স্বপ্নপূরণ

স্বপ্নপূরণ

তোমাদের গল্প রফিক বিন সিদ্দিক নভেম্বর ২০১০

‘আহ! পুইড়া গেলাম, আল্লাগো! আমারে বাঁচাও! মইরা গেলাম আর সহ্য করতে পারি না।’ এভাবেই চিৎকার করে চারদিক ভারী করে তুলল নাহিদ। ওর চিৎকারের আওয়াজ শুনে অনেকেই এগিয়ে আসল। কাছে এসে কেউ পোড়া জায়গায় ডিম ভেঙে দিচ্ছিল। কেউ পানি ছিটা দিচ্ছিল। আবার কেউ কেউ শুধু দাঁড়িয়েই ছিল। কেউ ডাক্তারের কাছে নেয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল না।

নাহিদ দশ বছরের এক কিশোর। অন্য সকলের মতোই তার বেড়ে ওঠা। খুবই চঞ্চল ও মেধাবী। স্বপ্নময়ী এক সুবোধ বালক। বুকে অনেক স্বপ্ন। একদিন বড় হবে। পড়ালেখা করে একজন ডাক্তার হবে। ছোট থেকেই সুন্দরভাবে মনোযোগ দিয়ে  পড়াশোনা করে ও। সকাল হলেই কায়দা, আমপারা নিয়ে মক্তবে যায়। বাড়িতে এসে দুমুঠো ভাত খেয়ে নয়টা বাজলে আবার স্কুলে চলে যায়। বিকেল হলে বাকিদের মতো বল নিয়ে খেলতে নেমে যায়। সন্ধ্যা নামার আগ পর্যন্ত খেলতে থাকে।

নাহিদের বাবা একজন ছোট-খাটো ব্যবসায়ী। একমাত্র ছেলেকে ডাক্তার বানাবে এটাই তার মনের আশা।

নাহিদ দিন দিন বড় হতে থাকে। আর ভালোভাবে লেখাপড়া চালাতে থাকে। কিন্তু এর মাঝেই ঘটে যায় আকস্মিক এক দুর্ঘটনা। তার পিতা দুরারোগ্য এক রোগে আক্রান্ত হয়। অনেক চিকিৎসার পরও আশানুরূপ কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম বাবা অসুস্থ হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে এ বয়সেই নাহিদকে পরিবারের হাল ধরতে হয়। যে বয়সে তাকে স্কুল ব্যাগ নিয়ে হাঁটার কথা, পরিস্থিতির শিকার হয়ে সে বয়সেই তার পরিবারের বোঝা মাথায় নিয়ে হাঁটতে হয়। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! নাহিদ বয়সে ছোট বলে কেউ তাকে কোনো কাজ দেয় না। কোনো উপায় না পেয়ে শেষে ওয়েটার হিসেবে একটা হোটেলে কাজ নেয়। দিন শেষে তাকে তিনশ টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে নাহিদের দিন কাটছিল। হঠাৎ একদিন কাস্টমারকে ডাল দিতে গিয়ে হাত ফসকে তা পড়ে যায় ওই লোকের গায়ের ওপর। এতে ওই লোকটা প্রচণ্ড ক্ষেপে চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। তার চিৎকারের আওয়াজ শুনে সাথে সাথে হোটেলের মালিক চলে আসে। পরিস্থিতি দেখে রাগে-ক্ষোভে নাহিদের গায়ে গরম ডাল ঢেলে দেয়। নাহিদ গরম ডাল সহ্য করতে না পেরে চিৎকার করতে থাকে আর মাটিতে গড়াতে থাকে। তার চিৎকার শুনে আশপাশের অনেক লোকজন জমা হয়ে যায়। বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে থাকে। লোকজনের ভিড় দেখে হাজী ইসমাইল খান সাহেবও চলে আসেন। এ পরিস্থিতি দেখে সাথে সাথেই হাসপাতালে নিয়ে যান ওকে। কিছুদিন থাকার পর নাহিদ সুস্থ হয়ে যায়। ইসমাইল সাহেব একজন ভালো মনের মানুষ। সবার উপকারে এগিয়ে আসেন। সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করেন। পেশায় তিনি একজন ডাক্তার। তাঁর চিকিৎসা ও ভালো কাজের অনেক খ্যাতি আছে। তাঁর কোনো সন্তান নেই। তিনি চাচ্ছেন তার পরবর্তী কাউকে তার সম্পদের উত্তরাধিকারী বানাতে। মানুষের কাছ থেকে নাহিদের মেধা, চতুরতা ও তার পরিবারের বর্তমান অবস্থা শুনে নাহিদকেই ডাক্তার বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। কয়েকদিন পর তাকে আবার স্কুলে ভর্তি করে দিলেন।

নাহিদ নিজ চেষ্টা আর পরিশ্রমের ফলে একসময় দেশের নামকরা একজন ডাক্তার হয়ে যায়। এদিকে হাজি ইসমাইল সাহেব বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ধীরে ধীরে নাহিদের সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। নাহিদ সাহেব ইসমাঈল সাহেবের ন্যায় মানুষের উপকারে এগিয়ে আসেন। তিনি দুস্থদের জন্য একটি মানবিক হাসপাতাল গড়ে তোলেন। যেখানে গরিবদের ফ্রিতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কয়েক বছর পর নাহিদ সাহেব অসহায়, সুবিধা-বঞ্চিত শিশুদের  জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।  যেখানে অসহায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে নিজেদের স্বপ্নপূরণ করে। দেশ ও মানুষের উপকারের জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করে দেয়।

নির্ধারিত সময়ে বাস এসে পড়লে সে অবসাদগ্রস্তের মতো বাসে ওঠে। বাস ছেড়ে দিলেও সে পিছন ফিরে দেখে না। জানে আব্বু এখনও তাকিয়ে আছে বাসের দিকে। আম্মুও এতক্ষণ আঁচলে চোখের কোণ মুছছে। সেও চোখের পানি মুছে নির্ধারিত সিটে বসতেই তাহমীদ জড়িয়ে ধরে, দোস্ত, ভুলে যা সব!...

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ