সাক্ষাৎকার: কবি আবুল হোসেন।

সাক্ষাৎকার: কবি আবুল হোসেন।

সাক্ষাৎকার মে ২০১০

কবি আবুল হোসেন। চল্লিশ দশকের প্রধান কবি। জীবিত কবিদের মধ্যে প্রবীণতম। তাঁর সহযাত্রী কবি ছিলেন কবি ফররুখ আহমদ, কবি তালিম হোসেন, কবি আহসান হাবীব, কবি সৈয়দ আলী আহসানসহ অনেকেই। ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নব বসন্ত’। অর্থাৎ আজ থেকে সত্তর বছর আগে। কবি আবুল হোসেন লেখায় এবং যাপিত জীবনে অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন, রুচিশীল ও মার্জিত। সর্বত্রই কবির অনন্য ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদার স্বাক্ষর রয়ে গেছে। নব্বইঊর্ধ্ব বয়সী কবি আবুল হোসেন। বয়স যতই হোক- তাঁর ছাপ কবির লেখা ও মননকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি বরাবরই স্বল্পবাক, লেখেনও কম। লেখেন অনেকটা মেপে মেপে। ফলে লেখার ধারটা হয় প্রখর। তাঁর সেই লেখার ধার ও ধারা এখনো সমান সচল। কবি আবুল হোসেন ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট খুলনা জেলার ফকিরহাটের আড়–ডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম এস. এম. ইসমাইল হোসেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক নন্দিত শ্রেষ্ঠ কবি আবুল হোসেন। মাসিক নতুন কিশোরকণ্ঠের সাথে একান্ত আলাপনে উঠে এসেছে কবির হৃদয়গহিনে লুকিয়ে থাকা বেশ কিছু হীরা-মানিক। কিশোরকণ্ঠের সুধী পাঠকের জন্য সেসব উপহার হিসেবে উপস্থাপন করা হলো। সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আমরা কবির কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘ জীবনের কামনা করছি।

কিশোরকণ্ঠ : প্রথম লেখার কথা কি মনে পড়ে? সেটা কী? কবি আবুল হোসেন : আমাকে কেউ লেখালেখি করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেনি। আমি বরং বিভিন্ন লেখা পড়ে লেখালেখি শুরু করি। যাদের লেখা পড়ে আমি লেখালেখি শুরু করি রবীন্দ্রনাথ তাঁদের একজন। তাঁদের লেখা আমাকে লেখালেখিতে উদ্বুদ্ধ করে। আমি যখন ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়ি তখন থেকে লেখালেখি শুরু করি। প্রথম যে লেখাটা লিখি সেটা ছিল একটি কবিতা। কবিতাটির নাম ছিল ‘উপহার’। আমার বোনের বিয়ে উপলক্ষে কবিতাটি লিখেছিলাম।

কিশোরকণ্ঠ : প্রথম প্রকাশিত লেখা কী এবং কোথায় প্রকাশিত হয়? কবি আবুল হোসেন : আমি যখন স্কুলে সপ্তম কী অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি, তখন স্কুলে একটি ম্যাগাজিন বের করা হয়েছিল। সেই ম্যাগাজিনে আমার প্রথম কবিতা ছাপা হয়। কবিতাটির নাম ছিল ‘আকবরের প্রতি রানা প্রতাপ’। আর সেই ম্যাগাজিনের নাম ছিল ‘কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল ম্যাগাজিন’।

কিশোরকণ্ঠ : শিশু-কিশোরদের জন্য লিখতে কেমন লাগে? তাদের জন্য কেন লেখেন? কবি আবুল হোসেন : যখন লেখালেখির প্রেরণা আসে তখনই লিখি সেটা বড়দের জন্যই হোক কিংবা ছোটদের জন্যই হোক। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখার বিশেষ প্রেরণা লাগে না। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখার কারণ হলো যাতে তারা লেখাগুলো পড়ে বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী জীবন গড়ে তুলতে পারে। শিশুদের লেখাগুলো এমনভাবে লেখা উচিত যাতে তারা সহজেই সেগুলো অনুধাবন করতে পারে। আমি মূলত ছোটদের মাঝে সেই অনুভূতি জাগিয়ে তোলার জন্যই লিখি।

কিশোরকণ্ঠ : কবি ফররুখের সাথে আপনার কেমন সম্পর্ক ছিল? কবি আবুল হোসেন : কবি ফররুখ আহমদ আমার বন্ধু ছিলেন, তাঁর সাথে আমার পরিচয় হয় লেখালেখির সূত্রেই। আমরা একই সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেছি। তাঁর সাথে আমার প্রায়ই সাক্ষাৎ হতো। সেসময় লেখালেখি নিয়ে আমাদের মাঝে আলাপ আলোচনা হতো।

কিশোরকণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কোথায় এবং কেমন কেটেছে? কবি আবুল হোসেন : আমি জীবনে বিশেষ করে ছেলেবেলায় কোন দুঃখ কষ্ট পাইনি। মোটামুটি সুখেই আমার বাল্যকাল কেটে গিয়েছিল। আমরা ছিলাম ছয় ভাইবোন। তিন ভাই তিন বোন। আমার বাবা পুলিশের চাকরি করতেন। সে কারণে দেশের বিভিন্ন শহরে গমন করতে হলেও আমার বাল্যকালের অধিকাংশ সময় কেটেছে দু’টি শহরে। সে শহর দু’টির একটি হলো ব্রিটিশ আমলের নদীয়া (বর্তমান কুষ্টিয়া অঞ্চল)।

কিশোরকণ্ঠ : ছোটবেলার একটি বিশেষ স্মৃতির কথা কি বলবেন। কবি আবুল হোসেন : আমার বাল্যকালের একটি স্মৃতি মনে আছে। আমার বয়স তখন ছয় বছরের মতো হবে। সবেমাত্র স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি। তখনকার দিনে বর্তমান সময়ের মতো এত বেশি প্রাতিষ্ঠানিক স্কুল ছিল না। আমরা পাঠশালায় পড়তাম। গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে পাঠশালায় পড়তে যেতাম। রাস্তায় খুব বেশি লোকজন চলাফেরা করতো না। তখন লোকজন কম ছিল। রাস্তায় হঠাৎ করে যখন কোন লোক দেখতে পেতাম তখন ভাবতাম লোকটি মানুষ তো! না কি ভূত! ভূতের কথা মনে হলে মনে হতো নাকি জিন, জিন হলে তো পায়ের পাতা উল্টা দিকে থাকার কথা। তাই লোকটির পায়ের দিকে তাকাতাম পা-টি উল্টা দিকে আছে নাকি সোজা আছে। বাস্তবে ভূত আছে বলে মনে হয় না। এগুলো আসলে জিন-পরী। জিন-পরীর বাস্তবে অস্তিত্ব আছে। কিশোর বয়সের আমার আর একটি স্মৃতি মনে আছে। আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে একটি চিঠি লিখেছিলাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার চিঠির উত্তরও দিয়েছিলেন। তিনি একটি মাত্র শব্দে চিঠিটার উত্তর দেন। তাঁর সে চিঠিতে লেখা ছিল আশীর্বাদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

কিশোরকণ্ঠ : শিশু-কিশোরদের সম্পর্কে কিছু বলুন। তাদের প্রধান কর্তব্য কী হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন? কবি আবুল হোসেন : ছোটদের প্রতি আমার বিশেষ উপদেশ হলো তাদের ভালোভাবে লেখাপড়া করা উচিত। আমাদের সময় লেখাপড়া করার বর্তমানের মতো এত বেশি সুযোগ ছিল না। বর্তমানে সবার জন্য লেখাপড়া করার সুযোগ আছে। তাছাড়া এখন তো প্রাথমিক স্তরে লেখাপড়া করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

কিশোরকণ্ঠ : তাদের প্রতিভা বিকাশের জন্য আমাদের করণীয় কী? কবি আবুল হোসেন : এটা নির্ভর করে যে তার প্রবণতা কোন্ দিকে? এর ওপরই নির্ভর করবে সে কী হবে। সে কী করে কী হতে চায় তার ওপর এটি নির্ভরশীল। সে যদি মনে করে আমি লেখক হবো, তাহলে তাকে অনেক পড়তে হবে এবং ছোট থেকেই লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছেলেবেলায় সব ছেলে দুষ্টুমি করে না। কিন্তু সব ছেলে খেলাধুলা করে। তবে সবাই যে শুধু খেলাধুলা নিয়েই মেতে থাকে আমার মনে হয় এ কথাটি ঠিক নয়।

কিশোরকণ্ঠ : সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কবি আবুল হোসেন : কিশোরকণ্ঠকেও ধন্যবাদ। দোয়া করি পত্রিকাটি দীর্ঘজীবী হোক এবং সকল শ্রেণীর পাঠকের মন জয় করুক।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ