সুন্দরের পথে মেধাবী তরুণরাই মূল কান্ডারি     -মুস্তাগিছুর রহমান মুস্তাক

সুন্দরের পথে মেধাবী তরুণরাই মূল কান্ডারি -মুস্তাগিছুর রহমান মুস্তাক

সাক্ষাৎকার অক্টোবর ২০১৫

প্রশ্ন : আপনি জাতীয় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিশিল্পীÑ কিভাবে আবৃত্তিতে এত বড় সফলতা অর্জন করলেন?
রুমান হাফিজ
কানাইঘাট, সিলেট
উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ, আমি আবৃত্তি ও অভিনয়ে কয়েকবার জাতীয়পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছি। তবে স্বর্ণপদক একক অভিনয়ে পেয়েছি। ২০০১ সালে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই পুরস্কারটি প্রদান করেছিলেন। ১৯৯১ সালে কবিতা আবৃত্তিতে একবার রৌপ্যপদক পেয়েছি। পুরস্কার প্রদান করেছিলেন তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এ ছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন জাতীয় দিবসের প্রতিযোগিতাসহ আবৃত্তি ও অভিনয়ে অনেক পুরস্কার পেয়েছি। এ জন্য শুকরিয়া আল্লাহর কাছে। সবটাই মহান প্রভুর দয়া।
কবিতা আবৃত্তি মানেই হচ্ছে বারবার পাঠ বা পড়া। ছোটবেলা থেকেই কবিতার প্রতি বিশেষ আকর্ষণ ছিল। এ ক্ষেত্রে আমার মায়ের অবদান খুব বেশি। আমার মা পাকিস্তান পিরিয়ডে কবিতা আবৃত্তি করে রৌপ্যপদকসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর ছেলেও যেন ভালো কবিতা আবৃত্তি করতে পারে। সে জন্য ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক আমাকে বারবার তিনি কবিতা আবৃত্তি করাতেন। সেই সাথে স্কুলের প্রতিযোগিতায়ও অংশগ্রহণ করাতেন। পরবর্তীতে মায়ের সেই শিক্ষাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি মাত্র। তবে খুব বড় শিল্পী হতে পারিনি। কিন্তু আমি প্রতিদিন জোরে জোরে কবিতা পড়তাম। প্রথম দিকে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কবিতা আওড়াতাম, মুখস্থ করতাম। যখনই একা থাকি তখনই কবিতা পড়ি। এখনো সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আমি কবিতাকে খুব ভালোবাসি।
প্রশ্ন : ‘পান্ডুলিপি’ নাটকটি দেখে খুব রাগ হয়েছিল ‘স্বাগতম’-এর ওপর। যদিও জানতাম যে তা অভিনয়। পরে অন্য জায়গায় আপনাকে ওর সাথে গান গাইতে দেখে আপনার ওপরও রাগ হলো। এ ধরনের অভিনয় অভিনেতাদের মনেও এমন কোন প্রভাব ফেলে কি না?
আলম, খুলনা
উত্তর : দেখুন, যে অভিনয় মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলে না, তাকে কি অভিনয় শিল্প বলা যায়? প্রভাব ফেলতে পারাটাই কিন্তু অভিনেতার চূড়ান্ত সফলতা। তবে দর্শকদের সব প্রভাবই মনের মধ্যে নিতে হয় না, অভিনয়ে আমরা ভালো আর খারাপ দুটোই দেখাই। যেমন চোরের চুরি করা দেখাই, ঠিক তেমনি অন্য দিকে বিবেকবান মানুষ, ভালো মানুষও দেখাই।
প্রশ্ন : একজন মুসলিম হিসেবে আপনি অভিনয়কে কিভাবে দেখেন?
রোকনুজ্জামান
রিশখালী, হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ
উত্তর : আমার প্রতিটি কাজই আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিবেদিত। সব সময়ই ইসলাম সত্য ও সুন্দরের পক্ষে। মহান আল্লাহ তা’য়ালা মানবতার কল্যাণের জন্যই প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা)কে এই দুনিয়ায় প্রেরণ করেছিলেন।
মূলত সব কিছুই মানুষের নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু যদি খারাপ কাজকে প্রচার কিংবা উৎসাহিত করার জন্য অথবা শুধুমাত্র নিজেকে প্রকাশিত করার জন্য অভিনয়কে আমরা ব্যবহার করি তবে অবশ্যই সেটা হবে ইসলামপরিপন্থী।
প্রশ্ন : সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে একজন তরুণের ভূমিকা কতটুকু বলে আপনি মনে করেন।
নাঈম বিন আমিন
নবাবগঞ্জ, ঢাকা
উত্তর : তরুণরা উদ্দীপ্ত। তারুণ্য সুন্দর। সুন্দরকে আরো সুন্দর করে সংস্কৃতি। সুতরাং তরুণরা চাইলে সুন্দর সংস্কৃতি গ্রহণ করে আরো সুন্দর হতে পারে। একজন তরুণকে অবশ্যই ইসলামকে সঠিকভাবে বুঝতে হবে। মনে রাখবেন, সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশের জন্য ইসলামী সংস্কৃতির মর্মকথা, ইসলামী সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য, স্বরূপ ইত্যাদি অবশ্যই জানতে হবে এবং ব্যক্তিপর্যায়ে তা অবশ্যই নিজেকে পালনও করতে হবে। তরুণরাই পারে পৃথিবীকে বদলে দিতে। এ জন্য তরুণদের প্রথমেই সুস্থ সংস্কৃতির আদলে ব্যক্তি থেকে শুরু করে কর্ম ও পারিবারিক জীবনে নিজেকে বিশুদ্ধভাবে পরিবর্তন করে নিতে হবে। অসত্য, অসুন্দর, অকল্যাণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকতে হবে। কথা ও কাজে অবশ্যই বিনয়ী হতে হবে। নাটক, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, বক্তৃতা, বিবৃতি সকল কিছুই হতে হবে নান্দনিক। পোশাক পরিচ্ছদের ক্ষেত্রেও থাকবে রুচিশীলতা, নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের জন্য হতে হবে মননশীলতার ধারক-বাহক। তার আচার-আচরণে সর্বদা থাকবে বিনয়ী একজন আদর্শ মানুষের বৈশিষ্ট্য।
প্রশ্ন : ইসলামী সংস্কৃতির সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সাদৃশ্য বেশি না সঙ্ঘাত বেশি?
রাশেদুজ্জামান রাসেল
উত্তর : ইসলাম সত্য ও সুন্দরের কথা বলে। আমার মতে এটা সাংঘর্ষিক নয়। কারণ ঈদ যেমন ইসলামের সংস্কৃতি, ঠিক তেমনি এটি বাঙালিরও সংস্কৃতি। জামায়াতে নামাজ আদায়, রোজা রাখা, হজ পালন করা ইত্যাদি মুসলমানদের সংস্কৃতি। সেই সাথে বাঙালিরও সংস্কৃতি। পূজা করা হিন্দুদের সংস্কৃতি আবার বাঙালিরও সংস্কৃতি। কিন্তু সেটা মুসলমানদের সংস্কৃতি নয়। ধর্মভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি এটা তো থাকবেই। এখানে বাঙালি মানে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধÑ বাংলা ভাষাভাষী সবাই। যে উৎসবে ইসলামী শরিয়তবিরোধী কিছু রয়েছে ইসলাম সেটা অনুমোদন করে না। আর সেটাকে মুসলমানদের সংস্কৃতি বলাও যাবে না। তবে কেউ বাঙালি সংস্কৃতির নামে ইসলামী শরিয়তের পরিপন্থী হারাম কোন কিছু তাতে প্রবেশ করালে সেটা মুসলমানদের পালন করা উচিত হবে না।
প্রশ্ন : সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে কোন ধরনের নাটক, অভিনয় এবং অভিনেতা প্রয়োজন?
মো: আবু নাঈম
পঞ্চগড় নূরুন আলা নূর কামিল মাদ্রাসা
উত্তর : সুস্থ ধারার সংস্কৃতি বিকাশে চিন্তাশীল, বিচক্ষণ, ইসলামী সংস্কৃতি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান রাখেন এমন সংস্কৃতিকর্মী প্রয়োজন। প্রয়োজন আধুনিক মনস্ক এবং প্রযুক্তির জ্ঞানের অধিকারী চৌকস মানুষ। যাদের থাকবে ইসলাম এবং বর্তমান বিশ্ব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা। আরো যা প্রয়োজনÑ
*    মুসলিম সভ্যতার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কিত নাটক।
*    আদর্শিক শিক্ষণীয় শিশুতোষ নাটক।
*    সমাজের নানা অসঙ্গতির ওপর নির্মিত নাটক।
*    মহান মনীষীদের ওপর নির্মিত নাটক।
*    সহযোগিতা, সহমর্মিতা বৃদ্ধির জন্য নতুন নাটক।
*    আদর্শিক যাত্রা নাটক।
*    সকল জেলায়, থানায় ও ইউনিয়নে নাট্যদল গঠন। সংলাপভিত্তিক কিংবা ইমপ্রোভাইজেশন সংবলিত পথনাটক মঞ্চায়ন করা।
*    অভিনয় হতে হবে অবশ্যই কৃত্রিমতা বিবর্জিত।
*    অভিনয়ে অতি মাত্রায় কমেডি-নির্ভর নাটক-অভিনয় পরিহার করা ।
*    ঙাবৎ অপঃরহম বা অতি-অভিনয় না করে বাস্তববাদী অভিনয় করা।
*    নাটকের চরিত্রের বিষয়বস্তুকে অভিনেতার নিজ জীবনের সাথে একেবারে মিলিয়ে অভিনয় করা।
*    কারো মর্যাদা ক্ষুণœ হয় এমন কোন গেটাপ, মেকাপ, পোশাক পরিচ্ছদ ব্যবহার না দেয়া।
*    দাড়ি-টুপির ইসলামী লেবাসের অপব্যবহার না করা।
*    অভিনয়ে অতিরিক্ত কৌতুকনির্ভর না হওয়া।
*      আবেগ নয়, বিবেকবান ত্যাগী নাট্যাভিনেতা।
*    পরিশ্রমী এবং বিনয়ী নাট্যকর্মী।
*      পদের প্রতি লোভহীন, সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী নাট্যকর্মী।
*    ইসলামী সংস্কৃতির সঠিক ধারণা পোষণকারী নাট্যকর্মী।
*    নিজ প্রচারে ব্যস্ত না হয়ে বরং নাটকের প্রয়োজনে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা নাট্যাভিনেতা।
*    সুশৃঙ্খল, চরিত্রবান, আদর্শিক নাট্যকর্মী। প্রতিভাধর, সুকুমারবৃত্তি সম্পন্ন নাট্যাভিনেতা।
প্রশ্ন : নাট্যজগতে কিভাবে এলেন? এর জন্য কী ধরনের প্রেরণা পেয়েছেন?
মো: আবু নাঈম
হাড়িভাসা, পঞ্চগড়
উত্তর : নাট্যজগতে আসার পেছনে ফুলকুঁড়ির নাটক আমাকে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমি তখন ঢাকার একটি হোস্টেলে থাকতাম। হঠাৎ একদিন শুনলাম শিল্পকলায় ফুলকুঁড়ির নাটক হবে। নাটকটি দেখার জন্য আমার কাছে টিকিট কেনার মতো টাকাও ছিল না। তখন আমার অনেক দিনের জমানো মাটির ব্যাংকটি ভেঙে যা পয়সা হয়েছিল তা নিয়েই ঢাকার শিল্পকলায় নাটকটি দেখার জন্য গিয়েছিলাম। এবং সেদিনের অভিনয় দেখে আমি খুবই অনুপ্রাণিত ও মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেটাই ছিল প্রথম অনুপ্রেরণা। এরপর আরো নাটক দেখার সুযোগ হয়েছিল। বিশেষ করে সাইমুমের সানজিদের একক অভিনয়। আর নাট্যাঙ্গনে হাতে খড়ি হয়েছিল আমাদের প্রতিষ্ঠিত সর্বপ্রথম মিল্লাত সাংস্কৃতিক সংসদের মাধ্যমে। পরে নাট্য-উস্তাদ শাহ আলম নূর ভাইয়ের প্রচেষ্টায় এখনো গ্রানাডা নাটকে, পরবর্তীতে সাইমুমের সাথে এসে নাটকের অঙ্গনে যাত্রা। এ ক্ষেত্রে আবু হেনা আবিদ জাফর ও নাসিমুল হুদা নওশাদ ভাই বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। পরে বাংলাদেশ থিয়েটার প্রাঙ্গণ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার, নাট্যমঞ্চ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নাট্যনির্দেশক সমিতি ইত্যাদিতে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল।
প্রেরণা পেয়েছি যাদের কাছ থেকে, এর মধ্যে অনেকের নাম বলতে হয়। শ্রদ্ধেয় অভিনেতা আরিফুল হক, কবি মতিউর রহমান মল্লিক, সাইফুল্লাহ মানছুর, শরীফ বায়জিদ মাহমুদ, হাসনাত আব্দুল কাদের, আবু হেনা আবিদ জাফর, সালমান আল আযমী, শাহজাহান কবির সাজু, আহসান হাবীব খানের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। পরবর্তীতে অভিনেতা বদিউর রহমান সোহেল, আব্দুল্লাহিল কাফি, স্বজন জহির, মাসুদ রানা, আব্দুল গণি বিদ্বান, নজরুল ইসলাম শাওন, আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, হুসনে মোবারক, সবুজ, মেহেদী, সাইমুমের বর্তমান থিয়েটার পরিচালক মুহিবুল্লাহসহ আরো অনেকে, যারা আমার এ অভিনয়ের সাথে বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এবং যাদের অভিনয় ভালো লাগে। সত্যিই তারা প্রতিভাধর ও শক্তিশালী অভিনেতা। বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন শাহাদাতুল্লাহ টুটুল ও শফিউদ্দীন মাকসুদ। জগন্নাথের স্যার হিরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, রতন সিদ্দিকী স্যারের অবদানও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, আজীবন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন : আমাদের দেশের যুবসমাজ দিনদিন অপসংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ছে- এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
এস এম শাহীন
টিবি ক্রস রোড, খুলনা
উত্তর : বেশি বেশি সুস্থধারা চর্চা করা, যুবসমাজকে নতুন করে সুন্দর কিছু দেখানো। আবৃত্তি, অভিনয়, গান, নাটক, সিনেমা, চলচ্চিত্র সকল কিছুতেই সুস্থ সংস্কৃতির জন্য দক্ষ ও যোগ্য উন্নত চরিত্রের লোক তৈরি করা।
হ    এ জন্য নিজ পরিবারের মধ্য থেকে মেধাবী প্রতিভার অধিকারী ছেলেটিকে প্রথমেই এ অঙ্গনের জন্য তৈরি করা।
হ    সুস্থ ধারার সংস্কৃতি হুট করে সম্ভব নয়, এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ধাপে ধাপে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে সুস্থধারার শিল্পীগোষ্ঠী, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে যথাসম্ভব ভালোবাসা, পরামর্শ প্রদান, আর্থিক, মানসিক উৎসাহ প্রদান করে সহযোগিতা করা।
প্রশ্ন : আপনার জন্মস্থান কোথায়? আপনি কাকে বেশি ভালোবাসেন, বাবাকে না মা কে?
সৈয়দ মুয়িদুল ইসলাম
কালিহাতা, উজিরপুর, বরিশাল
উত্তর : জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানায়। আব্বা-আম্মা দু’জনকেই খুব বেশি ভালোবাসি। আব্বা অনেকদিন আগেই ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর জন্য সবার কাছে দোয়া চাই, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন। তিনি ইসলামী সংস্কৃতিকে খুব ভালোবাসতেন। মৃত্যুর আগে সংলাপ নাটকের বিশেষ একটি দৃশ্যে তিনি অভিনয় করেছিলেন। আমার মা নিরহঙ্কারী অভিনেতা হওয়ার পরামর্শ দেন সবসময়।
প্রশ্ন : ‘সত্য বল, সুপথে চল ওরে আমার মন’- এই সংলাপটি কোন নাটকে বলেছেন?
সুলতান মাহমুদ
উত্তর দুর্গাপুর, লক্ষ্মীপুর সদর
উত্তর : এটা মরমী শিল্পী লালনের একটি গানের অংশবিশেষ। কোন নাটকে আমি এই সংলাপ বলেছি মনে পড়ছে না। তবে ‘লোকনায়ক’ নাটকে এই সংলাপের ব্যবহার আছে প্রচুর।
প্রশ্ন : আপনি কিভাবে একজন দক্ষ মঞ্চকারিগর ও মঞ্চ-অভিনেতা হয়েছেন?
উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ। আসলে আমি মোটেও একজন দক্ষ মঞ্চকারিগর কিংবা মঞ্চ-অভিনেতা নই। তবে চেষ্টা করছি মাত্র। শেখার কোন শেষ নেই, প্রতিদিন নতুন নতুন কত সব ঘটনাই না আমাদের সামনে ঘটে যাচ্ছে, কয়টাই বা আমরা মনে রাখি, বা রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু নাট্যকর্মীদের প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে খুব বেশি মনে রাখতে হয়, কারণ প্রতিটি মুহূর্তের প্রতিটি ঘটনাই এক একটি নাটক। আমিও সেগুলো অনুধাবনের চেষ্টা করছি মাত্র। আমি যেখানেই নাটকের ক্লাস পেয়েছি, সেখানেই ছুটে গেছি, নিষ্ঠার সাথে নাটকের মহড়ায় অংশগ্রহণ করতাম, নাটকের মহড়ায় কখনো দেরি করে যেতাম না। মঞ্চের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় নিজের কাজ বলে মনে হতো, কেউ নাটক নিয়ে অবজ্ঞা করলে ভীষণ কষ্ট পেতাম।
একবার টিএসসিতে নাট্য প্রশিক্ষণ ক্লাসে ১ মিনিট দেরি করে এসেছিলাম। প্রশিক্ষক আমাকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেন। আমি নেটের দরজার ভেতর দিয়ে সিঁড়িতে বসে সেই ক্লাসের নোটগুলো করেছিলাম। পরে প্রশিক্ষক আমার আগ্রহ দেখে আমাকে ক্লাসে ঢোকার অনুমতি দিয়েছিলেন। আদরও করেছিলেন। সবকিছুই তৈরি হয় মনের গহিনের আন্তরিকতা, এ মহান শিল্পের প্রতি অনুরাগ ও ভালোবাসার সমন্বয়ে।
প্রশ্ন : মঞ্চ পরিচালনায় একজন পরিচালকের ভূমিকা কী? পরিচালকের কোন কোন গুণ থাকা দরকার?
মুহাম্মদ ইসলামূল হক তুষার
জলদী, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম
উত্তর : মঞ্চ পরিচালকের নানাবিধ ভূমিকা রয়েছে। নাট্য পরিচালনা সংক্রান্ত অনেক বই এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো পড়ে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন। তবে পরিচালকের ভূমিকার ওপরেই নির্ভর করে নাটকটি কেমন কিংবা কত সুন্দর হবে। নাট্যকার নাটক লিখেন আর পরিচালক নাটকের মায়ের ভূমিকা পালন করেন অর্থাৎ নাট্য-বিন্যাস, প্রি-প্রোডাকশন, পোস্ট-প্রোডাকশনসহ নাটকের বাজেট নির্ণয়, মঞ্চ নির্বাচন, নাটকের অভিনেতা ও অভিনেত্রী বাছাই, মহড়া বা প্রশিক্ষণ, সংলাপ প্রক্ষেপণ, দৃশ্য বিন্যাস, ব্লকিং, গেটআপ, মেকাপ নির্দেশনা, পোশাক পরিকল্পনা, সেট পরিকল্পনা, আলোক পরিকল্পনা, মিউজিক পরিকল্পনাসহ অসংখ্য কাজ কিন্তু নাট্য পরিচালককে অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে করে যেতে হয়। মহড়া থেকে শুরু করে নাটকের রান থ্রো এবং মঞ্চায়ন পর্যন্ত পরিচালকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন পরিচালকের গুণের মধ্যে সকল অভিনেতা-অভিনেত্রীর প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি, অভিনেতা নির্বাচনে তাৎক্ষণিক বুদ্ধি ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, অত্যন্ত ধীশক্তি, শিল্পমন, পরিশ্রমী, মেধাবী ও বিনয়ী, নন্দনতত্ত্ব সম্পর্কে অভিজ্ঞ, নানাবিধ গুণের অধিকারী হতে হয়।
প্রশ্ন : অপসংস্কৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে আমাদের তরুণ সমাজের করণীয় কী?
মো: সাহেদুজ্জামান সাকিব
কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট
উত্তর : যিনি এ প্রশ্নটি করেছেন তার কাছে এর অর্থ হয়তো খুবই পরিষ্কার। অপসংস্কৃতি একটি ভিন্ন বিষয়। নোংরা কোন কিছু সংস্কৃতি হতে পারে না। সংস্কৃতি জিনিসটাই অনেক সুন্দর। আর আমরা যা দেখছি সেটা সংস্কৃতিও নয়, অপসংস্কৃতিও নয়, এটা হলো অশ্লীলতা আর নোংরামি। এগুলো নাটক, গান, সিনেমা ইত্যাদি হতে পারে না। বরং সংস্কৃতি হলো শাশ্বত সুন্দর এবং শিক্ষণীয়। এর জন্য তরুণ সমাজকে প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বড় বড় অভিনেতা, শিল্পী, গায়ক, নায়ক, আবৃত্তিকার, উপস্থাপক, সংবাদপাঠক তৈরিতে কাজ করে যেতে হবে। আমরা নিজেরা যেমন সৎ সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করবো, ঠিক তেমনি অভিনয়ের যে মানবকল্যাণের সৌন্দর্য তা দর্শকদের মাঝে তুলে ধরবো এবং তা বাস্তবজীবনেও নিজেরা কাজে লাগাবো।
প্রশ্ন : একজন দক্ষ আবৃত্তিকার কিভাবে হওয়া যায়?
নাছির উদ্দিন নাবিল
শেরপুর, বগুড়া
উত্তর : আবৃত্তিকার হওয়ার প্রথম শর্ত হলো কবিতাকে ভালোবাসতে হবে, তারপর কবিতা বারবার পড়তে হবে। এরপর মুখস্থ ও ঠুটস্থ করতে হবে। তারপর কবিতাকে কাব্যের অলঙ্কার দিয়ে কণ্ঠশীলনের মাধ্যমে প্রমিত উচ্চারণে, কবিতার তাল, লয়, ছন্দে তৈরি করে বারবার পড়তে হবে।
কবি তার কবিতায় যা বোঝাতে চেয়েছেন, তা আবৃত্তিকার তার কণ্ঠ দিয়ে সুন্দর করে উপস্থাপন করবেন। আবারো বলছি- শুদ্ধ উচ্চারণ, কবিতা নির্মাণে কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা ছাড়া আবৃত্তি শিল্প আয়ত্ত করা সম্ভব নয়। নিয়মিত চর্চা করলে এ অসাধারণ শিল্পটি হয়ে উঠতে পারে সুস্থ সংস্কৃতি বিকাশের এক অনন্য মাধ্যম। প্রত্যেক শিল্পীর জন্য আবৃত্তি শিক্ষা খুবই গুরুত্বপর্ণ। প্রত্যেকের উচিত এটি চর্চা করা। প্রচুর আবৃত্তি করলেই দক্ষ আবৃত্তিকার হওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন : বর্তমানে সারা বিশ্ব অপসংস্কৃতিতে নিমজ্জিত। এই অপসংস্কৃতি থেকে কিভাবে ছাত্রসমাজকে রক্ষা করা যায়?
হাবিবুর রহমান
লাকসাম, কুমিল্লা
উত্তর : এ প্রশ্নের উত্তর আগেও দিয়েছি। সুন্দর ইসলামী সংস্কৃতি বিনির্মাণ করে সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি এগুলো প্রতিটি মানুষের মধ্যেই বসবাস করে, কারো কম আবার কারো বেশি, কিন্তু এগুলো গায়ের জোরে বন্ধও করা যাবে না।
শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির গুরুত্ব অনেক বেশি। একটি জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনে সংস্কৃতির এ মাধ্যমগুলো ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাই মনুষ্যত্ব ধ্বংস করার জন্য যে ভয়াবহ নোংরা, অশ্লীল, পারিবারিক বন্ধন নষ্ট করার আকাশ সংস্কৃতি, ইন্টারনেট ও মিডিয়াযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা থেকে সবাইকে বাঁচাতে প্রতিটি স্তরের বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। নতুন নতুন কবিতা, গান, নাটকের মাধ্যমে সমাজের নানা অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরতে হবে। আনতে হবে নতুন সূর্য। সুন্দরের পথে মেধাবী তরুণরাই মূল কান্ডারি।
প্রশ্ন : ‘হাট্রুয়া’ নাটকে চন্ডীচরণ চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তার প্রকৃত নাম কী?
মুসলিহা তাফহীম
পিয়ারাবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
উত্তর : আব্দুল গণি বিদ্বান। একজন শক্তিমান অভিনেতা, যিনি অভিনয়ের সাথে নিজেকে খুব আপন করে নেন অতি সহজেই।
প্রশ্ন : আপনার ছেলেমেয়ে কতজন এবং তারা কী করে?
আবির মাহমুদ
পিয়ারাবাগান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
উত্তর : দু’টি মেয়ে। একজন ক্লাস ওয়ানে। নাম মুস্তাবশীরা তুবা। আরেকজনের বয়স এক মাসের মতো। নাম মাদিহা তাবাস্সুম তইবা।
প্রশ্ন : আবৃত্তি শিল্পের মাধ্যমে আমাদের দেশে ইসলামকে প্রসারিত করা কতটুকু সম্ভব? এর জন্য বর্তমানে যে ধরনের আবৃত্তি করা হয় তাতে কোন বৈচিত্র্য আনয়নের প্রয়োজন আছে কি?
মাহমুদুল হাসান
জয়াগ, সোনাইমুড়ি, নোয়াখালী
উত্তর : প্রতিটি কাজই ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য নিবেদিত। আবৃত্তিও একটি দাওয়াতি কাজের অন্যতম মাধ্যম। আল্লাহর রাসূল (সা) কবিদের এতটাই সম্মান করতেন যে তাঁর দরবারে কবিদের বসার জন্য নিজের চাদর খুলে দিয়েছিলেন। বৈচিত্র্যের নামই হচ্ছে আবৃত্তি। আবৃত্তিকার কবিতার ভাষা বুঝে তাতে আবেগ, রঙ, রস, তাল, ছন্দ, স্কেল লাগিয়ে সুন্দর করলে দোষ কি? নতুনত্ব হলেতো আরো ভালো। আবার নতুনত্ব আনতে গিয়ে যেন লেজে গোবরে না হয়।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ