স্বপ্ন  -সা’দ সাইফ

স্বপ্ন -সা’দ সাইফ

তোমাদের গল্প জুলাই ২০১৮

সামনের মাস থেকেই রূপনের এইচএসসি পরীক্ষা। ছাত্র হিসেবে বেশ ভালো সে। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে এলাকায় তাক লাগিয়েছিল সে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় তাই তার ওপর প্রত্যাশাটা একটু বেশিই। নিম্নবিত্ত পরিবারের রূপন বাল্যকাল থেকেই বেশ বিনয়ী। অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে উঠলেও তার মধ্যে ছিল না কোন অভিযোগ। কাউকে কখনো বুঝতে দিত না তাদের অসহায়ত্বের কথা। তিন সদস্যের পরিবার তাদের। বাবা-মার একমাত্র সন্তান হওয়ায় বাড়তি স্নেহ থাকে রূপনের ওপর। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবার আয় দিয়েই কোনমতে সংসার চলে তাদের। তার ওপর ঠিকমত কাজও হয় না। যে কারণে রূপনের পড়ালেখার খরচ জোগাতে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয় রূপনের আব্বুর। কিন্তু রূপনের আব্বু তার ছেলেকে পড়ালেখা শেখানোর ব্যাপারে বেশ বদ্ধপরিকর। যতই কষ্ট হোক না কেন রূপনকে তিনি উচ্চশিক্ষিত করাবেন। কেননা তিনি অর্থাভাবে পড়ালেখা করতে না পারলেও তার একমাত্র ছেলেকে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করবেন। এটা তিনি তার অন্তরে লালন করেন বেশ ভালোভাবেই।
এভাবে দিন যেতে যেতে যথারীতি পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে এলো। পরীক্ষার দিন মা-বাবা ও পাড়া প্রতিবেশীর দোয়া নিয়ে পরীক্ষা দিতে চলে গেল রূপন। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলল এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে রূপনের মধ্যে চনমনে ভাবটা দেখা গেল বেশ। রূপনকে এবার প্রস্তুতি নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য। কিন্তু বিপত্তিটা বাধল অন্য জায়গায়, একটা বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়া, সেখানে থাকা-খাওয়া ইত্যাদি নানা সমস্যা ঘিরে ধরল রূপনের আব্বু-আম্মুকে। একেতো অর্থনৈতিক সমস্যা অপরদিকে রূপনের বাড়ি ছাড়া অন্য পরিবেশে খাপ-খাওয়ানোর একটু জটিল সমীকরণ। তারপরও সব সমস্যার ঊর্ধ্বে রূপনের আব্বু এলাকার এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় রূপনকে বাড়ি থেকে ৪০কিলোমিটার দূরে একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাল। বড় ভাইয়ের পরিচিত হওয়ায় কোচিং খরচ অনেক কম হলো রূপনের। বাড়ি থেকে কোচিং সেন্টারে যাওয়ার পর রূপনের খুব খারাপ লাগল। কিন্তু কিছুই করার নেই। তাকে যে তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে। এরই মধ্যে রূপনের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলো। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে জিপিএ ৪.৯৪ পেয়ে মনটা দুমড়ে মুচড়ে গেল রূপনের।
প্রত্যাশিত ফলাফল না পেয়ে অঝোরে কাঁদতে লাগল সে। তার বন্ধুরা তাকে যথাসাধ্য সান্ত¡না দিতে লাগল। কিন্তু ক্রমশই যেন তার চোখ মুখ কান্নার নোনাজলে ভারী হতে থাকে। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কিছুদিন চলার পর সে আবার স্বাভাবিক হয়ে আসে। তার মনে এবার অন্যরকম জিদ চেপে বসে। সে তার সর্বোচ্চ পরিশ্রম দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামক সোনার হরিণে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেই। সেই সঙ্কল্পানুযায়ী সে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতে থাকে। এক সময় কাক্সিক্ষত ভর্তি পরীক্ষার দিন ঘনিয়ে আসে। ভর্তি পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রথমে সে নার্ভাসনেস অনুভব করতে থাকে। কিন্তু অত্যন্ত আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসের বলে সে তার দুর্বলতাকে দূর করে বেশ ভালোভাবেই পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন দিনের মাথায় তার ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেয়। ফলাফলে সে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় ও তার এলাকার মানুষদের। খ ইউনিটে ৭ম স্থান অধিকার করে রূপন। এ খবর শোনার পর তার আব্বু-আম্মু প্রথমেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। রূপনের আব্বু-আম্মু আজকে পৃথিবীর সবচে সুখী মানুষ। কেননা রূপন তাদের স্বপ্ন ও পরিশ্রমকে সার্থক করেছে। তাদেরকে করেছে গর্বিত। আর ক’জন সন্তানই-বা রূপনের মত হতে পারে?
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ