সামান্য ভুল
নাটিকা আগস্ট ২০১২
মোস্তফা রুহুল কুদ্দুস... চরিত্রলিপি জাহিদ : সমপ্তম শ্রেণীর ছাত্র নাহিদ : জাহিদের ভাই দাদু : জাহিদ-নাহিদের দাদু কর্মী : ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মিস্ত্রি : ইলেকট্রিক মিস্ত্রি সহকারী : মিস্ত্রির সহকারী ফকির : নামেই পরিচয় প্রথম দৃশ্য (শহরের একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের পড়ার ঘর। সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র জাহিদ বই পড়ে। মশার উৎপাতে পড়ার ব্যাঘাত ঘটে তার। মাঝে মাঝে বই রেখে মশা মারে। শব্দ শুনে প্রবেশ করেন দাদু।) দাদু : কিরে দাদু, এখানে কিসের শব্দ হচ্ছে? জাহিদ : একটু অপেক্ষা করো। সবই দেখতে পারবে। (আবার মশা মারে) দাদু : ও মাশা মারছিস! গরমের সময় মশা মাছির দাপট একটু বাড়ে। সে জন্য কামানের প্রয়োজন নেই। ঘরে কয়েল আছে। জাহিদ : (আবার মশা মারে) দেখ দাদু, কতখানি রক্ত চুষে নিয়েছে। এভাবে দশটা মশায় কামড়ালে অনেক রক্ত চলে যাবে। দাদু : থাক আর কষ্ট করতে হবে না। বৌমা, বলি ও বৌমা, জাহিদের পড়ার টেবিলে একটা কয়েল পাঠিয়ে দাও। দাদু, বাড়ির আশপাশে নোংরা পরিবেশ। ড্রেনটা কতদিন পরিষ্কার করা হয় না। ওখান থেকেই মশা বংশ বিস্তার করছে। লেখাপড়ার ফাঁকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ তোরাও করতে পারিস। জাহিদ : (হেসে) আমরা করবো লেবার সুইপারের কাজ! তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে দাদু। পান খাবে? (কয়েল নিয়ে জাহিদের ছোট ভাই নাহিদের প্রবেশ) নাহিদ : আম্মু রান্না ঘরে। কয়েল নাও ভাইজান। জাহিদ : টেবিলের নিচে রাখ। দাদু : আহ্হা- ও ছোট মানুষ, কোথাকার জিনিস কোথায় রাখবে ঠিক আছে? জহিদ : ক্লাস ফোরে ফার্স্ট হয়েছে। ও যদি ছোট হয়, তাহলে বড় হবে কে? ভাইয়া, একটু দেখে শুনে রাখ। দাদু : সাবধানের মার নেই। সামান্য ভুলে অনেক বড় বিপদ ঘটতে পারে। যাক, মশা তাড়ানোর ব্যবস্থা হলো। এবার মন লাগিয়ে বই পড়। (দাদুর প্রস্থান) নাহিদ : ভাইজান কয়েলের ছাই পড়ে শেষে ময়লা হয়ে যাবে। জাহিদ : ওইতো একটা পুরনো কাপড়। ওর ওপরে রাখ। নাহিদ : ভাইজান, আমাদের নিয়ে দাদু খুব ভাবেন তাই না? জাহিদ : নাতি-নাতনীদের নিয়ে সব দাদুই টেনশনে থাকেন। যা আর ঝামেলা করিস না। (নাহিদের প্রস্থান। জাহিদ পড়ে। চোখে ঘুম ঘুমভাব। হাই তোলে।) জাহিদ : ক’দিন পর পরীক্ষা। এখন ঘুমালে চলবে না। (উঠে কিছুক্ষণ পায়চারি করে ) ঘুমকে আমি জয় করিব হেসে। গোলাগুলির গুলিতে নয় গভীর ভালোবেসে। (কয়েকবার ব্যায়াম করে পড়তে বসে। কিছু সময় পড়ার পর আবার হাই তোলে, ঘুম আসে।) নাহ, ঘুমের সাথে যুদ্ধ করতে গেলে ঘুম-পড়া কিছুই হবে না। তারচেয়ে টেবিলের ওপর একটু ঘুমিয়ে নিই। (ঘুমায়) দ্বিতীয় দৃশ্য (পাশের রুমে পান বাটেন দাদু। এ সময় কিসের গন্ধ অনুভব করেন তিনি। ডাকে নাহিদকে।) দাদু : নাহিদ- (নাহিদের প্রবেশ) তোর মা কী রান্না করছে রে? নাহিদ : কেন খাবে? তুমি এতো পেটুক কেন দাদু? দাদু : কিসের যেন গন্ধ আসছে। দেখতো চুলোর ভেতর কি দিয়েছে। (নাহিদের প্রস্থান। দাদু গন্ধ শুঁকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন।) পোড়া পোড়া গন্ধ নিশ্চয়ই কিছু পুড়ছে। (নাহিদের প্রবেশ) নাহিদ : দাদু আম্মুর রান্না শেষ। গন্ধ আসছে পাশের বাড়ি থেকে। ওরা সব সময় আজে বাজে জিনিস দিয়ে রান্না করে। দাদু : তোর ভাইজানের ঘরে কোনো সাড়া শব্দ নেই। দেখতো কী করছে? (নাহিদ জাহিদের ঘরে যায় এবং খিল খিল করে হাসতে হাসতে ফিরে আসে) দাদু : কিরে হাসছিস কেন? নাহিদ : ভাইজান টেবিলের ওপর মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। গভীর ঘুম। জোরে শব্দ করলাম। তাও টের পেল না। দাদু : সারদিন পড়া আর পড়া। সকালে ঘুম ভাঙার আগেই হাজির হবে অঙ্কের স্যার। তারপর স্কুল। সেখান থেকে ফিরতে না ফিরত ইংরেজি স্যার। বিকেলে আসবে কম্পিউটার শেখাতে। এভাবে যন্ত্রের মতো মতো চললে ঘুমতো আসবেই। নাহিদ : সামনে ভাইজানের পরীক্ষা। ডেকে দি। চোখে পানির ছিটা দিলে এমনিই জেগে যাবে। দাদু : কাঁচা ঘুমে ডাকলে পড়তে পারবে না। তার চেয়ে বরং কিছুক্ষণ নির্বিঘেœ ঘুমিয়ে নিক। নাহিদ : দাদু, আজ গল্প শোনাবে না? দাদু : পড়া হয়েছে? নাহিদ : আমার সব পড়া মুখস্থ। সেই সিংহের গল্পটা বলো না দাদু। দাদু : বলোতো সিংহ কে? নাহিদ : সিংহ হলো পশুর রাজা। দাদু : একবার বনের ভেতর ভীষণ অভাব দেখা দেয়। অভাবের তাড়নায় বড় বড় পশুরা ছোটদের খেয়ে ফেলতো। এই নিয়ে কুকুর শেয়াল বানর হনুমান একসাথে মিটিং করলো। নাহিদ : এক সাথে! কুকুর দেখে শেয়াল পালিয়ে যায়নি? দাদু : বনের স্বার্থে সবপশুরা এক। তারপর মিটিং করে সবাই গিয়ে হাজির হলো রাজ দরবারে। নাহিদ : দরবারে পুলিশ ছিল না? দাদু : আহ হা এতো প্রশ্ন করলে গল্প বলবো কিভাবে। রাজ দরবারে গিয়ে তারা সিংহের কাছে আরজ করলো, মহারাজ, বড় বড় পশুরা আমাদের দেখতে পারে না। সুযোগ পেলেই আমাদের ঘাড় মটকে খেয়ে ফেলে। সিংহ বললো, প্রজারা, মোটেও চিন্তা করো না। তোমাদের দুঃখ কষ্ট দেখার দায়িত্ব আমার। (গল্পের মাঝে আগুন আগুন বলে চিৎকার করতে করতে জাহিদের প্রবেশ-) জাহিদ : না না, আগুন আগুন। দাদু, ভাইয়া আরেকটু হলে আমিও পুড়ে মরতাম। দাদু : কোথায় আগুন? জাহিদ : আমার পড়ার ঘরে। বই খাতা পুড়ে লেপ তোশক ধরেছে। ওই দেখ, কিভাবে ধোঁয়া বের হচ্ছে। নাহিদ ও দাদু উঁকি দিয়ে দেখে) নাহিদ : দাদু, ভেতরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। দাদু : তাইতো! (চিৎকার করে) বৌমা শিগগির ফায়ার সার্ভিসে ফোন করো। জাহিদ : আগুন আগুন- তোমরা কে কোথায় আছো আমাদের রক্ষা করো। (ইলেকট্রিক মিস্ত্রির প্রবেশ) মিস্ত্রি : উহ কী ভয়ঙ্কর দৃশ্য! নিশ্চয় বিদ্যুতের শট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। জাহিদ : না না, মশার কয়েল থেকে। দাদু, ভাইয়া, সরে এসো। মিস্ত্রি : শিগগির মেন সুইচটা অফ করে দাও। নইলে আরো বিপদ হবে। (ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির হুইসেল বাজে) ওইতো ফায়ার সার্ভিস এসে গেছে। চলুন, আমরা সবাই ওদের সাহায্য করি। (প্রস্থান। দৃশ্যান্তর) তৃতীয় দৃশ্য (বাড়ির বাইরে কিছু লোকের সমাগম। সবার উদ্দেশে কথা বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী) কর্মী : আপনারা বিচলিত হবেন না। আগুন আমাদের নিয়ন্ত্রণে এসে গেছে। আপনারা ফায়ার সার্ভিসে খবর দিতে দেরি করলে কিংবা আমাদের আসতে বিলম্ব হলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতো। কারণ এখানে অনেক ঘনবসতি। একটি বাড়ি থেকে আরেকটি বাড়িতে সহজে আগুনের বিস্তার ঘটতো। সময় মতো পদক্ষেপ নেয়ার কারণে আপনারা একটা বিরাট বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন। মিস্ত্রি : স্যার, আগুনের সূত্রপাত হলো কিভাবে? কর্মী : সম্ভবত মশার কয়েল থেকে। জাহিদ : স্যার ঠিক কথাই বলেছেন। আমি পুরনো কাপড়ের ওপর কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। ঘরের মেঝেয় যাতে ছাই না পড়ে সে জন্য কয়েলটা কাপড়ের ওপর রেখেছিলাম। কর্মী : দেখলেন, সামান্য ভুলে কত বড় বিপদ ঘটে গেল। আসি। (কর্মী ও অন্যান্যদের প্রস্থান) দাদু : জাহিদ, আমার আশঙ্কা ঠিক হলো তো? জাহিদ : আমাকে ক্ষমা করেন দাদু। আর কক্ষণো মুরুব্বিদের কথা অমান্য করবো না। দাদু : নাহিদ তুমি গল্প শুনতে খুব ভালোবাসো। আজ তোমাদের একটা নতুন গল্প শোনাবো। রেলস্টেশন দেখেছে কে কে? জাহিদ : আমি দেখেছি, বিরাট লম্বা প্লাটফরম। নাহিদ : আমিও দেখেছি। দাদু : কী মিস্ত্রি, তুমি দেখোনি? মিস্ত্রি : ওখানে একটা নতুন বাড়িতে ইলেকট্রিক লাইনের কাজ করছি। দাদু : স্টেশনের দক্ষিণ পাশে একটা বস্তি আছে। ওখানে প্রায় ২০০ ছিন্নমূল পরিবার বাস করে। ১৯৮৭ সালে তোমাদের জন্মের আগে ওই বস্তিতে আগুন লেগেছিল। সেই আগুনে সব ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। একই সাথে পুড়ে মারা যায় ৫টি নিষ্পাপ শিশু। নাহিদ : কেন ওদের মা-বাবা ছিল না? জাহিদ : আগুন দেখে দৌড়ে পালাতে পারেনি? দাদু : দুধ খাওয়া শিশু, পালাবে কিভাবে? ওদের মা-বাবাও বস্তিতে ছিল না। সবাই গিয়েছিল কাজে। তাই যা হবার তাই হয়েছিল। মিস্ত্রি : নিশ্চয়ই বিদ্যুতের শট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছিল। দাদু : আরে না না। এক পথচারী বিড়ি খেয়ে রেল লাইনের পাশে ছুড়ে ফেলেছিল। সেই ছোটটো আগুন থেকে ঘটেছিল এতো বড় দুর্ঘটনা। তাইতো বলি, ছোট জিনিসকে কখনো তুচ্ছ মনে করা ঠিক নয়। মিস্ত্রি, আগুনে বাড়ির বিদ্যুৎ লাইন নষ্ট হয়ে গেছে। তুমি আজকেই লাইনটা মেরামত করে দাও। মিস্ত্রি : দুঃখিত, আজ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কাল চেষ্টা করবো। দাদু : তুমিতো জানো নাহিদের বাবার পোস্টিং হয়েছে সিরাজগঞ্জে। বৌমা কিছুদিনের জন্য ওখানে থাকবে। আমরা দাদা-নাতি মিলে এখানেই থাকবো। কাজেই কাল যেন ভুল না হয়। (প্রস্থান। দৃশ্যান্তর) চতুর্থ দৃশ্য (নাহিদ বই পড়ে। আর এক হাতে বই দিয়ে বাতাস খায়) নাহিদ : সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি/ সারাদিন আমি যেন ভাল হয়ে চলি।/ আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে/ আমি যেন সেই কাজ করি ভাল মনে।- নাহ গরমে পড়া যায় না। ভাইজান- (দাদুর প্রবেশ ) দাদু : জাহিদ আম্মুর লাগেজপত্র গোছাচ্ছে। যা বলবে আমাকে বলো। নাহিদ : এখনো কারেন্ট মিস্ত্রি এলো না। ফ্যান বন্ধ। এতো গরমে পড়া যায়? দাদু : কথা যখন দিয়েছে, ঠিকই আসবে। তোমরা বাইরে যেয়ো না। আমি তোমার আম্মুকে নিয়ে স্টেশনে যাচ্ছি। নাহিদ : দাদু, তুমি বাড়ি বসে পান খাও। আম্মুকে আমি নিয়ে যাই। দাদু : তোমার দাদু এখনো অচল হয়নি। যদ্দিন তোমরা বড় না হও, তদ্দিন এ কাজটি আমাকে করতে হবে। আসি। (দাদুর প্রস্থান। নাহিদ আবার বই পড়ে) নাহিদ : সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি...উহ, কী ভীষণ গরম। ভাইজান, বলি ও ভাইজান (জাহিদের প্রবেশ) জাহিদ : কী হয়েছে- ষাঁড়ের মত চিল্লাচ্ছিস কেন? নাহিদ : তুমি একটু মিস্ত্রির কাছে যাবে? জাহিদ : যাচিছ। এদিকে খেয়াল রাখিস। চোর চোট্টারা সুযোগ পেলে ঘরে ঢুকে পড়বে। (জাহিদের প্রস্থান) নাহিদ : বাংলা, ইংরেজি দুটোই সোজা। দেখি- গণিতে কী আছে (বই উল্টায়) পিতার বয়স পুত্রের বয়সের ৩ গুণ। পুত্রের বয়স ১৮ বছর হলে পিতার বয়স কত? সোজা, একদম সোজা। (কলবেল বাজে) কে? (উঠে দরজায় কাছে যায়) ও কারেন্টের মিস্ত্রি। আসেন, আসেন। (কারেন্টের মিস্ত্রি ও সহকারীর প্রবেশ) আপনাদের দেরি দেখে ভাইজান ডাকতে গেছে। দাদু গেছেন স্টেশনে। এখনই চলে আসবেন। মিস্ত্রি : তা বলো সমস্যা কোথায়? নাহিদ : দাদু বললো, লাইনের কোন সমস্যা হয়নি। সম্ভবত সুইচ বোর্ডে সমস্যা। (দেখিয়ে দেয়) এই যে এখানে। মিস্ত্রি : জনি, টেস্টার দে। (পকেটে বাক্সে খোঁজাখুঁজি করে) নাহিদ : আপনারা কাজ করেন। আমি ভাইজানকে ডেকে আনি। (নাহিদের প্রস্থান) মিস্ত্রি : কিরে টেস্টার খুঁজতে এতক্ষণ লাগলে কাজ করবো কখন? সহকারী : উস্তাদ, টেস্টার পাওয়া যাচ্ছে না। মিস্ত্রি : টেস্টার রেখে কারেন্টের কাজ করতে আইছিস। যা শিগগির নিয়ে আয়। আমার বসে থাকার সময় নেই। (সহকারী প্রস্থানোদ্যত) প্লাসটা দিয়ে যা। (প্লাস দিয়ে সহকারীর প্রস্থান) হাতে কতো কাজ। এখন ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা মানে ১শ’ টাকা লস। প্লাস দিয়ে চেষ্টা করে দেখি। (চেষ্টা করতে গিয়ে শক করে) মিস্ত্রি : দুর- এত বছর ধরে কাজ করছি। কারেন্টের সাথে একটা বন্ধু বন্ধু ভাব হয়ে গেছে না! সামান্য ঝাড়া লেগেছে। এতে আমার কিছুই হবে না। (জুতো খুলে দূরে ফেলে সেজেগুজে কাজ শুরু করে। সুইচে হাত দিতেই আটকে ফেলে। সাথে সাথে ফাইনাল। সটান দাঁড়িয়ে থাকে লাশটা। প্রবেশ করে জাহিদ।) জাহিদ : আরে বাবা, মিস্ত্রি এখানে। আর ঘুরছি পাগলের মতো। উ কী গরম কাজ করতে করতে সারা শরীর গেছে। নাহিদ, ভাইয়া শিগগির তোয়ালেটা দে ঘামটা মুখে দি। (মোবাইল বাজে। কানে ধরে জাহিদ) হ্যালো, কী বললে- এখনো ট্রেন আসেনি। ন’টার ট্রেন ক’টায় আসবে? ঠিক আছে দাদু, তোমাকে টেনশন করতে হবে না। এদিকে আমরা ম্যানেজ করে নেব। (ফোন রেখে) ভাইয়া- (পাশের রুম থেকে একটা তোয়ালে এনে মিস্ত্রির ঘাম মোছাতে যায়। সাথে সাথে অ্যাকশন। একইভাবে মিস্ত্রির গায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নিষ্ঙপ্রাণ দেহ। (নেপথ্যে আইসক্রিম অলার হাঁকডাক।) কণ্ঠ : আইসক্রিম চাই আইসক্রিম (নাহিদের প্রবেশ) নাহিদ : ভাইজান, টাকা দাও- আইসক্রিম খাবো। (জাহিদকে দেখে) ও মিস্ত্রিকে সাহায্য করছো। কেন, হেলপার এখনো আসেনি? সেই কখন গেছে টেস্টার আনতে। অথচ এখনো ফিরলো না। ঠিক আছে তুমি কাজ করো ভাইজান, আমি পকেট থেকে টাকাটা বের করে নিচ্ছি। কণ্ঠ : চাই আইসক্রিম- নাহিদ : এই আইসক্রিম দাঁড়াও- (নাহিদ জাহিদের পকেটে হাত দিতেই আটকে যায়) (বাইরে ফকিরের ডাকাডাকি) কণ্ঠ : আম্মাজান, অচল ফকিররে দুইডা টাহা দ্যান। দেরি কইরেন না মা- (কারো সাড়া শব্দ না পেয়ে বারবার কলিংবেল বাজায়) কণ্ঠ : কী অইলোÑ কতা কননা ক্যান? আম্মাজন অচল, ফকিররে নিরাশ কইরেন না। (উঁকি ঝুঁকি দিয়ে কারো দেখা না পেয়ে ভেতরে ঢোকে) ফকির : আরে, সবাই খাড়াই খাড়াই ঘুমাইতাছে। বড় লোকদের ঘুমাইবার নতুন স্টাইল। নাকি ঘুমের ভান কইরা আছে। বাজান, দুইডা টাহা দ্যান। আরও দশ বাড়ি যাইতে অইবো। না না, সত্যি সত্যিই ঘুমাইতাছে। ঠিক আছে (চাপা কণ্ঠে) এতোদিন ২ আনা ৪ আনা দিয়ে বিদায় করছো। আজ সুযোগ পাইছি। পকেট হাতড়াইয়া সবকিছু নিয়া নিমু। (আস্তে আস্তে ওদের কাছে যায় এবং বিসমিল্লাহ বলে প্রথমে নাহিদের পকেটে হাত দেয়। সাথে সাথে ফাইনাল। জিহবা বের করে সটান দাঁড়িয়ে। প্রবেশ করে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির সহকারী।) সহকারী : সর্বনাশ! সর্বনাশ হয়ে গেছে। উস্তাদ, জাহিদ, নাহিদ, সবাই আটকে গেছে। দাদু, খালাম্মা, শিগগির একটা শুকনো বাঁশের লাঠি দাও। কারো সাড়া না পেয়ে খুঁজে লাঠি বের করে আঘাত করতেই সকলের নি®প্রাণ দেহ পড়ে যায়।) সামান্য ভুলে একি সর্বনাশ হয়ে গেল। (যবনিকাপাত)
আরও পড়ুন...