সফলতার সোপান - আমিনুল ইসলাম ফারুক

সফলতার সোপান - আমিনুল ইসলাম ফারুক

ক্যারিয়ার গাইডলাইন ডিসেম্বর ২০১৯

সফলতার সোপান - আমিনুল ইসলাম ফারুক১. আকাঙ্ক্ষা  যোগ্যতার পরীক্ষা আগে নয়, আগে আকাঙ্ক্ষা। সাফল্যের চালিকাশক্তি আসে সাফল্য লাভের জ্বলন্ত আকাক্সক্ষা থেকে। নেপোলিয়ন বলেছেন, ‘মানুষের মন যা কল্পনা করে এবং বিশ্বাস করে, তা সে অর্জন করতে পারে।’ এক তরুণ মহামতি সক্রেটিসকে জিজ্ঞেস করলেন, সাফল্য লাভের রহস্য কী? সক্রেটিস তাকে পরদিন নদীর তীরে দেখা করতে বললেন। দেখা হওয়ার পর দু’জনে পানির দিকে এগোতে থাকলেন এবং একগলা পানিতে গিয়ে দাঁড়ালেন। হঠাৎ কিছু না বলে সক্রেটিস ছেলেটির ঘাড় ধরে পানির মধ্যে ডুবিয়ে দিলেন। ছেলেটি পানির ওপরে মাথা তোলার যত চেষ্টা করছে সক্রেটিস ততই তাকে শক্ত হাতে পানির নিচে ডুবিয়ে রাখছেন। বাতাসের অভাবে নীল হয়ে গেলো ছেলেটির চেহারা। সক্রেটিস তখন তার মাথাটি পানির ওপর তুললেন। ছেলেটি হাঁসফাঁস করে মুখ ভরে নিঃশ্বাস নিলো। সক্রেটিস জিজ্ঞেস করলেন, ‘যতক্ষণ পানির নিচে ছিলে ততক্ষণ তুমি আকুলভাবে কী চাইছিলে?’ ছেলেটি জবাব দিলো, ‘বাতাস’। সক্রেটিস বললেন, ‘এটিই সাফল্যের আসল রহস্য।’ তুমি আকুলতার সাথে যেভাবে বাতাস চাইছিলে, ঠিক সেভাবে যখন সাফল্য চাইবে, কেবল তখনই সাফল্য পাবে। এ ছাড়া সাফল্যের কোন গূঢ় রহস্য নেই। কোন কাজ সুসম্পন্ন করতে হলে, শুরু করতে হয় একটি জ্বলন্ত আকাঙ্ক্ষা দিয়ে। অল্প আগুন যেমন অনেক উত্তাপ দিতে পারে না, তেমনি দুর্বল ইচ্ছাশক্তি কোন মহৎ সাফল্য লাভ করাতে পারে না।

২. অঙ্গীকার কোন কাজ নিষ্পত্তি করবার দৃঢ় অঙ্গীকার নির্মাণ করতে হয় দু’টি স্তম্ভের ওপর। সে দু’টি হলো সততা ও বিজ্ঞতা। এক ম্যানেজার তার কর্মচারীদের এই কথাটি বেশ সুন্দর করে বলেছিলেন, ‘যদি তোমার আর্থিক ক্ষতিও হয়, তবু তোমার অঙ্গীকারে দৃঢ় থাকার নামই সততা। আর বিজ্ঞতা হচ্ছে, যেখানে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে সেই রকম বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ না হওয়া।’ জয়ের জন্য খেলা আর না হারার জন্য খেলা, এই দুয়ের মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য আছে। যখন আমরা জয়ের জন্য খেলি, তখন জেতার উৎসাহ এবং সব রকম পরিশ্রমের মূল্য দিতে প্রস্তুত থাকি। আর যখন আমরা না হারার জন্য খেলি, তখন জেতার অঙ্গীকার থাকে না বলে দুর্বল মনোভাব তৈরি হয়। এ জন্য সব সময় মনে রাখবে, জয়ীরা সব সময় জেতার জন্যে অঙ্গীকারবদ্ধ। জেতার জন্যে খেলার মধ্যে থাকে অনুপ্রেরণা, আর না হারার জন্যে খেলার মধ্যে থাকে বেপরোয়া মনোভাব।

সফলতার সোপান - আমিনুল ইসলাম ফারুক৩. আত্মবিশ্বাস আত্মবিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রম ব্যর্থতা নামক রোগকে মারার সবচেয়ে কার্যকরী ঔষধ। এটাই তোমাকে একজন সফল মানুষে পরিণত করবে। একটু গভীরভাবে খেয়াল করলে দেখবে, বিশ্বাস এমন একটি ছোট শব্দ যেটা পড়তে এক সেকেন্ড লাগে, ভাবতে কয়েক মিনিট লাগে, বুঝতে কয়েকদিন লাগে কিন্তু প্রমাণ করতে লেগে যায় সমগ্র জীবন। সুতরাং If you want to be strong learn to fight alone. বড় হওয়ার মূলমন্ত্র আত্মবিশ্বাস। ভয়কে জয় করতে না জানলে ছোট কাজও অসম্ভব থেকে থেকে যায়। স্বপ্ন পূরণ তো দূরের কথা। এ প্রসঙ্গে তোমাদের একটি মজার গল্প বলছি। শৈশবে কুকুরকে ভীষণ ভয় পেতেন মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডা: মাহাথির মোহাম্মদ। এই প্রাণীটি ঘেউ ঘেউ করলেই ভয়ে দৌড়ে পালাতেন তিনি। একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন ও মনে সাহস সঞ্চয় করলেন, আর ভয় পাবেন না। এর পর থেকে ঘেউ ঘেউ শব্দে তেড়ে আসা কুকুর দেখে দৌড়ে পালালেন না। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। দেখলেন, দূর থেকে ছুটে আসা ক্ষিপ্রগতির কুকুরটি তাঁর সামনে এসে বিনয়ী ভঙ্গিতে লেজ নাড়ছে। ভয়কে জয় করার এই ব্যতিক্রমী কৌশলই সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিয়েছে ডা: মাহাথির মোহাম্মদকে। বাড়ির পাহারাদার হতে হলে মালিকের সামনে বিনয়ী হতে হয়। বিনয়ী কুকুরই দায়িত্ব পায় বাড়ি পাহারা দেয়ার। মালিকের সামনে যে কুকুরটি ভদ্র ও বিনয়ী সে একই কুকুর অপরিচিত জনের কাছে খুবই ভয়ঙ্কর। সুতরাং সফল হতে চাইলে তোমরা আত্মবিশ্বাসের পাহারাদার হও।

৪. অনুশীলন Practice makes a man perfect অর্থাৎ অনুশীলন মানুষকে দক্ষ করে। প্রতিভা আছে কিন্তু অনুশীলন নেই, তাহলে সে প্রতিভার ওপর মরিচা পড়বেই। অনুশীলনকে অভ্যাসে পরিণত করতে হয়। কথায় আছে মানুষ অভ্যাসের দাস। কিন্তু অভ্যাসকে মানুষের দাস বানাতে পারলেই কেবল সফলতা আসে। অনুশীলন মানুষের ভেতরের শক্তিকে জাগিয়ে তোলে। মনকে শক্তিশালী করে। আর যে শক্তি রেখে চলতে পারে সে কখনো হারে না, হয় জিতে না হয় মরে। ব্যর্থতা একটা পরীক্ষা মাত্র। অকপটে ভুল স্বীকার করো। তোমার কী ঘাটতি রয়েছে দেখো এবং ঘাটতি পূরণ করো। যতক্ষণ না সফল হও শান্তির ঘুম ত্যাগ করো। লড়াই করো। মাঠ ছেড়ে পালিয়ে যেও না। ব্যতিক্রম কিছু না করতে পারলে জীবনে জয়ধ্বনি শোনা যায় না। লেগে থেকো। যে শক্তি রেখে চলে সে কখনো হারে না।

সফলতার সোপান - আমিনুল ইসলাম ফারুক৫. পথপ্রদর্শক রাখা যিনি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে ছাত্রের দূরদৃষ্টিকে প্রসারিত করতে পারেন, তিনিই শিক্ষক বা পথপ্রদর্শক। শিক্ষক হিসেবে এমনই একজন ব্যক্তিকে খুঁজে নাও, যিনি আপন নির্দেশনায় তোমাকে পরিচালিত করবেন। অপরদিকে একজন খারাপ শিক্ষক তোমাকে ভুল পথে পরিচালিত করবেন। শিক্ষককে সর্বদা শ্রদ্ধা করো এবং আগ্রহী ছাত্র হও। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কৌতূহল পছন্দ করেন। তাঁরা জীবনের সঠিক রাস্তা ধরিয়ে দেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি।

৬. মিতব্যয়ী হওয়া যদি সম্পদশালী হতে চাও, তবে অবশ্যই তোমাকে মিতব্যয়ী হতে হবে। আর সম্পদশালী হতে কে না চায় বলো? সম্পদশালী হতে চাইলে এই কথাগুলো সর্বদা মনে রাখবে, কখনো ধনীদের দরিদ্র করে দরিদ্রকে ধনী করতে পারবে না। শক্তিমানকে দুর্বল করে দুর্বলকে শক্তিশালী করতে পারবে না। একইভাবে সুদের টাকায় উন্নত আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে না। ঘৃণাকে জাগ্রত করে মানুষের কৃতজ্ঞতা আশা করবে না। আয়ের থেকে ব্যয় বেশি করে সঙ্কট এড়ানো যায় না। মানুষ নিজে যা করতে পারে বা মানুষের যা করা উচিত, শুধু তা করে দিলে মানুষকে স্থায়ীভাবে সাহায্য করা হয় না।

৭. ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া নোবেল জয়ী সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ’ বলেছেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।’ যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাদের আমি পশুর পালেরই একটি অংশ মনে করি। যদি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিচার করো, তবে দেখবে ব্যর্থতা শিক্ষকের ন্যায় কাজ করে। ভুলগুলো আমাদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। সাময়িক ব্যর্থতার ফলে সাফল্য কিছুটা বিলম্বে ঘটে ঠিক, কিন্তু পরাজয় ঘটে না। জ্ঞানী ব্যক্তিরা নিজের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিরা অতীতের ভুলগুলোর সরলীকরণ করে নিজেকে ও সমাজকে জাগিয়ে তুলেন। মনে রাখবে, আমাদের জীবন এত দীর্ঘ নয় যে, কেবল নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিলেই তাতে যথেষ্ট হবে। বরং অপরের ভুল থেকেও শিক্ষা নিতে হবে। প্রতিটি ভুল মানুষকে একটি করে শিক্ষা দেয়, আর প্রতিটি শিক্ষা একজন ব্যক্তিকে পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। [চলবে]

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ