সেই রাত -রফিকুল ইসলাম রিপন

সেই রাত -রফিকুল ইসলাম রিপন

তোমাদের গল্প নভেম্বর ২০১৪

ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে অফিস থেকে ফিরছিলাম। সময়টা ছিলো সন্ধ্যা আর বিকালের সন্ধিলগ্ন। গোধূলি বলা চলে, আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা আর বনের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তায় মৃদু অন্ধকার। মেঘের গর্জন আর বিদ্যুৎ ঝলকানি রীতিমত ভুতুড়ে পরিবেশের জানান দিচ্ছে। দ্রুত পায়ে চলা সত্ত্বেও আজ মনে হচ্ছে রাস্তাটা অন্তহীন। এভাবে শরীর খারাপ ছাড়া কিছু হবে না। বিদ্যুতের ঝলকানিতে বনের বুক চিরে একটা পুরনো বাড়ি দৃষ্টিগোচর হলো। দেড় মাস ধরে এখানে আছি, আগে নজরে পড়েনি। তবে আজ... অত ভাবার সময় নেই। পা দুটোকে একটু হালকা করতে হবে। এগিয়ে গেলাম বারান্দায়, ধপ করে বসে পড়লাম। সারা গা দিয়ে টিউবওয়েলের মতো জল গড়াচ্ছে। কোটটা খুলে ঝোপের ওপর মেলে রাখলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। ১. কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম মনে নেই। লাফিয়ে উঠলাম খিল খিল হাসির শব্দে। কোটটাকে যথাস্থানে না পেয়ে অবাক হলাম। ঘুমের রেশ তখনো কাটেনি। মেঝেতে একটা দাগ দেখলাম। সম্ভবত কোন কিছু টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কৌতূহলী হয়ে ওটাকে ধরে হাঁটতে লাগলাম। যত এগোচ্ছি হাসির শব্দ তত গাঢ় হচ্ছে। আমার তখনো মনে হয়নি এই বৃষ্টিতে আমি একা নই। মনে হয়নি হাসিটা অস্বাভাবিক কিছু নয় তো? কোটটাকে একটা বড় রুমের মেঝেতে আবিষ্কার করলাম। হাসির শব্দটা ততক্ষণে আর নেই। থমথমে নীরবতা। সহসা মনে পড়লো কোটটাকে এখানে কে আনলো? বিন্দু মাত্র ভয় আমার সারা দেহে ঠাণ্ডা স্রোত বইয়ে দিলো। ২. বৃষ্টি মোটামুটি কমেছে। আবছা আলোতে পুরো বাড়িটাই দেখতে পাচ্ছি। যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম। আবার সেই হাসির শব্দ। প্রাণ পাখি বিপদের আশঙ্কা জানান দিচ্ছে। তবুও কেন জানি থমকে দাঁড়ালাম। রহস্যের অন্তিম না দেখে শান্তি নেই। আবার সেই বড় রুমটাতে ফিরে আসতে হলো। এবার রুমটাতে কয়েকটা মেয়েকে আবিষ্কার করলাম। ওরাই হাসছিলো। ওরা উল্টো মুখ করে বসে ছিলো। কিছুটা সাহস জাগলো মনে। ভয় জড়ানো গলায় মৃদুকণ্ঠে প্রশ্ন করলাম কে? কোন উত্তর পাইনি। হয়তো নিজেদের হাসি তামাশার মাঝে এই ক্ষীণ আওয়াজ পাত্তা দেয়নি। আবার এবার একটু জোরেই বললাম আপনারা কারা? ওরা ঘুরে তাকালো। আমার চক্ষদ্বয় ছানাবড়া। ঐ দৃষ্টি ভয়ার্ত ছিলো। ওদের চোখ স্বাভাবিক ছিল না। ওদের মুখ ফ্যাকাসে কিন্তু রহস্যের হাসিতে আবৃত ছিলো। সাদা, এলো চুলগুলো যেন জেগে উঠলো ওদের। ওরা মানুষ নয়, তবে কারা? আগুন বেরোচ্ছিলো ওদের চোখ দিয়ে। ওরা হাসছিলো। তবে এবার ওদের হাসি আমাকে অবাক করেনি। শূন্যে ভেসে এগিয়ে আসছিলো ওরা। আমার পা অনড় হয়ে যাচ্ছিলো। দৃষ্টিদ্বয় প্রসারিত করে দেখছিলাম নির্মতা। আমি যেন বোবা হয়ে যাচ্ছিলাম। নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে গলা চিরে আমি একটি আওয়াজ করেছিলাম ‘আল্লাহু আকবার’। প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। পেছনে ফেলেই সেই ঝড়ো রাতে আশ্রয়দাতা ভুতুড়ে বাড়িটাকে। এবার রাস্তাটা খুব দ্রুত ফুরাতে লাগলো। সেই সাথে আমার মস্তিষ্কের জাগ্রত ভাবটাও। পড়ে গেলাম... বদলি হয়ে ঢাকা এসেছি। সেদিনের সেই রাতটা আমার মনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে, কাউকে বলিনি। হয়তো পাগল বলবে, কী দরকার সেধে অপবাদ ঘাড়ে তোলার? আজও নগরজীবনে বৃষ্টির রাতে এই হাসি, সেই দৃষ্টি মনে পড়ে শিউরে উঠি। আজ আর বৃষ্টিতে মাঝপথে থামি না।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ