সেকেন্ড জেনারেশন

সেকেন্ড জেনারেশন

তোমাদের গল্প মার্চ ২০১৫

আহসান আমাল সায়েম#

তাড়াহুড়ো করে দৌড়াচ্ছে আকাশ। আজ বোধ হয় সাগরের ধোলাই খেতে হবে। বেশ দেরি হয়ে গেছে আজ। তবে নতুন ছাত্র বলে স্যার একটু ছাড় দিতেই পারেন। আকাশ গ্রামের ছেলে। কিন্তু শহরে একটা ভালো স্কুলের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। ভালো ফলাফল করার আশায়। ওর বাবা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। আর তার ছোট চাচা দেশের জীব গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান জীববিজ্ঞানী। আকাশের স্বপ্ন সে বড় হয়ে তার চাচার মতো বিজ্ঞানী হওয়া। ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আকাশ হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। আশরাফ-২ স্যারের ক্লাস চলছে। ওদের স্কুলে দু’জন আশরাফ স্যার একজন রাগী আর একজন দয়াশীল। রাগীজন হলেন আশরাফ-১ আর দয়াশীল ও লাজুক যে তিনি আশরাফ-২। আকাশ : মে আই কাম ইন স্যার? স্যার : ও, আসমান এসো, এসো। আকাশ : স্যার আমার নাম আসমান না আকাশ। স্যার : ওহ, স্যরি ভেতরে এসো জায়গা নাও। আকাশ ভেতরে এসে নীলের পাশে বসল। আকাশ এ স্কুলে এসেছে মাত্র এক সপ্তাহ হলো, এর মধ্যে নীলের সাথে ওর একটু বেশিই খাতির হয়ে গেছে। নীলের পাশে বসেই ওদের কথা বলা শুরু হয়ে গেল। নীল : আকাশ, ভালো আছো? আকাশ : হ্যাঁ, তুমি ভালো আছ তো? নীল : হ্যাঁ, জানো আকাশ আমার একটা গুণ আছে। আকাশ : কী গুণ? নীল : আমি সবার মনের কথা বুঝতে পারি। আকাশ : কিভাবে? নীল : সেটাই তো আমার গুণ কেউই পারে না শুধু আমি পারি। আকাশ : বলো তো আমি কী ভাবছি? নীল : ভাবছো, তোমার শরীরটা ভালো নেই। জ্বর জ্বর লাগছে। ঠিক না? আকাশ : হুম, বলো তো, এখন কী ভাবছি? নীল : ভাবছো তোমার ইচ্ছা বড় হয়ে এমন দু’টি মেশিন বানাবে যা দিয়ে মানুষের মনের কথা জানা যায় আর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মুহূর্তেই স্থানান্তরিত হওয়া যায়। আকাশ : হ্যাঁ ঠিকই তো। আমি এসবই ভাবছি। নীল : একটা কথা বলি, কিছু মনে করবে না। আকাশ : বলো! নীল : তুমি যেটা ভাবছো সেটা তোমার পরবর্তী প্রজন্মও করতে পারবে না। আকাশ : হতে পারে তবে আমি আমার চেষ্টা অব্যাহত রাখব। এর অনেকদিন পর একদিন রাতে হঠাৎ করে লোডশেডিং হলো। সেদিন ছিল খুব গরম, তাই আকাশ গেল ছাদে। ছাদে গিয়ে দেখল কে যেন বসে আছে। কাছে গিয়ে দেখল নীল। আকাশ নীলের দিকে তাকিয়ে নিলের পাশে বসল। তারপর বলল আকাশ : নীল তোমার বাড়ি কোথায়? নীল : জানতে চাও? আকাশ : হ্যাঁ, বলো। (নীল আকাশে একটা তারাকে লক্ষ্য করে বলল) নীল : ঐ আমার বাসস্থান। আকাশ : নীল, তুমি কী পাগল হয়ে ওটাতো একটা উজ্জ্বল তারা। নীল : হ্যাঁ ওখানেই আমরা থাকি। ঐ গ্রহটা অনেক বড়। তোমাদের সূর্যের ৯ কোটি গুণ বড়। আর পৃথিবী থেকে অনেক, অনেক অনেক দূরে। (আকাশ এবার সিরিয়াসভাবে নীলের কথাগুলো শুনছে আর কথা বলছে) আকাশ : তাহলে তুমি পৃথিবীতে কেন এলে? নীল : বলব, বলব, সব বলব। (নীলের এ কথায় আকাশ একটু মুখ মোচড় দিল কিন্তু অন্ধকারে নীল তা টের পায়নি) আমাদের গ্রহের নাম লুসোমিকো। আমাদের পাশের গ্রহটির নাম স্ট্রিপোকো। লুসোমিকোতে প্রাণী আছে ১২৫ জন আর সিন্ট্রপোকোতে প্রাণীর সংখ্যা ৩৬০ জন। গল্পের এ পর্যায়ে আকাশের হাসি পেল। কারণ এই স্কুলেই তো ৩ হাজারের বেশি মানুষ আছে। সিট্রপেকোতে প্রাণীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমাদের দেশেও ওরাই শাসন করে। এক পর্যায়ে ওদের কাছ থেকে অর্ডার এলো সবার ডিজিটাল নাম রাখার জন্য। কারণ গ্রহগুলোকে উন্নত করতে হলে যোগাযোগের উন্নয়নের পাশাপাশি ছোট দুই অক্ষরের নামও রাখতে হবে। যেমন : ট্রেলি, লুকা, মিসো এসব। কিন্তু আমার বাবা শখ করে আমার নাম দিল ফান্টুস। (নাম শুনে আকাশের হাসি পেলো) তিন অক্ষরে নাম বলে তারা আমাদের ওদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করল। তখন আমার বাবা আমাকে মুহূর্তে গায়েব হওয়ার মেশিনে করে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিল। আকাশ : মুহূর্তে গায়েব হওয়ার মেশিন!!! নীল : হ্যাঁ আমাদের গ্রহের বিজ্ঞানীরা মিলে এমন দু’টি যন্ত্র আবিষ্কার করেছে যার মাধ্যমে যেকোনো গ্রহের প্রাণীর মনের ভাষা বোঝা যায় আর মুহূর্তে গায়েব হয়ে যাওয়া যায়। আকাশ : তা, তোমরাও বুঝি বাংলা ভাষায় কথা বলো। নীল : না! তবে আমরা সব গ্রহের সব ভাষায় কথা বলতে পারি। আকাশ : তা তোমাদের চেহারাও বুঝি মানুষের মতো? নীল : না! পৃথিবীতে এসেছি বলে মানুষের রূপ নিয়েছি। আকাশ : তা তুমি যে আমাকে এসব বললে আমি যদি এসব কাউকে বলে দেই। নীল : তা তোমার ব্যাপার। তবে সত্য বলা আমাদের ধর্ম। সত্য না বললে আমরা ধ্বংস হয়ে যাই। হঠাৎ নীলের হাতঘড়িতে অ্যালার্ম বেজে উঠল। নীল হাততালি দিয়ে বল। ‘ইয়েস’ - কী ইয়েস? - আমার বাবা বলেছিল আমার হাতঘড়িতে অ্যালার্ম বাজলে আমি নিজ গ্রহে ফিরে যেতে পারব। আলবিদা বন্ধু। এ কথা বলেই নীল একটা মোবাইলের মতো ছোট যন্ত্রে একটা বাটন চাপল সাথে সাথে ও সবুজ রঙ ধারণ করে দানবের আকার ধারণ করল। তারপর আর একটা সুইচ টিপ দিতেই গায়েব হয়ে গেল। এখন আকাশের বিশ্বাস হলো যে নীলের কথাই ঠিক ও ভিনগ্রহের প্রাণী। হঠাৎ আকাশের গা ছম ছম করতে লাগল। বমি বমি ভাব আর মাথা ঘুরাচ্ছে। চোখে সব ঝাপসা দেখছে। ঝাপসা চোখেই দেখল ছাদের ওপর মোবাইলের চেয়ে ছোট পাঁচ বাটনের একটা যন্ত্র। সেটা হাত দিয়ে উঠিয়ে পকেটে পুরল। তারপর মাথা ঘুরিয়ে গিয়ে পড়ল পাশের বাড়ির উঠানে তুলার বোঝার উপর। তারপর জ্ঞান হারালো। জ্ঞান ফিরল হাসপাতালে বসে চোখ মেলেই সে দেখল ছোট চাচা তার পাশে বসে আছেন। আকাশ তার চাচার কাছে সব খুলে বলল। সব শুনে চাচা বললেন, দুর বোকা এসব হ্যালোসিনেশন হবে। কিন্তু আকাশ এখন জানে তার চাচা মনে মনে ভাবছে জ্ঞান হারিয়ে ছেলেটার মানসিক সমস্যা হয়েছে বোধ হয়। আকাশের হাতে ৫ রঙের ৫টা বাটন ওয়ালা একটা রিমোট দেখে চাচা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওটা কী রে?’ আকাশ বলল, না, কিছু না। একটা রিমোট’। আকাশ মনের কথা জানার মেশিনকে বালিশ দিয়ে ঢেকে রাখল।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ