সবুজের মাঝে

সবুজের মাঝে

ভ্রমণ মার্চ ২০১২

ফাতেমা তুজ জোহরা..

দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। সবাই প্রস্তুত। কলেজ থেকে ২ দিনের শিক্ষা সফরে আমরা যাচ্ছি সিলেটে। বাস ছাড়বে সকাল আটটায়। আমরা সাড়ে সাতটার মধ্যেই হাজির। কিন্তু নাহ, কুয়াশার কারণে বাস ছাড়ল এক ঘণ্টা পর।
বাস ছাড়তেই আমাদের হাতে নাশতার প্যাকেট ও এক বোতল করে পানি দেয়া হলো। শেষে স্যার শিক্ষা সফর সংক্রান্ত বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিলেন। বাসে কুইজ প্রতিযোগিতা ও বিভিন্ন ধরনের খেলার মাধ্যমেই সময় কাটছিল আমাদের। বেলা ৩টায় আমরা সিলেট শহরে পৌঁছলাম।
আমাদের জন্য নির্ধারিত হোটেল হিলটাউন থেকে দুপুরের খাবার প্যাকেট নিয়েই বাস ছাড়ল জাফলং এর উদ্দেশ্যে। দুপুরের খাবারও বাসেই খেলাম। বাস যতই জাফলংয়ের কাছে যাচ্ছিল নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আমরা ততই অভিভূত হয়ে পড়েছি। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি আর ভাবছি আল্লাহ কত সুন্দর করে এ পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন! মেঘালয়ের পাহাড় শ্রেণী দেখে মনে হলো এগুলোই পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষার জন্য পেরেকের ন্যায় গেড়ে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা।
জাফলংয়ে বাস থামতেই আমরা হুড়মুড় করে নেমে পড়লাম। সেদিন ভিড় না থাকায় খুব ভালো লাগছিল আমাদের। প্রকৃতিকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে নদী পাড় হওয়ার জন্য তিনটি ট্রলার ভাড়া করা হলো। তিনটি ট্রলারেই ৩-৪ জন করে স্যার-ম্যাডামরা উঠলেন। আমাদের অনেকেই সাঁতার জানত না। তাই ভয় পাচ্ছিল ট্রলারে উঠতেই। ট্রলারে উঠতেই ভীতি ভাবটা কেটে গেল। চারপাশে তাকিয়ে দেখি অসংখ্য নারী-পুরুষ পাথর তুলছে। নিচের দিকে তাকিয়ে মনে হলো  কেউ যেন অতি যতেœ পাথরের ওপর স্বচ্ছ পানি ঢেলে রেখেছে। দূরে দেখা গেল দুই পাহাড়ের মধ্যে একটি সেতু। প্রথমে ভেবেছি ঐ সেতু পর্যন্ত ট্রলার যাবে। কিন্তু না, পথিমধ্যে এক বালুচরে আমাদের নামিয়ে দেয়া হলো। স্যার আমাদের বেশি দূরে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করলেন। বরফ গলা পানিতে নামতেই শীতটা যেন ভালোভাবে জড়িয়ে ধরল আমাদের। কিন্তু তার পরও কেউ থেমে থাকেনি। সবাই ব্যস্ত ছবি তুলতে। প্রকৃতির মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম, হঠাৎ বাঁশির কড়া শব্দে বাস্তবে ফিরে এলাম। বাংলাদেশের সীমানা নির্দেশক পতাকার কাছে আমরা ক’জন যে কখন চলে এসেছি তা টেরই পাইনি। ওখানে একজন বিজিবি সদস্য ছিলেন। আমরা তার সহায়তায় পতাকার কাছে কয়েকটি ছবি তুলেই চলে এলাম।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। এবার ফেরার পালা। জাফলংয়ের স্মৃতি হিসেবে কিছু কেনাকাটা করলাম। আর নদী থেকে কুড়িয়ে এনেছিলাম ধবধবে সাদা ত্রিভুজাকৃতির একটি পাথর। হোটেলে ফেরার পথে গিয়েছিলাম হযরত শাহজালাল (রহ:)-এর মাজার দেখতে। সেখানে এশার নামাজ পড়লাম। পুকুরের কাছে এসে বড় গজার মাছ দেখে কেমন যেন ভয় লাগছিল!  কিন্তু রাত হওয়ার কারণে বেশিক্ষণ এখানে থাকা যায়নি। বাসে উঠতে হলো হোটেলে ফেরার জন্য। ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে আমরা সবাই একত্রিত হলাম খাবার টেবিলে। অল্প সময়ের মধ্যে খাবার শেষ করে যার যার রুমে ফিরলাম।
পরদিন শুক্রবার ভোরে নাশতা শেষে বাসে চড়লাম মাধমকুণ্ড যাওয়ার উদ্দেশে। মাধকুণ্ড পৌঁছে স্যার ৮-১০ জন করে গ্রুপ করে দিলেন। ভিড় বেশি হওয়ায় আমরা সব জায়গায় যেতে পারছিলাম না। তার পরও যতটা সম্ভব ঘুরে বেড়ালাম। ঝরনার কাছে আসতেই “ঝরনার পাশে দাঁড়ালে...” গানটি মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠল।
পাথর চিড়ে পানি গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য দেখে আল্লাহর অপার করুণাকেই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। চারদিকে বিশাল বিশাল পাহাড়কে সবুজের চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা। আমরা সবাই সবুজের মাঝে নিজেদের হারিয়ে ফেললাম। কিন্তু  বেশিক্ষণ এ অবস্থায় থাকতে পারিনি, বেলা ২টার মধ্যেই রেস্টুরেন্টে হাজির হতে হয়েছে। এখানে আমরা ভাত খেলাম, যা রান্না হয়েছে আতপ চাল দিয়ে। এ চালের ভাত আগে কখনও খাইনি। তাই সবার কাছেই তা উপভোগ্য ছিল। খাবার শেষে একটু রেস্ট নিয়ে আবার বাসে উঠতে হলো। এবার অবশ্য সবার মন খারাপ, কারণ ঢাকায় ফিরেই শুরু হবে ব্যস্তময় ছাত্রীজীবন।
দুই দিন সিলেট সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকায় ফিরলাম মধ্যরাতে। একদিন পর থেকেই  শুরু হলো যান্ত্রিক সেই ছাত্রীজীবন।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ