন না অফিসে। ফোনে ছুটি নিয়ে বাড়িতে স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে সময় কাটান। কিন্তু হঠাৎ ঘটে গেল এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। দরজায় নক করার শব্দ হলো। মনির সাহেব উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই চমকে গেলেন। দরজায় পুলিশ! আরো হতবাক হলেন যখন শুনলেন তাকে অফিস থেকে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আটক করতে এসেছে পুলিশ। হতবাক মনির সাহেব ভেবে পেলেন না যে, এটা কিভাবে সম্ভব! তবু কিছু করার নেই। হাতে হাতকড়া পরতেই হলো তাঁকে। যাওয়ার আগে স্ত্রী-কন্যাকে শুধু বলে গেলেন, ‘আমি কিছুই করিনি, কোনো অন্যায় করিনি’- বলেই ছলছল চোখে বেরিয়ে গেলেন পুলিশের সঙ্গে। এদিকে ঘটনার আকস্মিকতায় মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়লেন মা-মেয়ে। কেউ সান্ত্বনা দিল, কেউ উপহাস বিদ্রুপ করল। তবে মালিহা জানেন তাঁর স্বামী কোনো অন্যায় করতে পারেন না। দেখতে দেখতে অনেক বছর কেটে গেল। মালিহা অনেক চেষ্টা করেও স্বামীর জন্য কিছু করতে পারলেন না। অফিসের অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছেন, মনির সাহেবকে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে আটক করা হয়েছে। কিন্তু চাকরি যাওয়ার ভয়ে কেউ কোর্টে মুখ খুলতে রাজি হলো না।
বুকে আশা নিয়ে অপেক্ষায় আছেন মালিহা। অন্য দিকে একমাত্র মেয়েকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এসএসসি, এইচএসসি শেষ করিয়ে আইন বিষয়ে অনার্স করাচ্ছেন। অনার্স প্রায় শেষের পথে। মিষ্টি দৃঢ়সঙ্কল্প নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। ছোটবেলা থেকেই ও ভীষণ জিদি আর বাবার ওই ঘটনার পর ওর জিদটা আরো বেড়ে  গেছে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাবাকে কাছে পেল না। অনেক কষ্টে পড়ার টাকা ও সংসার চালাতে হয়েছে। মিষ্টি অনেক আইনজীবীর সাথে কথা বলেছে ওর বাবার মামলার ব্যাপারে। এরই মাঝে ওর ওকালতি পড়া শেষ হলো। ওকে ব্যারিস্টারি পড়তে হবে। তবে তার আগে বাবাকে মুক্ত করতে হবে। এ ব্যাপারে ওকিলদের সাথে কথা বলে সব তথ্য জোগাড় করে বাবাকে মুক্ত করে মায়ের সামনে এনে দু’জনকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দিলো।
‘বাবার সততা ও বাবার অবর্তমানে মা যে সাহসী ভূমিকা রেখে আমাকে আজ এই স্থানে দাঁড় করিয়েছেন তার জন্য তোমাদের দু’জনকে সালাম জানাচ্ছি। তোমাদের মতো বাবা-মার বড় প্রয়োজন, যারা সন্তাকে সততার শিক্ষা দেবেন আর পরম মমতায় ভবিষ্যতের যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্যে করবেন। মিষ্টির বাবা-মায়ের চোখ এত আনন্দের মাঝে আবারও ভিজে গেল। তবে এটা কোনো দুঃখের অশ্রু নয়; আনন্দ-অশ্রু।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ