সবার ঘরে ঈদের খুশি -ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ
বিশেষ রচনা জুলাই ২০১৬
আকাশের কোলে ঈদের বাঁকা চাঁদ। জোসনার ঝিলিকে মনটাও নেচে ওঠে আনন্দে থৈ থৈ করে। রোজার শেষে এলো ঈদ। ঈদ এলো খুশির খবর নিয়ে। এ খুশি পবিত্রতার। এ আনন্দ নির্মল ও পরিশুদ্ধতার। একটি মাস রোজা রেখে মনটা পবিত্র হয়েছে। আমলনামা হয়েছে পাপমুক্ত। ঝক্ঝকে তক্তকে সবুজ স্বপ্নগুলো শাদা পায়রার মতো পাখা মেলে উড়ে যাচ্ছে দিগন্তের শেষ সীমানায়। চারিদিকে শুধু বিশুদ্ধ বাতাসের দোল। শরীরের ভাঁজে ভাঁজে তাই বিশুদ্ধতার ঢেউ। মনের নীল সাগরপাড়ে গাঙচিলের ওড়াউড়ি। রোজার ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে মজার মজার খাবার গ্রহণ, নতুন নতুন জামা কাপড়ের সমাহার। চারিদিকে ফুলের মতো পবিত্র মুখের সুন্দর হাসি। তাকবির ধ্বনিত হচ্ছে ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার অলিল্লাহিল হাম্দ।’ চারিদিকে যেন থৈ থৈ আনন্দ। ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে’। শাবান মাস থেকেই শুরু হয় রোজার পবিত্র আবহ। মন থেকে ময়লা আর খারাপ চিন্তাগুলো দূর করার প্রস্তুতি শুরু হয় এ শা’বান মাসেই। তার মানে এ শা’বান কিন্তু আমাদের গোসল করা কিংবা কাপড় কাচা সাবান নয়। এটা একটা মাসের নাম। বাংলা বা ইংরেজি বছরের যেমন বারটি মাস আছে তেমনি আরবি সালও বার মাসে সাজানো। তারই একটি হলো শাবান মাস। রমযান মাসের আগের মাস এটি। এ মাসের শেষ দিনেই রোজার চাঁদ ওঠে, আর রমযান মাসের পরের মাস হলো শাওয়াল। শাওয়ালের চাঁদ উঠলেই এটাকে আমরা ঈদের চাঁদ বলি। শাওয়াল মাসটা কত সৌভাগ্যবান। এ মাসের চাঁদ দেখলেই সারা বিশ্বের মুসলমানরা আনন্দে মেতে ওঠে। এ মাসের প্রথম তারিখেই ঈদ আনন্দে ভরে ওঠে সকলের মনের উঠোন। ঈদে সবচেয়ে বেশি দরকার মনটাকে সুন্দর করা। ছেঁড়া পুরনো জামাগুলো ফেলে দিয়ে মনকে সত্য ও সুন্দরের জামা পরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। মনের কোণায় লুকানো কালি-ময়লাগুলো পরিষ্কার করে মনটাকে ঝকঝকে বানাই। মনের চাদরে ছেঁড়া-ফাটা থাকলে তা সেলাই করে নেই। মনটাকে সুন্দরভাবে ইস্ত্রি করে মসৃণ বানাই। দেখবো সে ভীষণ সুন্দর হয়ে উঠবে। সে কখনো খারাপ চিন্তা করবে না, অন্যকে গালি দেবে না, কষ্ট দেবে না। মনের আকাশটা অনেক উদার হয়ে উঠবে। নীল আকাশের মতো, মৃদু হাওয়ায় নেচে ওঠা সবুজ দিগন্তের মতো। তখন মনে হবে, আমি শুধু আমার জন্য নই, আমি মানুষ, আর মানুষ মানুষেরই জন্য। ঈদে নতুন জামা-জুতোর মধ্যে অযথা বিলাসিতা করা মোটেই ঠিক নয়। তার চেয়ে বরং ঈদের বাজেট থেকে যদি কোন অসহায় মানুষের কল্যাণে আসতে পারি সেটাই আসল আনন্দ। ঈদের দিনে অনেকেই আমরা আতশবাজি করি। এটা অপচয়। এতে কোন কল্যাণই নেই। বরং কয়েক বন্ধু মিলে সেই আতশবাজির টাকাটা একত্রিত করে আব্বু-আম্মুর কাছ থেকে আরো কিছু সংগ্রহ করে পাশের দু চারজন সুবিধাবঞ্চিত শিশুর নতুন স্বপ্ন গড়তে সাহায্য করতে পারি। নতুন জামা-জুতো কিনে দিতে পারি, স্কুলের বই-খাতা-কলম কিংবা একটা স্কুল ব্যাগও উপহার দিতে পারি। উপহার দিতে পারি তার লেখাপড়ার অন্যকোন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। আর কিছু না হোক, সে লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবে, এমন আশাব্যঞ্জক দু-একটা বইও তো উপহার দিতে পারি। আমরা ঈদের সময় আব্বু-আম্মুর কাছে থেকে শুধু নিয়েই থাকি। কখনো কি আব্বু-আম্মু, দাদা-দাদী কিংবা পরিবারের অন্য কাউকে কোন গিফট কিনে দিয়েছি? এটাও কিন্তু ঈদের খুশি অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। হয়তো বলবে, আমরা কি চাকরি করি? টাকা রোজগার করি? তাহলে আমরা কোথা থেকে কিনে দেব? হ্যাঁ কাজটা কিন্তু বেশ কঠিন। নিজেই বাবা-মা’র কাছে থেকে নিচ্ছি সেখানে দিব কিভাবে? কিন্তু ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। যদি ঈদের আগে থেকেই কিছু কিছু টাকা জমানো যায়। আমার প্রতিদিনের টিফিন থেকে, রিকশাভাড়া থেকে, কেউ গিফট করলো সে টাকাটা খরচ না করেও কিন্তু টাকা জমানো যায়। এভাবে সামান্য কিছু টাকা জমিয়েও একটা গিফট কেনা যায়। সেটা হতে পারে একটা টুপি। একটুখানি আতর। একটা সুন্দর রুমাল। একটা স্যান্ডো গেঞ্জি কিংবা আম্মুর জন্য ছোট-খাটো কোন পারফিউম। এতে কিন্তু ঈদের আনন্দটা আরো বেশি গভীর হয়ে উঠবে। আমাদেরও দেবার অভ্যাসটা গড়ে উঠবে এবং আব্বু-আম্মুর মনটাও প্রশান্তিতে ভরে উঠবে। আর আব্বু-আম্মু, দাদা-দাদীর খুশি মানে আল্লাহও খুশি। আর আল্লাহর খুশি মানেই তো ঈদের খুশির পূর্ণতা। এমনি খুশি ছড়িয়ে পড়–ক সবার ঘরে ঘরে। ঈদ মুবারক।
আরও পড়ুন...