স্বপ্নের হাতছানি

স্বপ্নের হাতছানি

গল্প জানুয়ারি ২০১২

কে ইউ এম তাহিরা..

গ্রামের ছেলে আকাশ। সে গ্রামের হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। পড়ালেখায় মোটামুটি ভাল। কিন্তু দস্যিপনায় তার জুড়ি মেলা ভার। আকাশ তার মায়ের একমাত্র সন্তান। আকাশের বাবা বছর দেড়েক হলো রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন। মা আকাশকে খুব ভালবাসেন। তিনি সব সময় আকাশকে সৎ উপদেশ দেন। কিন্তু মায়ের কথা শোনার সময় আকাশের নেই। সে সারা দিন দুষ্টুমি করে বেড়ায়। মাতŸরের আমবাগানের আম চুরি, লিচুবাগানের লিচু চুরি, শাহিনদের মুরগির খোয়াড় থেকে মুরগির ডিম চুরি করে ফাটিয়ে দেয়া, মৌচাকে ঢিল ছোড়া এসব আকাশের নিত্যদিনের কাজ।
আকাশ সেদিন যাচ্ছিল নাজিফাদের বাড়ির কাছ দিয়ে। জামগাছে ঝুলে থাকা ডাসা ডাসা জাম দেখে সে লোভ সামলাতে পারে না। সোজা উঠে যায় মগডালে, তা দেখে ফেলেন নাজিফার মা।
তারপর সে কী চেঁচামেচি! একেবারে আকাশের মায়ের কাছে গিয়ে নালিশ করলেন আর কথা শুনিয়ে গেলেন। আকাশের মা কোনো কথা বলতে পারলেন না। শুধু মুখ বুজে কাঁদলেন আর মনে মনে বললেন, হে আল্লাহ আমার ছেলেক তুমি হেদায়াত দাও।
মায়ের কষ্ট দেখে আকাশের একটুও বোধোদয় হয় না।
আকাশ শুনেছে মাতব্বরের নাতি শহর থেকে গ্রামে এসে পড়ালেখা করবে। কিন্তু তাকে দেখা হয়নি। একদিন আকাশ গেল মাতবরের বাগানে লিচু চুরি করতে। লিচু গাছে উঠে খুব মজা করে গোটা কয়েক লিচু খেল আর পকেটে পুরল। গাছ থেকে নামতেই তার চক্ষু ছানাবড়া। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারই সমবয়সী একটি ছেলে আর মিষ্টি করে হাসছে। ছেলেটাকে এক নজর দেখেই আকাশের খুব ভাল লাগল। তবুও তার খুব ভয় হচ্ছে। যদি ছেলেটা তাকে ধরে নিয়ে মাতবরের হাতে তুলে দেয়? হঠাৎ ছেলেটির ডাকে সম্বিত ফিরে পায় আকাশ। ছেলেটি আকাশকে জিজ্ঞাসা করে< তোমার নাম কী?
আকাশ উত্তর দেয়, আ-কা-শ।
ছেলেটি বলে ওঠে, আমি স্বপ্ন। আচ্ছা তুমি চুরি করছ কেন? আকাশ কোনো জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
স্বপ্ন আবার বলে, তুমি জানো না চুরি করা মহাপাপ, চুরি করলে গুনাহগার হতে হয়? আকাশ আস্তে করে বলে উঠল, জানি তো, আমার মা-ও সব সময় এই কথাটিই বলেন, কিন্তু...
কিন্তু মানো না। বলে স্বপ্ন। আর তুমি এই যে বড়দের কথা অমান্য কর এটা আর একটা গুনাহর কাজ।
স্বপ্ন স্বপ্ন? হঠাৎ ডাক দেয় স্বপ্নের দাদুভাই। ডাক শুনে স্বপ্ন আকাশকে বলে, আবার তোমার সাথে দেখা হবে। এখন আসি।
স্বপ্ন সেখান থেকে চলে যায়। আর আকাশ চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাড়িতে চলে আসে।
পরদিন আকাশ স্কুলে আসে। কিন্তু একি! সেই চঞ্চল দুষ্টুরাজ আকাশ একদম নিশ্চুপ। কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। তার কানে শুধুই স্বপ্নের কথাগুলো বাজছে। প্রথম ক্লাসে স্যার একটি নতুন ছেলেকে নিয়ে ক্লাসে ঢুকলেন। সবাই ছেলেটির দিকে তাকিয়ে নানা রকম মন্তব্য করছে। কিন্তু আকাশ কিছুই বলছে না। কারণ ছেলেটি যে স্বপ্ন।
টিফিন পিরিয়ডে সবাই খেলাধুলা করছে। কিন্তু আকাশ ক্লাসে বেঞ্চের ওপর চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎ কে জানি আকাশকে সালাম দেয়। আকাশ উঠে দাঁড়ায়। দেখে স্বপ্ন দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ স্বপ্নের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। স্বপ্ন বলেÑ সালামের উত্তর দেবে না? আকাশ আস্তে করে সালামের উত্তর দেয়। তারপর স্বপ্ন আকাশকে বলে, তুমি আমার বন্ধু হবে?
আকাশ অবাক হয়। তাকে তো কেউ কোনো দিন বন্ধু হওয়ার কথা বলেনি। আকাশ কোনো কথা বলে না। স্বপ্ন আকাশকে বলে, আমাদেরকে ভালো মানুষ হতে হবে। আর ভাল মানুষ হওয়ার জন্য ইসলামী অনুশাসন মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। আকাশ এতক্ষণ ধরে স্বপ্নের কথাগুলো শুনছিল। তার মন বিগলিত হয়। দুই চোখ বেয়ে অশ্রু নেমে আসে। স্বপ্ন ততক্ষণে ক্লাসের বাইরে চলে গেছে।
স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজলো। সবাই বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছে। আকাশও চুপচাপ বাড়ির দিকে রওনা হয়। হঠাৎ স্বপ্ন তাকে বলে, তুমি একা একা বাড়িতে যাচ্ছো? এসো আমরা দু’জন এক সাথে বাড়িতে যাই। আজ থেকে তো আমরা দু’জন বন্ধু।
স্বপ্ন তার হাত বাড়িয়ে দেয় আকাশের দিকে। নতুন স্বপ্নের হাতছানিতে আকাশের চোখ ঝিলমিল করে ওঠে।
                        
আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ