সৌরজগতের পরিবার

সৌরজগতের পরিবার

তোমাদের গল্প মার্চ ২০১৫

রাফসান জনি রাফাদ#

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ৫০০ কোটি বছর আগে এই সুবিশাল সৌরজগৎ সৃষ্টি হয়। ইংরেজিতে যাকে বলে (solar system) এই সৌরজগতে শুধুই যে গ্রহ আছে ঠিক তা নয়। সৌরজগতের এই পরিবারে যেমন গ্রহ আছে তেমন সাথে আছে উপগ্রহ। গ্রহাণুপুঞ্জ অসংখ্য ধূমকেতু ও অগণিত উল্কা, সম্পূর্ণ সৌরজগতের প্রায় ৯৯.৮% ভর নিয়েই সূর্য গঠিত। সৌরজগতে পরিবারের প্রধান সদস্য সূর্য, যা নিজের গ্যালাক্সির চতুর্দিকে প্রায় ২০ কোটি বছরে একবার পরিভ্রমণ করে। এর মৌলিকত্ব হলো বায়বীয় পদার্থ। এর ব্যাস ১,৩৯২,০০০ কিলোমিটার। এর ভর ১.৯৯দ্ধ১০৩০ কেজি। এটি হাইড্রোজেন (H2) এবং হিলিয়াম (Hi) দ্বারা গঠিত। সূর্যের বাইরের তাপমাত্রা ৫৭৭০ কেলভিন আর কেন্দ্রে তাপমাত্রা ১৫,০০০,০০০ কেলভিন। সৌরজগতের পরিবারের সবচেয়ে ছোট ও সূর্যের কাছের সদস্য হলো বুধ (mercury)। সূর্য থেকে বুধের দূরত্ব ৫.৮ কোটি কিলোমিটার। সূর্যের চারদিকে বুধের পরিভ্রমণ করতে লাগে প্রায় ৮৮ দিন। (পৃথিবীর দিনের সাপেক্ষ) বুধের গড় পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ৪৫২ কেলভিন। বুধের কোন উপগ্রহ নেই। বুধের ব্যাস ৪৮৭৮ কিলোমিটার। বুধের ভর ৩.৩দ্ধ১০২৩ কেজি। বুধের গড় ঘনত্ব ৫৪২০ কেজি/ মিটার৩। বুধের মুক্তিবেগ ৪৩০০ মিটার/সেকেন্ড। বুধের বায়ুমন্ডলীয় উপাদানগুলো হলো হাইড্রোজেন (H2) ও হিলিয়াম (Hi) বুধের পৃষ্ঠাঞ্চলে সর্বোচ্চ অবয়ব কেলিরিস বেসিন, যার ব্যাস ১৩৫০ কিলোমিটার। বুধের ভূত্বক সমতল। ভূমিসহ অসংখ্য গর্ত ও পাহাড় লক্ষ্য করা গিয়েছে। আমরা যেখানে থাকি মানে পৃথিবী। আর এই পৃথিবীর নিকটবর্তী সদস্য হলো শুক্র। যার অবস্থান হলো সূর্যের থেকে ১০.৮ কোটি কিলোমিটার। শুক্রকে আমরা ভোরে ও সন্ধ্যায় দেখতে পাই শুকতারা হিসেবে। পৃথিবী থেকে শুক্রের দূরত্ব ৪.৩ কোটি কিলোমিটার সূর্যকে একবার শুক্রের পরিভ্রমণ করতে লাগে প্রায় ২২৫ দিন। শুক্রের গড় পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ৭২৬ কেলভিন। শুক্রের কোন উপগ্রহ নেই। শুক্রের ব্যাস ১২১০৪ কিলোমিটার। শুক্রের ভর ৪.৮৭দ্ধ১০২৪ কেজি শুক্রের গড় ঘনত্ব ৫২৫০ কেজি মিটার৩। শুক্রের মুক্তিবেগ ১০৪০০ মিটার/সেকেন্ড। পৃষ্ঠাঞ্চলে সর্বোচ্চ বিন্দু ম্যাক্সওয়েল মন্টেজ। পৃষ্ঠায় উপাদান ব্যাসান্টিক পাথর ও পরিবর্তনশীল পদার্থ। বায়ুমন্ডলীয় উপাদান হলো ৯৬% কার্বনডাইঅক্সাইড (co2) এ ৩% নাইট্রোজেন (N2) এবং ০.১% পানি বাষ্প। সৌরজগতের সদস্যদের মধ্যে আমাদের প্রিয় সদস্য হলো পৃথিবী। সেখানে মানুষ বাস করে। কারণ পৃথিবীতে আছে ওজোন স্তর। যার গভীরতা ১২-১৬ কিলোমিটার। সূর্যরশ্মির অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করায় ওজন স্তরের তাপমাত্রা প্রায় ৭৬০ celcious, (c)। এই স্তরটির জন্য পৃথিবীতে মানুষ বাস করে পৃথিবীর আয়তন ৫১০১০০,৪২০০ বর্গকিলোমিটার। সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। পৃথিবী সূর্যকে পরিভ্রমণ করতে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড সময় লাগে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ২৮১ কেলভিন। পৃথিবীর উপগ্রহ হলো ১টি চাঁদ। চাঁদ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ৩,৮১,৫০০ কিলোমিটার। পৃথিবীর ব্যাস ১২৭৫৬ কিলোমিটার পৃথিবীর ভর ৫.৬৯দ্ধ১০২৬। পৃথিবীর গড় ঘনত্ব ৫৫২০ কেজি/ মিটার৩। পৃথিবীর মুক্ত বেগ ১১২০০ মিটার/সেকেন্ড। পৃষ্ঠাঞ্চলে সর্বোচ্চ বিন্দু মাউন্ট এভারেস্ট। বায়ুমন্ডলীয় উপাদান ৭৮% নাইট্রোজেন (N2) ২১% অক্সিজেন (০২), ১% অর্গন (Ar) দূরত্বের দিক দিয়ে পৃথিবীর পরে সদস্য হলো মঙ্গল (সধৎং)। সূর্য থেকে গড় দূরত্ব ২২.৮ কোটি কিলোমিটার। পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্ব ৭.৮ কোটি কিলোমিটার। মঙ্গলের পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ৩১০ কেলভিন। মঙ্গলে দু’টি উপগ্রহ আছে। মঙ্গলের ব্যাস ৬৭৮৭ কিলোমিটার। মঙ্গলের ভর ৬.৪২দ্ধ১০২৩ কেজি। মঙ্গলের ঘনত্ব ৩৯৪০ কেজি/ মিটার৩। মঙ্গলে মুক্তিবেগ ৫০০০ মিটার/ সেকেন্ড পৃষ্ঠাঞ্চলে সর্বোচ্চ বিন্দু অলিম্পাস মনস। বায়ুমন্ডলীয় উপাদান ৯৫% কার্বনডাইঅক্সাইড (co2) ৩% নাইট্রোজেন (N2), ১.৬% আর্গন (Ar) মঙ্গলের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে এর উপরিভাগে গিরিখাত ও আগ্নেয়গিরি আছে। মঙ্গল সূর্যকে পরিভ্রমণ করতে ৬৭৮ দিন লাগে। মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝামাঝি রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রহাণুর মতো। ৮০৫-১.৬ কিলোমিটারেরও কম ব্যাসসম্পন্ন এই জোতিষ্কগুলোকে গ্রহাণু বলে। একত্রিভাবে এদের গ্রহাণুপুঞ্জ বলে। সৌরজগতে সবচেয়ে বড় গ্রহ বা গ্রহদের মধ্যে যার অবস্থান সবচেয়ে বড় সেটি হলো বৃহস্পতি। (Jupiter) বৃহস্পতির আয়তন পৃথিবীর প্রায় ১,৩০০ গুণ। সূর্য থেকে বৃহস্পতির দূরত্ব ৭৭.৮ কোটি কিলোমিটার। বৃহস্পতি ১২ বছরে সূর্যকে পরিভ্রমণ করে। পৃথিবীর সময় সাপেক্ষে বৃহস্পতিতে একদিন দুইবার সূর্য ওঠে ও অস্ত যায়। বৃহস্পতিতে গড় পৃষ্ঠে তা মাত্রা ১২০ কেলভিন। বৃহস্পতির ১৬টি উপগ্রহ। বৃহস্পতির ব্যাস ১৪২,৮০০ কিলোমিটার। বৃহস্পতির ভর ১.৯০দ্ধ১০২৭ কেজি। বৃহস্পতির গড় ঘনত্ব ১৩১৪ কেজি/মিটার৩। বৃহস্পতির মুক্তি বেগ ৫৯৫০০ মিটার/সেকেন্ড। বৃহস্পতির বলয় হালকা। বৃহস্পতির বায়ূমন্ডলে উপাদান হলো ৯০% হাইড্রোজেন (H2), ১০% হিলিয়াম (Hi), ০.০৭% মিথেন (CH4) সৌরজগতে গ্রহদের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তর সদস্য হলো শনি (Saturn) সূর্য থেকে শনির দূরত্ব ১৪৩ কোটি কিলোমিটার। শনি ২৯ বছর ৫ মাসে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। এটি পৃথিবীর তুলনায় ৯ গুণ বড় বলে একে খালি চোখে দেখা যায়। শনির উপগ্রহের সংখ্যা ২২টি। শনির গড় পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ৮৮ কেলভিন। শনির ব্যাস ১২০৬৬০ কিলোমিটার। শনির ভর ৫.৬৯দ্ধ১০২৬ কেজি। শনির গড় ঘনত্ব ৬৯০ কেজি/ মিটার৩। শনির মুক্তিবেগ ৩৫৬০০ মিটার/সেকেন্ড। শনির বলয়ের ব্যাস ২৭০,০০০ কিলোমিটার। শনির বায়ুমন্ডলীয় উপাদান ৯০% হাইড্রোজেন (H2), ৩% হিলিয়াম (Hi) এবং ০.০৫% মিথেন (CH4) সৌরজগৎ পরিবারে তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ হলো ইউরেনাস (Uranus) সূর্য থেকে ইউরেনাসের দূরত্ব ২৮৭ কোটি কিলোমিটার। সূর্যকে একবার অতিক্রম করতে ৮৪ বছর সময় লাগে। ইউরেনাসে উপগ্রহ ২৭টি (সর্বশেষ তথ্য) ইউরেনাসের ব্যাস ৫১১১৮ কিলোমিটার। ইউরেনাসের ভর ৮.৬৮দ্ধ১০২৫ কেজি ইউরেনাসে গড় ঘনত্ব ১২৯০ কেজি/ মিটার৩। ইউরেনাসের মুক্তিবেগ ২১৩০০ মিটার/সেকেন্ড। ইউরেনাসের বলয় সরু, হালকা বলয়। ইউরেনাসের উপাদান ৮৩% হাইড্রোজেন (H2) ১৫% হিলিয়াম (Hi) ২% মিথেন (CH4) কিছুটা শীতল বা ঠান্ডা মেজাজের সদস্য হলো নেপচুন কারণ এটি সূর্যের থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। সূর্য থেকে নেপচুনের দূরত্ব ৪৫০ কোটি কিলোমিটার। নেপচুন সূর্যকে পরিভ্রমণ করতে লাগে ১৬৫ বছর। নেপচুনের সর্বোচ্চ পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ৪৮ কেলভিন। নেপচুনের উপগ্রহ ১৪টি। (সর্বশেষ তথ্যানুসারে) নেপচুনের ব্যাস ৪৩৫২৮ কিলোমিটার। নেপচুনের ভর ১.০২দ্ধ১০২৬ কেজি। নেপচুনের গড় ঘনত্ব ১৬৪ কেজি/মিটার৩। নেপচুনের মুক্তিবেগ ২৩৩০০ মিটার/ সেকেন্ড। নেপচুনের বলয় সরু। নেপচুনের বায়ুমন্ডলীয় উপাদান ৭৪% হাইড্রোজেন (H2) ২৫% হিলিয়াম (Hi), ১% মিথেন (CH4) সৌরজগতের আবিষ্কৃত সর্বশেষ গ্রহ হলো প্লুটো (Pluto) সূর্য থেকে এর দূরত্ব অনেক। সূর্যকে একবার পরিভ্রমণ করতে প্লুটোর প্রায় ২৪৮ বছর লাগে। প্লুটোর গড় তাপমাত্রা ৩৭ কেলভিন। প্লুটোর উপগ্রহ সংখ্যা ১টি। প্লুটোর ব্যাস ২৩০০ কিলোমিটার। প্লুটোর ভর ১.২৯দ্ধ১০২২ কেজি। প্লুটোর মুক্তিবেগ ১১০০ মিটার/ সেকেন্ড। পৃষ্ঠীয় উপাদান সম্ভবত মিথেন (CH4) বরফ। বায়ুমন্ডলীয় উপাদান বিজ্ঞানীদের মতে মিথেন (CH4) ও নাইট্রোজেন (N2)। এ ছাড়াও সৌরজগতে রয়েছে গ্যালাক্সি, ছায়াপথ নীহারিকা, ধূমকেতসহ অসংখ্য উল্কা। সূর্যের মতো অনেক নক্ষত্র মিলে যে বিশাল এক একটি সমাবেশ হয় তাই গ্যালাক্সি। সৌরজগৎ যে গ্যালাক্সির সদস্য তাই হলো ছায়াপথ। মাঝে মাঝে সৌরজগৎ থেকে তারা খসে পড়ে একে উল্কা বলা হয়। সৌরজগৎ হলো বিস্তৃত একটা বিষয়। যার অনেক কিছু আজও আবিষ্কৃত হয়নি। এগুলো অনুধাবন করে আমাদের বুঝতে হবে সৃষ্টিকর্তার শক্তি আর সেই (সৃষ্টিকর্তার) কথা যথাযথ পালন করতে হবে। আর সৌরজগৎ সম্পর্কে আরও বেশি করে জানার চেষ্টা করতে হবে। সৌরজগৎ বিষয়ে পড়াশোনা বেশি করলে এ সম্পর্কে জানা ও বোঝা যাবে।

আপনার মন্তাব্য লিখুন
অনলাইনে কিশোরকন্ঠ অর্ডার করুন
লেখকের আরও লেখা

সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

আরও পড়ুন...

CART 0

আপনার প্রোডাক্ট সমূহ